সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। পার্বত্য জেলা বান্দরবানে জেঁকে বসেছে শীত। শীতের শুরুর সাথে সাথে জেলা শহরের বিভিন্ন অলি-গলি আর দোকানে বিক্রি বেড়েছে শীতের নানা রকমের পিঠা। ভাপা পিঠা, চিতল পিঠা, পাটিসাপটা পিঠার পাশাপাশি পর্যটক ও স্থানীয়দের মন কেড়েছে পাহাড়ে জুমের উৎপাদিত বিষমুক্ত বিন্নি চাউলে তৈরি নানা স্বাদের মুখরোচক পিঠায়।
শীতের আগমনী বার্তার সংঙ্গে সংঙ্গে পাড়া মহল্লা আর সড়কের মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই বাড়তে থাকে শীতের প্রকোপ আর সন্ধ্যা নামার সংঙ্গে সংঙ্গে আবহাওয়া জানান দেয় শীত শুরু হয়েছে।
জেলা সদরে ট্রাফিক মোড়,মধ্যম পাড়া,উজানী পাড়া,কালাঘাটা,বালাঘাটাসহ বিভিন্নস্থানে ছোট দোকান বসিয়ে গরম গরম ভাপা পিঠা,চিতল পিঠাসহ নানা ধরণের পিঠা তৈরি করছে পিঠা বিক্রেতারা। এদিকে শীতের এমন আমেজে গরম গরম পিঠা খেতে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই সকল দোকানগুলোতে বাড়ছে স্থানীয়দের পাশাপাশি পিঠাপ্রেমী পর্যটকদের। পাহাড়ে জুমের উৎপাদিত বিষমুক্ত বিন্নি চাউলে তৈরি নানা স্বাদের মুখরোচক পিঠা খেয়ে খুশি ক্রেতারা।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান সদরে বেড়াতে আসা পর্যটক আমিনুল হক জানান, দেশের বিভিন্নস্থানে ভ্রমন করেছি এবং বিভিন্ন পিঠার স্বাদ নিয়েছি তবে বান্দরবানের পিঠাগুলোর স্বাদ অতুলনীয়। তিনি আরো বলেন,পাহাড়ে বিন্নি চাল থেকে তৈরি নানা ধরণের পিঠা খেতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
কক্সবাজার থেকে বান্দরবান বেড়াতে আসা শর্মী বড়–য়া জানান, শীত আসলে আমরা মুলত প্রতিবছর ভ্রমনে যাই আর সেই উপলক্ষ্যে বান্দরবান ভ্রমন করছি, আর ভ্রমনের সাথে যোগ হয়েছে পাহাড়ীদের হাতে তৈরি নানা ধরণের পিঠা খাওয়ায় প্রতিযোগিতা। ভাপা পিঠা, চিতল পিঠা, পাটিসাপটা পিঠার পাশাপাশি বিভিন্ন পিঠা খেয়ে খুব ভালো লাগছে।
এদিকে বিক্রেতারা জানান, শীতের মৌসুম এলেই বান্দরবানে বাড়ে পিঠা বিক্রির ধুম। পিঠার সাথে বাহারি স্বাদের সরিষা, শুঁটকি, ধনিয়া ভর্তাসহ নানা ধরণের ভর্তা দিয়ে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেয়া হয় বাহারী পিঠা, আর শীত মৌসুমে নানা ধরণের পিঠার মৌ মৌ সুবাসে বিকেল হলেই বাড়তে থাকে নানা ধরণের ক্রেতার।
বান্দরবান সদরের মধ্যম পাড়ায় সড়কের ধারে বসা পিঠা বিক্রেতা সুজি বড়ুয়া জানান,প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সড়কের পাশে বসে বিন্নি চাইলের তৈরি ভাপা পিঠা তৈরি করি , দৈনিক ১হাজার টাকা বিক্রি হয় আর খরচ বাদ দিলে লাভ ২০০-৩০০টাকা হয়। তিনি আরো জানান,স্বামী না থাকায় নিজে কষ্ট করে এই পেশায় জড়িত হয়েছি এবং শীত আসলেই মৌসুমী এই ব্যবসা করে ভালো লাভ করি।
বান্দরবানের প্রধান সড়ক সোনালী ব্যাংকের সামনে টং ঘরের তৈরি দোকান নিয়ে বসা পিঠা বিক্রেতা নুরুউদ্দিন জানান, শীত আসার সাথে সাথে পিঠা বিক্রি বেড়েছে। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে পিঠা খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। পিঠার সাথে বাহারি স্বাদের সরিষা, শুঁটকি, ধনিয়া ভর্তাসহ নানা ধরণের ভর্তা পেয়ে পর্যটকরা আরাম করে পিঠার স্বাদ অনুভব করে।
এদিকে পাহাড়ে জুমে উৎপাদিত বিষমুক্ত ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন বিন্নি চাউলের তৈরি নানা স্বাদের মুখরোচক পিঠা দিন দিন সকলের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারাও।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বান্দরবান জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক কৃষিবিদ এম,এম,শাহ্ নেয়াজ জানান, শীতের এই সময়টা জুড়ে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মহাসমারোহে চলে এই পিঠা তৈরির ধুম আর এমন আয়োজনে খুশি স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা। তিনি আরো বলেন,পাহাড়ের বিভিন্নস্থানে উৎপাদিত বিন্নি চাউলের পিঠা সকলের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। বিষমুক্ত এই চাল থেকে তৈরি পিঠা আর পায়েস যে কারের কাছে অপূর্ব লাগে, স্বল্পমুল্যে সড়কের পাশে কিনতে পাওয়া ভাপা পিঠা, চিতল পিঠার এই শীতে প্রচুর চাহিদা বাড়ছে।