সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আজ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩খ্রি. বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ‘পরিচালনা বোর্ড’ এর ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ১ম সভা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটিস্থ প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা (রাষ্ট্রদূত অবঃ)। সভার আলোচ্যসূচি ছিলো (১) গত ২৯/০৫/২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা; (২) ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩খ্রি. পর্যন্ত সময়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং (৩) বিবিধ।
বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আলম চৌধুরী (অতিরিক্ত সচিব) উপস্থিত সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান এবং পরিচালনা বোর্ড সদস্যদের পরিচিত পর্ব শুরু হয়। অতঃপর সভাপতি অনুমতিক্রমে সদস্য প্রশাসন ও সদস্য পরিকল্পনা মোঃ জসীম উদ্দিন সভাটি সঞ্চালনা করেন এবং বিগত পরিচালনা বোর্ড সভার কার্যবিবরণী পাঠ করে শোনান। তিনি বিগত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতিসহ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩খ্রি. পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প/স্কিমের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করেন।
বোর্ডের চেয়ারম্যান তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগসহ পার্বত্য এলাকার জনমানুষের কল্যাণে সেবা করার সুযোগ দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য এলাকার জনপদ উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত আন্তরিক। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নে বোর্ড কর্তৃক পার্বত্য এলাকার জনমানুষের কল্যাণে যেসব প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হয় তিন পার্বত্য জেলায় দুর্গম এলাকায় বসবাসরত সুবিধা বঞ্চিত মানুষ যাতে প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে পারে সেদিকে বেশী গুরুত্ব দেয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক যেসব প্রকল্প/স্কিম গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সরকারি অন্যান্য বিভাগ/দপ্তর/সংস্থার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে যাতে দ্বৈততা সৃষ্টি না হয় সেজন্য তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা ও সমন্বয় দরকার। এসময় তিনি পার্বত্য এলাকার গুণগত শিক্ষার মান উন্নয়নে মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ রুমে সুযোগ সুবিধা প্রদান, প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রা মান্নোনয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৃহত্তর পরিসরে উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, ২-৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের পরিবর্তে আগামীতে ২০-৩০ কিলোমিটার দূরত্ব রাস্তা নির্মাণ, সুপেয় পানি সরবরাহ, জলবিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণে বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভু-প্রাকৃতিক গঠনকাঠামো বিবেচনায় অপার সম্ভাবনাময় একটি অঞ্চল। তিনি আরও বলেন অত্র এলাকার জনগণের কল্যাণে ৩ হাজার কোটি টাকা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পার্বত্যাঞ্চল উন্নয়নের জন্য সবসময় বদ্ধপরিকর এবং বৃহত্তর পরিসরে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। এসময় তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষতা বৃদ্ধি, আয়বর্ধনমূলক প্রকল্প গ্রহণ এবং সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করার বিষয়ে প্রস্তাব তুলে ধরেন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য শুভ মঙ্গল চাকমা এবং রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা প্রমুখ সভায় গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন। এসময় বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প/স্কিমের কর্মকান্ডের দৃশ্যমান গুণগত মানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
সভাপতি আলোচনার শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকগণ এবং রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধিকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং উপস্থিত সকলের সুস্বাস্থ্য মঙ্গল কামনা করে সভা সমাপ্তি ঘোষনা করেন।
সভায় বোর্ডের সদস্য বাস্তবায়ন মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ (যুগ্মসচিব)সহ খাগড়াছড়ি ইউনিট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মুজিবুল আলম, বোর্ডের উপপরিচালক মংছেনলাইন রাখাইন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত, সিএমইউ জেনারেল ম্যানেজার পিন্টু চাকমা, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কল্যানময় চাকমা, টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ এয়াছিনুল হক, রাঙ্গামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব তুষিত চাকমা, গবেষণা কর্মকর্তা কাইংওয়াই ম্রো, বাজেট ও অডিট অফিসার এবং ডজী ত্রিপুরা তথ্য অফিসার, সাগর পাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।