বৃহস্পতিবার | ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
বান্দরবানের

জেলা প্রশাসকের অক্লান্ত চেষ্টায় তৈরি হল কলাগাছের সুতা থেকে দৃষ্টিনন্দন শাড়ী

প্রকাশঃ ০১ এপ্রিল, ২০২৩ ০৫:১৩:০৮ | আপডেটঃ ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০৪:৪৯:২৯  |  ৫৮৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানে যোগদান করার পরপরই বান্দরবানবাসীর উন্নয়নসহ বিভিন্ন জনকল্যাণকর কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। গরীব ও অসহায়দের নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা, মেধাবীদের বিনামুল্যে বই বিতরণ, প্রতিবন্ধীকে ব্যবসার জন্য দোকান তৈরি করে দেয়াসহ নানাভাবে বান্দরবানবাসীর কাছে প্রশংসার দাবিদার জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি ।

সম্প্রতি বান্দরবানের নারীদের অর্থনৌতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে পার্বত্য এলাকার কলাগাছ থেকে সুতা তৈরি করে বিভিন্ন সৌখিন হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ শুরু করেন তিনি। শুরুতে নারীদের আগ্রহ ও সফলতা দেখেই তিনি কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ী তৈরির কাজ শুরু করেন। আর কাজ শুরুর একমাসের মধ্যে বান্দরবানে বাংলাদেশেই প্রথম কলাগাছের সুতা দিয়ে তৈরি হল নারীদের পরিধেয় আর্কষনীয় ও দৃষ্টিনন্দন শাড়ী।

নানা প্রতিকুলতার পথ পাড়ি দিয়ে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জপুর্ন এই কাজটি সম্পন্ন হয়েছে,আর এই শাড়িটি বুনতে বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের আহবানে সাড়া দিয়ে সুদূর সিলেট জেলার মৌলভীবাজার থেকে বান্দরবানে ছুটে এসেছেন প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবী।

প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবী জানান, বাংলাদেশে বিভিন্ন সুতা দিয়ে শাড়ী তৈরি হয় তবে দেশে প্রথমবার বান্দরবান জেলায় আমি বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের অনুরোধে ও সার্বিক সহযোগিতায় কলাগাছের সুতা থেকে একটি শাড়ী তৈরি করলাম। প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবী আরো জানান, প্রথম পর্যায়ে একাধারে ১৫ দিন সময় দিয়ে এবং  ১ কেজি কলাগাছের আশের সুতা দিয়ে এই আকর্ষণীয় শাড়ী তৈরি হয়েছে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীতে আরো কম সময়ে ও কম খরচে আরো মসৃণ ও উন্নতমানের শাড়ী তৈরি করা সম্ভব হবে।

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বান্দরবানের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, আমাদের জেলা প্রশাসকের অনুপ্রেরণায় আমরা বান্দরবানবাসী গর্বিত। একজন নারীবান্ধব জেলা প্রশাসকের কারণে দুর্গম বান্দরবানের বিভিন্ন পাড়ার নারীরা আজ সরকারী বিভিন্ন সহায়তা পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসক এর অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আজ কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ী হলো আর আগামীতে আরো নিত্যনতুন সামগ্রী উৎপাদন হবে যাতে নারীদের অর্থনৌতিক উন্নয়নের গতি আরো তরান্বিত হবে।

বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রভাষক ও এই শাড়ী তৈরির সার্বিক সহযোগী  সাই সাই উ নিনি জানান, বান্দরবানের নারীদের অর্থনৌতিক উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি প্রায় সময়ই ভাবেন। আর জেলা প্রশাসকের এই দুরদর্শী চিন্তার ফসল আজকের এই ১৩হাত তৈরি নতুন এক দৃষ্টিনন্দন শাড়ী। এই শাড়ীর তৈরির ফলে বাংলাদেশে বান্দরবানের নাম আরেকবার প্রচার হবে এবং এখানকার কলাগাছের আশ থেকে যে সুতা হয় সেই সুতা দিয়ে পরিবেশবান্ধব শাড়ীটি সকলের কাছে দ্রুত সময়ে পৌঁছে যাবে বলে আমাদের আশাবাদ।

জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, বান্দরবানে নারীদের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে কলাগাছ থেকে আশ তৈরি ও পরর্বতীতে সেই আশ থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্প ও সৌখিন বিভিন্ন দ্রব্যদি তৈরির জন্য বান্দরবান জেলা প্রশাসন একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পের আওতায় এই পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে স্থানীয় প্রায় ৪শ নারীদের কয়েক দফায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এবং তাদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করে তাদের ভাতা প্রদান করা হয় যাতে তারা আগ্রহী হয় এবং অর্থনৌতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি আরো বলেন, নারীদের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতেই প্রথমতেই জেলা সদরে এই কার্যক্রম শুরু হলেও পরর্বতীতে লামা, রুমা ,আলীকদম ও থানচি উপজেলাতে এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আরো জানান,আমাদের নারীরা এই প্রশিক্ষনের মাধ্যমে বুক ফোল্ডার, টেবিল মেট,পাপোশ,শো পিচ,কানের দুল,কলম দানিসহ বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব হস্তশিল্প তৈরি করছে আর এগুলো ভালো দামে বিক্রিও হচ্ছে। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, এত কিছুর পর আমার চিন্তার মাধ্যমে নানা প্রতিকুলতার পথ পাড়ি দিয়ে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা কলাগাছের সুতা থেকে একটি দৃষ্টিনন্দন শাড়ী তৈরি করতে পেরেছি যা অত্যন্ত সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়েছে ,যেই শাড়ীর নাম দেয়া হয়েছে “ রাধাবতী ”।


বান্দরবান |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions