মো আরিফুল ইসলাম, বাঘাইছড়ি, (রাঙামাটি)। রাঙামাটির ১,৯৩১.২৮ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অবস্থিত বাঘাইছড়ি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকায় বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এখনো এ সমস্যার সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি।
একের পর এক অগ্নিকাণ্ড, ক্ষতিগ্রস্ত বাঘাইছড়ি'বাসীর জনজীবন।
বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বহু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনাই এলাকাবাসীর জীবনে বিশাল আঘাত হেনেছে।
তার মধ্যে কয়েকটি হলো:- ২৪ জানুয়ারি ২০১৫: উপজেলার একটি বৃহৎ মার্কেটে আগুন লেগে প্রায় ২০০টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
২২ জানুয়ারি ২০১৬: কাচালং বাজারে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বসতঘরসহ প্রায় ৪০টি দোকান ধ্বংস হয়ে যায়।
২২ জুলাই ২০২২: দুরছড়ি বাজারে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৭০টি দোকান পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা তাদের জীবিকা পুনর্গঠনে দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়েন।
সর্বশেষ ২৯ অক্টোবর ২০২৪: পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (এসএস সিএইচটি) কার্যালয়ে আগুন লেগে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এমন ছোট বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায়।
দীর্ঘদিনের দাবিতে কোনো অগ্রগতি না পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা বলেন, বাঘাইছড়ির স্থানীয় জনগণ ও ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো কোনো কার্যকর সাড়া মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, “বার বার প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এমনকি বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির পরও আমরা ফায়ার সার্ভিসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।”
এছাড়া, বাঘাইছড়ি উপজেলায় প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, যা কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি করে। উপজেলাটি রাঙামাটি সদর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায়, অগ্নিনির্বাপণে খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের উপর নির্ভর করতে হয়।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ছাড়া বাঘাইছড়ির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় জীবনযাত্রা ক্রমশ ঝুঁকির মুখে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরা সবাই বলছেন, “আর দেরি নয়। প্রশাসনকে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।”
বাঘাইছড়ির উপজেলা সদর ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ বলেন, সরকারের কাছে একটাই আবেদন "অবিলম্বে এখানে একটি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন করা হোক"।
রাঙামাটি জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন এর সহকারী পরিচালক মোঃ দিদারুল আলম এর সাথে ফোনালাপে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের জন্য ৩৩ শতাংশ জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আমরা জায়গা অধিগ্রহণ করার পর প্রকল্প পরিবর্তন হওয়ায় আমরা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, পুনরায় প্রকল্প আসলে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করবেন বলে জানান।
পুনরায় প্রকল্প কবে আসবে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি সঠিক জানি না।
স্থানীয় জনগণের বিশ্বাস, সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।