মঙ্গলবার | ২২ অক্টোবর, ২০২৪

রাঙামাটিতে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের মানববন্ধন

প্রকাশঃ ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০২:৫১:৩৪ | আপডেটঃ ২১ অক্টোবর, ২০২৪ ০৩:১৯:৪০  |  ৬১৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% শিক্ষা কোটা চালু, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামো নির্মাণসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ ও পুনাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবিতে রাঙামাটিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে  পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কর্মসুচী পালন করে সংগঠন দুটি।

ছাত্র সমাবেশে পিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রনেল চাকমার সঞ্চালনায় ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙামাটি জেলা কমিটির সভাপতি ম্রানু মারমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গা ওয়েলফেয়ার ফোরাম রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি অলনা তঞ্চঙ্গ্যা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি অংথুইচিং মারমা, পিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য উলি সিং মারমা, পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক থোয়াইক্য জাই চাক, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক মিলন চাকমা।

বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফোরামের রাঙামাটি জেলা সভাপতি অলনা তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ভাষায় পাঠদানের কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষক নিয়োগ না করার ফলে নামমাত্র কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী শিশুরা মাতৃভাষায় পাঠদানের সুযোগ পাচ্ছে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রাথমিক শিক্ষা হস্তান্তর করা হলেও মাধ্যমিক শিক্ষা হস্তান্তর যথাযথভাবে হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন এবং অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সবগুলো ধারা বাস্তবায়নের দাবি জানান।

বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল, রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি অংথুইচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় আজ পাহাড়ে নারীদের ওপর নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে। এরকম ঘটনা আজ অহরহ ঘটছে। তিনি আরো বলেন, একটি সাম্প্রদায়িকক গোষ্ঠী গত কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া রাউজানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে। তিনি অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক সব ধারাগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

পিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, সেই শিক্ষা ব্যবস্থার মান একেবারে নগন্য। বিজ্ঞান ভিত্তিক ও গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো কার্যকর করা হয়নি। তিনি দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাহাড়ীদের জন্য ৫% শিক্ষা কোটা চালু করার দাবি জানান।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিভাবে এই দেশকে নেতৃত্ব দিবে, কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য উলিচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের শিক্ষা কাঠামো বর্তমানে পুরোপুরি বিপর্যস্ত। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শুধুমাত্র সার্টিফিকেটের জন্য প্রতিযোগিতা করা হয় শিক্ষার্থীদের। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনো বৈষম্য রয়ে গেছে। এসব বৈষম্য দূর করে একটা গণমুখী ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানান।
 
পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক, থোয়াইক্যজাই চাক বলেন, শিক্ষা ছাড়া মানব জাতির কখনো উন্নতি হতে পারে না। শুধুমাত্র লোক দেখানো নয়, সত্যিকার অর্থে শিক্ষার দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন করে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। একি সাথে যারা শিক্ষক তারা তাদের শিক্ষকতাকে বর্গা দিয়ে অযোগ্য লোকদের দিয়ে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি এসব বিষয় বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজগুলোতে শিক্ষক সংকট, অবকাঠামো নির্মাণসহ চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতি রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র চাকমা বলেন, সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য ১৯৬২ সালের এই দিনে বাংলার ছাত্র সমাজ আন্দোলন করেছে। তারা জীবন দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরও আমরা একই চিত্র দেখতে পাচ্ছি। উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভেসে গেলেও মৌলিক অধিকার সমূহ থেকে আমরা পাহাড়িরা এখনো বঞ্চিত। পাঠ্যবইয়েও আদিবাসীদের নিয়ে বিভিন্ন উস্কানিমূলক, বিভ্রান্তিকর ও অযাচিত তথ্য পাঠ্যসূচিতে উপস্থাপন করে দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাহাড়িদের নিয়ে ভূল তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আজ ২৬ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও সরকার এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করেনি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো কাঙ্খিত শান্তি ফিরে আসেনি। এখনো নামে বেনামে ভূমি বেদখল হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে রোডম্যাপ ঘোষণাপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।



রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions