শনিবার | ৩০ নভেম্বর, ২০২৪

পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বিবাহ সনদ প্রদানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু

প্রকাশঃ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৪:৪৪:০৬ | আপডেটঃ ৩০ নভেম্বর, ২০২৪ ০৩:৫৮:০৪  |  ৫৮৭০
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিবাহ সনদ প্রদান আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচলন শুরু করা হয়েছে। তিন দম্পতিকে বৈবাহিক সনদ বিতরণের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহ সনদপ্রদান কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেছেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ সকল পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে এই বৈবাহিক তথ্য নথিভুক্তিকরণ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা। জাতিসত্তাগত ভাবে কিছু কিছু রেওয়াজ ও রীতিনীতির পার্থক্য রয়েছে। এটি জনগোষ্টীগুলোর মধ্যে তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে একটি অভিন্ন পদ্ধতিতে নথিভুক্ত করার অংশ। বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ প্র্রতিরোধে এনজিও, সামাজিক নেতৃত্ব ভূমিকা রাখেন।’

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় রাঙামাটি জেলা শহরের রাজবাড়ি এলাকার সাবারাং রেস্টুরেন্টে পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠীর বৈবাহিক তথ্য নথিভুক্তিকরণ এবং বিবাহ সনদপ্রদান বিষয়ে তদবির (লবি) সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের সহযোগিতা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) প্রোগ্রেসিভ এ সভার আয়োজন করে।

সভায় চাকমা সার্কেল চিফ আরো বলেন, ‘এক জাতিসত্তা আরেক জাতিসত্তা থেকে যেগুলো কল্যাণকর, সংবিধানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; সেগুলো অনুসরণ করতে পারে। সকল জাতিসত্তাগুলো যদি এই কার্যক্রমে একত্রিত হতে পারে এই উদ্যোগ অনেক কল্যাণকর হবে। চাকমা সার্কেল সকল ভালো উদ্যোগের পাশে আছে এবং থাকবে।’

সিএইচটি উইমেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম রাঙামাটির সভাপতি টুকু তালুকদারের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য প্রিয়নন্দ চাকমা, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ও সিএইচটি উইমেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের উপদেষ্টা নিরূপা দেওয়ান। বক্তৃতা করেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রোগ্রেসিভের নির্বাহী পরিচালক সুচরিতা চাকমা। বৈবাহিক তথ্য নথিভুক্তিকরণ এবং বিবাহ সনদপ্রদানের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সদস্য নুকু চাকমা। 

অনুষ্ঠানে তিন দম্পতি বৈবাহিক সনদপ্রদানের মধ্য দিয়ে চালু হল পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের বৈবাহিক সনদ কার্যক্রম। এই কার্যক্রমের আওতায় আসা প্রথম এই তিন দম্পতি হলেন- নিখুঁত দেওয়ান-ত্রিশিলা চাকমা, আকন্দ চাকমা-সঞ্চারী চাকমা এবং রক্তিম দেওয়ান-বিজয়া চাকমা দম্পতি।

সভার বিশেষ অতিথি আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য সাধুরাম ত্রিপুরা বলেন, বৈবাহিক সনদ যদি তিন পার্বত্য জেলায় করা যায় তাহলে আরো সুন্দর হবে। এরজন্য তিন রাজাকে এক হতে হবে। তিন জেলায় যারা অগ্রগামী অংশ আছেন; তাদের একটু ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন আছে। আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান, তিন সার্কেল চিফ (চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা), তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমন্বয় প্রয়োজন; তাহলেই এই উদ্যোগটি এগিয়ে যাবে। এই উদ্যোগে চাকমা রাজার অনেক আপ্রাণ প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ্য করেছি, কিন্তু অন্য দুই রাজা কী বলছেন সেটি আমরা বুঝতে পারছি না। সভায় সাধুরাম জানতে চেয়েছেন, যেহেতু একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই কার্যক্রমটি চালু করা হচ্ছে; সেক্ষেত্রে প্রকল্প যদি শেষ হয় এবং ডোনার যদি সহায়তা না করে তখন কী উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে?

বক্তারা বলেন, বৈবাহিক তথ্য সনদ পদ্ধতি পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের প্রথা রীতিনীতির ক্ষেত্রে কোনো বিঘ্ন হয়ে দাঁড়াবে না। দালিলিক প্রমাণের জন্য, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিরোধে এই কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় কারবারিরা যদি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ করতে পারেন তাহলে প্রথাগত বিচার ব্যবস্থায় সহযোগি হবে। পাহাড়ের সকল জাতিগোষ্ঠীকে বৈবাহিক সনদ পদ্ধতির আওতায় আনা হলে আইনে ব্যবস্থাসহ সার্বিক বিষয়ে সকলেই উপকৃত হবেন।



রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions