সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বাংলাদেশে ভূমিধসের পূর্ব সতর্কতা এবং আগাম পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তামূলক প্রকল্পটি ২৫শে মার্চ (সোমবার) বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদে উপজেলা পর্যায়ের একটি অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে হাবীবা মীরা আর সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর।
বিশেষ অতিথি হিসেবে কারিতাস চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসের প্রতিনিধি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কর্মসূচী কর্মকর্তা ড্যানিয়েল সিপু গমেজ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ রায়, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বান্দরবানের সহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী, মেয়র প্রতিনিধি ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেলিম রেজা ।
সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কারিতাস বাংলাদেশ “ ভূমিধসের পূর্ব সতর্কতা এবং আগাম পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তামূলক প্রকল্পের” প্রকল্প ব্যবস্থাপক রামবাদু ত্রিপুরা (স্টিভ), সিআরএস এর প্রতিনিধি মুন্নি , টিএ-ডিআরআর (সিআরএস), ডিআরআর স্পেশ্যালিস্ট প্রিয়াংকা নাগ, আইসিটি এন্ড জিআইএস কর্মকর্তা মহসিন কবির, জেন্ডার ও সোস্যাল ইনক্লুশন কর্মকর্তা ফেনসি চাকমা । এছাড়াও উক্ত প্রকল্পের সহযোগি এনজিও হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মংমংসিং সহ বান্দরবাবন সদর উপজেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধি, সাংবাদিক প্রতিনিধি, প্রথাগত নেতৃত্ব কারবারি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সঞ্চালনা করেন, রুপম চাকমা, উপজেলা প্রকল্প সম্বন্ধয়কারী, হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন । স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রামবাদু ত্রিপুরা (স্টিভ), প্রকল্প ব্যবস্থাপক, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করেন, ডিআরআর স্পেশ্যালিস্ট প্রিয়াংকা নাগ।
সভায় আয়োজকেরা জানান ,মূলত বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকার জনগোষ্ঠীকে বৃষ্টিপাত জনিত ভ‚মিধসের মত দুর্যোগের প্রতি সহনশীলতা অর্জন করার পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য প্রকল্পটি প্রনীত। প্রকল্পটির মাধ্যমে পরিবার বা খানার পর্যায়ে সাধারণ মানুষ, স্থানীয় সম্প্রদায় এবং সরকারি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর ভূমিধসের ঝুঁকি কমাতে সক্ষমতা অর্জন করবে। উক্ত প্রকল্পটি বান্দরবান এবং কক্সবাজার জেলার মোট ৯টি ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করা হবে। বান্দরবান সদর উপজেলাধীন বান্দরবান পৌরসভা, সুয়ালক এবং রাজবিলা ইউনিয়নে উক্ত প্রকল্পটির কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রকল্পটি ইউএসএআইডির অর্থায়নে সিআরএস এবং কারিতাস বাংলাদেশের সহযোগিতায় বান্দবান সদর উপজেলায় হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পটির লক্ষিত কার্যক্রমসমূহের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হলো ভুমিধসের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কমিউনিটি/ইউনিয়ন পর্যায়ে মহড়া আয়োজন, স্থানীয় বিভিন্ন ভাষায় ভুমিধস বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রকাশনা (লিফলেট, বিলবোর্ড, পোষ্টার) ছাপানো ও স্থাপন, কর্মএলাকায় ভুমির সংবেদনশীলতা যাচাইয়ের জন্য স্টাডি এবং জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে উপস্থাপন পূর্বক সঠিকতা যাচাই, কর্ম এলাকায় পাড়া ও খানা পর্যায়ে ঝুঁকি নিরূপন, কাজের বিনিময়ে অর্থ প্রদানের মাধ্যমে ভুমিধস প্রতিরোধে জমি স্থিতিশীলকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন (পাহাড়ের ঢাল সুরক্ষা, বৃক্ষরোপন প্রভৃতি), বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী পাড়া/গ্রাম পর্যায়ে বৃষ্টিপাত পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও প্রশমনের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি প্রদান (ল্যাপটপ, প্রিন্টার ইত্যাদি), ভুমিধসের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা বিষয়ে ওয়েব বেইজড প্লাটফর্ম তৈরি এবং তথ্য প্রসারে সহায়তা প্রদান, ভুমিধস আগাম সতর্কবার্তা বিষয়ক কাজের কর্মপরিকল্পনা পরিমার্জন/প্রণয়ন করা এবং জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে উপস্থাপন পূর্বক মতামত গ্রহণ, ভুমিধস সতর্ক সংকেত ব্যবস্থা এবং সতর্কতার কর্ম পরিকল্পনা বিষয়ে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের (বিডিআরসিএস, সিপিপি, সিভিল সোসাইটি এবং এসএমসি) জন্য সুরক্ষা সংবেদনশীল প্রাথমিক চিকিৎসা, অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিষয়ক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ, জাতীয় পর্যায়ে ভুমিধসের আগাম সতর্কবার্তামূলক ব্যবস্থার পদ্ধতি, সর্বোত্তম অনুশীলন এবং পরবর্ত্তী পদক্ষেপ বিষয়ক কর্মশালা। প্রকল্পটির সাথে বিশেষভাবে যুক্ত থাকবে উপজেলা প্রশাসন, পাহাড়ী এলাকায় বসবাসরত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, যুব স্বেচ্ছাসেবক দল, মাল্টিপারপাস ডেভেলাপমেন্ট শেল্টার কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত নেতৃত্ব (কারবারী, হেডম্যান, পাড়াসর্দার, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি (ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা), স্থানীয় পর্যায়ে সকল সরকারী প্রতিষ্ঠান (কৃষি, পরিবেশ, বনবিভাগ, ডিপিএইচই, এলজিইডি, শিক্ষা, আবহাওয়া অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, বিডিআরসিএস, সিপিপি, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় সরকার প্রশাসন, জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। প্রকল্পটির মেয়াদকাল জুন ২৩ থেকে জুন ২০২৫ সাল পর্যন্ত। পরীক্ষামূলক এই প্রকল্পটির মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলে প্রথমবারের মতো ভুমির সংবেদনশীলতা যাচাইয়ের পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের মাত্রা পরিমাপ করে ভুমিধসের আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা প্রনয়নের প্রয়াস চালানো হবে।
অবহিতকরণ সভায় উপস্থিত প্রধান অতিথি বান্দরবান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, যেহেতু প্রকল্পটি বান্দরবান জেলায় নতুনভাবে কাজ করতে যাচ্ছে সেহেতু সকল সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে ।
অবহিতকরণ সভার সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে হাবীবা মীরা বলেন ভুমিধসের পূর্ব সতর্কতা ও আগাম পদক্ষেপ গ্রহণের প্রকল্পটি অমাদের এলাকায় নতুন, সরকারি সংস্থার সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করে প্রকল্পটি সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।