শনিবার | ০২ নভেম্বর, ২০২৪
বান্দরবানের

খুমী সম্প্রদায় থেকে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেল তংসই খুমী

প্রকাশঃ ০১ নভেম্বর, ২০২৪ ০৯:১৮:১৭ | আপডেটঃ ০২ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:২২:১৩  |  ৭২
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। যোগাযোগ ব্যবস্থা আর আর্থ সামজিক অবস্থান দুটোতেই সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির খুমী সম্প্রদায়। যাদের ছেলে মেয়েদের বেশি দুর পড়ালেখার স্বপ্ন দেখাই যেখানে কঠিন, সেখানে নানা বাধাঁ পেরিয়ে প্রথমবারের মত সারাদেশ থেকে নারী শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে তংসই খুমি। তংসই খুমীর এই সাফ্যলে খুশি তার পরিবার আর সহপাঠীরা, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দেয়া হচ্ছে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস।

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী খুমী সম্প্রদায় থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারই প্রথম একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হলেন তংসই খুমি। পাহাড়ের খুমী সম্প্রদায়ের এই শিক্ষার্থী সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ায় সুযোগ পায়।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলায় তারাছা ইউনিয়নের দুর্গম মংঞো পাড়ায় তার বাড়ী, বান্দরবান সদর থেকে সাঙ্গু নদীর নৌপথেই সেখানে যাওয়ার একমাত্র পথ।

এদিকে কঠোর অধ্যাবসার আর পরিবারের সহযোগিতায় খুমী সম্প্রদায়ের প্রথম নারী শিক্ষার্থী হিসেবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারায় উচ্ছস্বিত এই শিক্ষার্থী।

তংসই খুমী বলেন, বাবা মারা যাওয়ায় পরে আমার মা ঘরে কোমর তাঁত বুনে সেটা বিক্রি করা আয়ের টাকায় আমাদের ভাইবোনদের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করে।অনেক কষ্ট করে তিনি আমাদের সকল ভাই বোনদের উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছেন।

তংসই খুমী চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাকি দুই ভাইও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার বড় ভাই সুইতং খুমী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ে মাস্টার্স পর্বে এবং আরেক ভাই তংলু খুমী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত। সবার ছোট বোন রেং সই খুমী ঢাকার সেন্ট যোসেফ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে অধ্যায়নরত।

তার বাবা নয়লো খুমীও সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রথম সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। তারাছা ইউনিয়নে তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের নানা অভাব অনটন অতিক্রম করে তংসই খুমী বান্দরবান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে মানবিক বিভাগ থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন শেষে ভর্তি হয় ঢাকা হলিক্রস কলেজে। সেখান সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে নৃবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়ায় সুযোগ পায় তংসই খুমী।

তংসই খুমীর বাবা মারা যাওয়ার পর তার চার ভাই-বোনকে অনেক কষ্টে লেখাপড়ার খরচ চালান তার মা লিংসাই খুমী। এদিকে তংসই খুমীর এমন সাফল্যে খুশি তার পরিবার ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

তংসই খুমীর মা লিংসাই খুমী বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোন গতি নাই,তাই নিজ সন্তানদের অনেক কষ্ট করে উন্নত শিক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি , আমার এই প্রচেষ্ঠায় সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

তংসই খুমীর ভাই সুই তং খুমী বলেন, আমার ছোট বোন তংসই খুমী অত্যন্ত মেধাবী। ছোটকাল থেকে সে মেধাবী আর আগামীতেও বান্দরবান তথা বাংলাদেশে খুমী সম্প্রদায়ের মান আরো এগিয়ে নেবে।

শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই সাফল্যে খুশি খুমি নেতৃবৃন্দরা। পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষা গ্রহণে সরকারের পক্ষ থেকে আরো সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

খুমী সম্প্রদায়ের লেখক ও গবেষক লেলুং খুমী বলেন, খুমী সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ জনগন দুর্গম এলাকার বসবাস করে, আর তারা অত্যন্ত গরীব। খুমী সম্প্রদায় থেকে এমন সাফল্যে আমরা গর্বিত , আমরা তংসই খুমী ও তার পরিবারে সকলের উন্নতি কামনা করছি।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, খুমী সম্প্রদায়সহ পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির অনেক শিক্ষার্থী এখন ভালো ফলাফল করছে আর বিভিন্নভাবে সফলতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর খুমী নারী শিক্ষার্থীর এমন সাফল্যে তাকে শুভকামনা জানানোর পাশাপাশি পার্বত্য এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষার উন্নয়নে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক।

তথ্যমতে ,পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস আর পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে কম ভাষিক ও বিপন্ন জনগোষ্ঠী হলেন খুমী সম্প্রদায়। সরকারি হিসাবে ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহ গণনা অনুযায়ী তাদের জনসংখ্যা ৩হাজার ৯৯৪ জন। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি এই তিন উপজেলায় খুমীদের বসবাস।

বান্দরবান |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions