সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ওখানে বসবাসকারী অনেক রোহিঙ্গারা পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে, অনেকেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেলে সন্ত্রাসীদের দেয়া আগুনে পুড়ে যায় শুন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ঝুঁপড়ি ঘর,এর আগে মিয়ানমারের সশস্ত্র গ্রæপ রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যদের নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র সংর্ঘসে ১জন নিহত ও ১জন আহত হওয়ায় পর পুরো এলাকায় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
ঘটনার পর থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্য বিভিন্ন পয়েন্টে সর্তক অবস্থান নিয়েছে। শুন্য রেখায় গুলাগুলির পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তের ঘুমধুম, তুমব্রু বাইশারীফাড়ি, কোনারপাড়া, মধ্যমপাড়া এলাকায় বর্ডার গার্ড তাদের টহল জোরদার করেছে।
রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, গোলাগুলি ও রোহিঙ্গা শিবিরে অগ্নিসংযোগের পর রোহিঙ্গাদের বেশ কয়েকজন মিয়ানমারের ভেতর পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে,হঠাৎ করে উত্তেজনায় সবাই আতংকিত।
ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান মো.জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শূন্যরেখার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে গোলাগুলি ও আগুন লাগায় নারী, শিশুসহ অনেক রোহিঙ্গা নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নিয়েছে, পরে তাদের সেখান থেকে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন,এলাকায় বিজিবি,র্যাব ও পুলিশের কড়া নজরদারি রয়েছে।
সুত্রে জানা যায়, ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পে ৫৩০টি ঘর ছিল, সেখানে ৪ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করতো তবে হঠাৎ করে ক্যাম্পে গোলাগুলি আর আগুনে অনেক রোহিঙ্গা সেখানে থেকে পালিয়ে আশেপাশে সরে গেছে। ঘটনার পর থেকেই চরম আতংকে দিন কাটচে সবার।
এদিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, সীমান্তের পরিবেশ হঠাৎ করে অশান্ত হয়ে ওঠেছে এতে আতংক বিরাজ করছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গার ঝুঁপড়ি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে,তবে সংখ্যা কয়টি হবে তা এখনো জানা যায়নি। তিনি আরো বলেন, সীমান্তের সার্বিক বিষয় বিজিবি নিয়ন্ত্রণ করে তাই বিজিবি এই বিষয়ে সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে পারবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন , ঘটনার পর আমরা বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ে অবহিত করেছি, পরবর্তী নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী কাজ করা হবে বলে জানান ইউএনও।
প্রসঙ্গত : বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে ঘুমধুম ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্নতাবাদী দুটি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয় এসময় রোহিঙ্গা নাগরিক হামিদুল্লাহ (২৭) ও মহিবুল্লাহ (২৫) নামে গুলিবিদ্ধ দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে কক্সবাজারের উখিয়ার এমএসএফ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক হামিদুল্লাহকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে মহিবুল্লাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে ঘটনার পরপরই রোহিঙ্গা শিবিরি আগুন লাগিয়ে দেয় দুস্কৃতিকারীরা আর প্রাণ ভয়ে অনেক রোহিঙ্গা নাগরিক ক্যাম্প ছেড়ে আশেপাশে পালিয়ে যায়।