বান্দরবানে চুরির মামলার আসামী গ্রেফতার , স্বর্ণালংকারসহ মালামাল উদ্ধার এফপিএবি’র উদ্যোগে নির্যাতিত গর্ভকালীন মহিলাদের আর্থিক অনুদান প্রদান সমাজের উন্নয়নে যুব সমাজকে আরো এগিয়ে আসতে হবে : মো.সাইফুল ইসলাম রাঙামাটিতে পাহাড়ের জুমে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের প্রদর্শনী রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। বৈসাবি উৎসব ঘিরে মুখর পাহাড়। রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলার পাহাড়ি জনপদে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। পালিত হচ্ছে নানা বর্ণাঢ্য কর্মসূচি। উৎসব ঘিরে রাঙামাটিতে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী বিজু সাংগ্রাই বৈসুক বিষু মেলা-২০১৮। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট যৌথ উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার শুরু মেলা শেষ হবে আজ (শনিবার)।
প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তিতে বাংলাবর্ষ বিদায় এবং বরণ উপলক্ষে উৎসবটির আয়োজন করে পাহাড়ি জনগণ। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস করা চৌদ্দ পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব এটি। তিন দিনব্যাপী উৎসব পালিত হয় ২৯-৩০ চৈত্র ও পহেলা বৈশাখ। উৎসবটি ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাইং, চাকমারা বিজু নামে পালন করে। এ তিন ভাষার আদ্যাক্ষর নিয়ে এর সংক্ষিপ্ত পিরিচিতি নাম বৈসাবি’। এছাড়া তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, রাখাইনরা সাংক্রান ও অহমিয়ারা বিহু নামে তিন দিনের উৎসব পালন করে। উৎসবে পরিবেশিত হয় নৃত্য-সঙ্গীতসহ বিনোদনমূলক ও উৎসবপূর্ণ নানা অনুষ্ঠান। পালিত হয় নানা আচার-অনুষ্ঠান।
পাহাড়ি মানুষের বিশ্বাস মতে, পুরনো বছরের ব্যর্থতা, দুঃখ, গ্লানি ধুয়ে-মুছে ফেলে পানিতে ভাসিয়ে দেয়ার মানসে ফুল ভাসিয়ে শুরু হয় তিন দিনের উৎসব। চাকমা সম্প্রদায় উৎসবের প্রথম দিন ফুলবিজু, দ্বিতীয় দিন মুলবিজু এবং তৃতীয় বা শেষদিন গোজ্যেপোজ্যে দিন নামে পালন করে। মারমা সম্প্রদায় পানি উৎসব আর ত্রিপুরা সম্প্রদায় মাতে গড়াইয়া নৃত্যে। এছাড়া গ্রামে গ্রামে চলে মেয়েদের কোমর তাঁতে বেইন বোনার প্রতিযোগিতা। ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় বাহারি ও মুখরোচক খাবারের। তার মধ্যে মদ ও পাজন (বিভিন্ন সবজির মিশ্রণে তৈরি বিশেষ তরকারি) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পরিবেশন করা হয় মিষ্টান্ন, পায়েস, তরমুজ, মিষ্টি আলু, পানীয়, ভোজনসহ নানা খাবার। যার যে সাধ্যমতো ঘরে ঘরে চলে আয়োজন। একই সঙ্গে বৈসাবি উৎসবে একাট্টা তৈরি হয় আবহমান বাংলার চিরাচারিত বৈশাখী উৎসবের।
এদিকে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ইন্সটিটিটের উদ্যোগে ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে বসানো তিন দিনব্যাপী মেলা শেষ হচ্ছে আজ (শনিবার। মেলায় বসানো হয়েছে পাহাড়িদের নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক, অলংকার, খাবারসহ বিভিন্ন ব্যবহার্য্য সামগ্রির প্রদর্শনী ও বিক্রয় স্টল। মেলায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে মঞ্চ নাটক ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার বিকালে শহরের প্রধান সড়কে বর্ণাঢ্য শোভাডাত্রা দিয়ে শুরু হয় এ মেলা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে আয়োজিত মেলার উদ্বোধন করেন সাবেক পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার। এদিন মেলা উদ্বোধন শেষে ১৩ পাহাড়ি জনগোষ্ঠির শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সংস্কৃতি প্রদর্শন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাঙ্গামাটি সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ান-উল ইসলামসহ অন্যরা। মেলায় পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী কৃষ্টি ও সাংস্কৃতির পসরা সাজিয়ে ৩০ স্টল বসে। এছাড়া পাহাড়ি শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এররপর রাঙ্গামাটি বিজু, সাংগ্রাইং, বৈসুক, বিষু, বিহু, চাংক্রান-২০১৭ উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ৯ এপ্রিল উদ্বোধন করা হবে চার দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার। এছাড়া উৎসব ঘিরে মারমা সম্প্রদায় আয়োজন করছে ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় পরিবেশন করবে গড়াইয়া নৃত্য ও বয়স্কদের স্নান করানো।