বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে রাঙামাটি'র দুর্গম পাহাড়ি এলাকার মানুষেরা। সারা বছর দুর্গম পাহাড়ি এলাকার মানুষেরা ঝিরি ঝর্নার পানির উপর নির্ভর করে চলতে হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে সে সব ঝিরি ঝর্ণা গুলো শুকিয়ে গেলে দ্র্গুম পাহাড়ি এলাকায় দেখা দেয় তীব্র পানির সংকট। শুকিয়ে গেছে বেশ কিছু কুয়ার পানিও।
সরেজমিনে দেখা যায়,রাঙামাটি'র কাউখালী উপজেলাধীন চেলাছড়া উপর পাড়া গ্রাম। যা মূ্ল রাস্তা থেকে দুই মাইল দূরে যেতে অবস্থিত। গ্রামটি যুগ যুগ ধরে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে।যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম দুই চাকার মোটর সাইকেল। এই গ্রামে ৪২ পরিবারের বসবাস যারা সবাই কৃষিকাজে নির্ভরশীল। তাদের খাওয়া, রান্না করা সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল কাজ একটি মাত্র কুয়া উপর নির্ভর। সকালে আর বিকেলে মহিলাদের পানির জন্য লম্বা লাইন দেখা যায় অপেক্ষা করতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টার। অনেক সময় পানির জন্য মারামারিও লেগে যায়। পানি সংকটে ঠিক মতো গোসল করাও হচ্ছে না তাদের। ফলে খাবার পানিসহ ব্যবহার্য্য পানির তীব্র সংকটে ভুগছে ওই গ্রামের মানুষ।
গ্রামের বাসিন্দা রেখিন চাকমা বলেন, এই সময়ে আমাদের গ্রামে পানি শুকিয়ে যায়। তখন আমাদের পানির অভাবে থাকতে হয়। ৮ - ১০ ফুট কুয়া কুড়লেও অনেক সময় ভাগ্য থাকলে পাওয়া যায় আর ভাগ্য না থাকলে পানি পাওয়া যায় না। পানির জন্য আমরা খুব কষ্টে আছি।
সাধনা দেবী বলেন, পানি আনা নেওয়া করতে আমাদের ঘরের কাজ গুলো করার সময় হয় না। পানির কলসি কলে করে নিয়ে পাহাড়ে উঠে
অনেক দূরে গিয়ে পানি আনতে হয়। একবার পানি আনতে গেলে দিন চলে যায়। সকালে গেলে দুপুরে কাজ করা হয় না আর দুপুরে গেলে বিকেলে কাজ হয় না।
পূণ্য সেন চাকমা বলেন, পানি একদম বলতে গেলে নাই। এইসময় আসলে ছড়া গুলো মোটামুটি শুকনা হয়ে যায়। আমরা ঠিক মতো গোসল করতে পারি না এই রকম অবস্থায় আছি আমরা। আমাদের এলাকায় রিং ওয়েল বা টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হতো তাহলো ভালো হতো।
সূর্য তারা চাকমা বলেন, অনেক সময় এমন অবস্থা হয় পানির জন্য মারামারি করার অবস্থা হতে হয়। পানির জন্য লম্বা লাইন ধরতে হয় কে আগে পানি নিতে পারে প্রতিযোগিতা হয়। পানির জন্য ঘন্টার পর ঘন্টার অপেক্ষা করতে হয় মাঝে মাঝে পানি নিয়ে ঘরে যেতে রাত হয়। পানি জন্য খুব কষ্টে আছি।
৯৯ নং ঘাগড়া মৌজা চেলাছড়া উপর পাড়া'র গ্রাম প্রধান পূর্ণ্য বিকাশ চাকমা বলেন, আমাদের চেলাছড়া উপর পাড়া এলাকায় পানির সংকট একটু বেশি। যেহেতু পাহাড়ি এলাকা শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না এই পানির জন্য এলাকার মানুষের অনেক কষ্ট হয়। গ্রামে প্রায় ৪২ পরিবারের মতো মানুষের বসবাস। আগে জেলা পরিষদ থেকে পাবলিক হেলথের মাধ্যমে জিএসএফ লাইন ছিলো কিন্তু ২০১৭ সালে পাহাড় ধসের দুর্যোগের কারণে তাও নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কষ্ট যে পরিমাণ হচ্ছে তা বলার মতো না। সারা দিন কাজ কর্ম করে গোসলের পানিও পাওয়া যায় না। শুধু মাত্র হাত ধুয়ে গোসল না করে থাকতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি, লংগদু উপজেলায় এখন বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোতে খাবার পানির জন্য মূলত প্রাকৃতিক ছড়া, ঝিরি ও কুয়ার পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এ জায়গাগুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে খাওয়ার পানির জন্য ওইসব গ্রামবাসীকে দূর থেকে পায়ে হেঁটে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেক সময় কুয়ার পানি পান করে বিভিন্ন এলাকার মানুষ নানা রোগে ভুগছে। প্রতিবছর পানিবাহিত রোগে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। তবে, এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।
রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া বলেন, পাহাড়ি এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং মানুষের যে প্রাত্যহিক চাহিদা তা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে পানির কিছুটা সংকট হচ্ছে। তবে আমাদের চেষ্টা আছে চলমান বরাদ্দে পানির উৎস স্থাপনের যে কাজ গুলো আছে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার।
তিনি আরো বলেন, রাঙামাটি মূলত পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এখানে বিছিন্ন ভাবে যে গ্রামগুলো আছে সে গুলো পানির সরবরাহের আওতায় আনার জন্য আমাদের সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবারাহ প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ব্যাজ প্রকল্পের
পানির সরবরাহ সিস্টেম ১৮০ টি স্থাপন করেছি সেগুলো এই অর্থ বছরে শেষ হবে এবং পুরোদমে চালু করে দিবো এর পাশাপাশি গ্রামীণ পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য রাঙামাটির দশ উপজেলায় দশটি স্থান নির্বাচন করে ইতিমধ্যে প্রকল্প পরিচালক মহোদয়ের দপ্তরে পাঠিয়েছি আশা করছি এই অনুমোদন বাস্তবায়ন হলে বর্তমান যে পানির সংকট অনেকটা দূরীভূত হবে।