সিএইচটি টুডে ডট কম ডেস্ক। বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এক বিশেষ পর্যালোচনা সভা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০টায় এই বিশেষ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সুনীল বিহারি চাকমার সঞ্চালনায় ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ২৫ বছর উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মিসেস সুমিতা চাকমার সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কাচালং সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বাবু দেবপ্রসাদ চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাঘাইছড়ি উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিসেস সাগরিকা চাকমা এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান প্রমূখ।
এছাড়াও সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাঘাইছড়ি উপজেলার জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান ও বিভিন্ন কলেজ ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহ সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বাঘাইছড়ি থানা শাখার বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।
বিশেষ পর্যালোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাবেক প্রত্যাগত সদস্য ও পিসিজেএসএস বাঘাইছড়ি থানা শাখার সভাপতি প্রভাতকুমার চাকমা।
স্বাগত বক্তব্যে প্রভাত কুমার চাকমা বলেন,'এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। আমাদের জুম্মদের অনেক রক্ত ঝরেছে, অনেক মা-বোন ইজ্জত হারিয়েছে, অনেক বাপ-ভাইকে অকালে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। কাজেই এ চুক্তি কোনদিন বৃথা যেতে পারে না, আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম তরুণ ও যুবসমাজকে আজকে, এই মুহুর্তে এটা নিয়ে গভীর অনুধাবন করতে হবে।'
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মিসেস সাগরিকা চাকমা বলেন, ''এখন আমি প্রায়ই দেখি আমাদের জুম্মদের থেকে জাতীয় রাজনীতিতে নাম লেখালে তারা জুম্ম জাতির পক্ষে কথা বলতে ভয় পায়, কিংবা সরকারি চাকরি পেলে চাকরি হারানোর ভয়ে জুম্ম জাতির পক্ষে কথা বলতে ভয় পায়। আমাদের এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা যে যে অবস্থানে থাকি না কেন সেই অবসস্থান থেকে আমাদের জুম্ম জাতির পক্ষে হয়ে কথা বলতে হবে সবসময়।"
ত্রিদিব চাকমা বলেন, ''আজকে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বয়স ২৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এখনো চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারকে আশু কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না বা শোনা যাচ্ছে না। এখন আমাদের জুম্মদের বিকল্প ভাবনা ভাবার সময় সন্নিকটে। আমাদের ভাবতে হবে আমাদের পায়ের তলায় মাটি থাকতে দিতে চাই, নাকি চাই না।"
বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন ইউপি চেয়ারম্যান বাবু অলিভ চাকমা বলেন, 'আমি শুনেছি পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মোদের জনসংখ্যাহ্রাস করে দেওয়ার হীন উদ্দেশ্যে একটি মহল বিশেষ করে বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে স্বাস্থ্যের উন্নতির কথা বলে, রোগব্যাধি উপশমের কথা বলে বন্ধ্যত্বের ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছে। এ ব্যপারে আমাদের জুম্মদের গভীর সচেতন হতে হবে। চোখকান খোলা রাখতে হবে।'
সাজেক বেটলিং মৌজা হেডম্যান জুপ্পোইথাং লুসাই বলেন, সরকার উন্নয়নের নামে সীমান্ত সড়ক করতেছে কিন্তু কোন ক্ষতিপূরণ দেয়নি বরং আদিবাসীদের উচ্ছেদ করার জন্য নিবিড় ষড়যন্ত্র করতেছে সরকার।
এছাড়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাচালং সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ দেবপ্রসাদ দেওয়ান বলেন, ''আমাদের জুম্মদেরকে একটি বিশেষ মহল 'আমরা সেনাবাহিনীর বিরোধী' বলে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আমি তাদেরকে বলবো, আমরা সেনা শাসনটা মানতে পারি না বলে আমরা সেনাশাসনের বিরোধী, আমরা সেনাবাহিনীর বিরোধী না।"
এতে আরো বক্তব্য রাখেন, জ্ঞান প্রকাশ চাকমা, সদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বাঘাইছড়ি থানা শাখা,জ্ঞানময় চাকমা, প্রধান শিক্ষক মূখ উচ্চ বিদ্যালয়, ভদ্রসেন চাকমা,প্রধান শিক্ষক কাচালং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,বিল্টু চাকমা,খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদ, ভূপতি রঞ্জন চাকমা, সারোয়াতুলী ইউনিয়ন পরিষদ, পিয়েল চাকমা,সভাপতি পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ বাঘাইছড়ি থানা শাখা, লক্ষীমালা চাকমা নারী নেত্রী,এছাড়া বাঘাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন ময়মুরুব্বি গণ প্রায় ৮০ জন উপস্থিত ছিলেন
পরে সভাপতি সুমিতা চাকমা বক্তব্যের মাধ্যমে পর্যালোচনা ও পূর্ণমিলনী সভাটি সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।