কাপ্তাইয়ে বিস্ফোরণে বাবা-ছেলের মৃত্যুর ‘ক্লু উদ্ঘাটন’ হয়নি এখনো
প্রকাশঃ ০৯ জানুয়ারী, ২০২৩ ১০:০১:০৭
| আপডেটঃ ১০ জানুয়ারী, ২০২৫ ০৪:৫৯:৪৫
|
৫৪৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। জেলার কাপ্তাই উপজেলায় ‘অজ্ঞাত বস্তুর’ বিস্ফোরণে বাবা-ছেলের মৃত্যুর ২৪ ঘন্টা পার হলেও ক্লু উদ্ঘাটন করা যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরিত ঘরটিতে বেশকিছু ‘গ্রেনেডের’ পিন পাওয়া গিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে নিহত ইসমাইল হোসেন বেশকিছু পরিত্যক্ত লোহার সামগ্রী বাসায় এনেছেন, যেগুলোতে বিস্ফোরিত সামগ্রী বা বোমা সদৃশ্য কিছু ছিল বলে ধারণা পুলিশের। এদিকে, বিস্ফোরণে নিহত মো. ইসমাইল মিয়া ও তার ছেলে মো. রিফাতের (৭) ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে জানায় পুলিশ।
গতকাল রোববার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার ৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়নের বাদশা মিয়া টিলা এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাবা-ছেলে ঘটনাস্থলে নিহত হলেও ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী মোছা. সখিনা বেগম (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। রোববার রাতেই তাকে কাপ্তাইয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে চমেকে চিকিৎসাধীন সখিনার শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। বিস্ফোরণের সময় পরিবারের চার সদস্যের তিনজন ঘরে উপস্থিত থাকলেও ইসমাইলের মেয়ে ইসরাত জাহান ফারিয়া (৭) ঘরের না থাকায় সে রক্ষা পেয়েছে।
এদিকে সোমবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণে নিহত ইসমাইল হোসেনের বাড়ির আসবাব ও অন্যান্য জিনিসপত্র ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে আছে। যে ঘরটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে এখনো রক্তের চাপ রয়ে গেছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঘরের আসবাব। একটি দুর্ঘটনা যে এক নিমিষেই সবকিছুকে শেষ করে দিতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ এখনো সকলের সামনেই। ছেলে ও নাতিকে অকালে হারিয়ে যেন পাথর হয়ে আছেন ইসমাইলের বাবা আজহার উল্লাহ (৬৫)। তিনি বলেন, আমি মাঠে গিয়েছিলাম গরু আনতে, এসে দেখি সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলে ও নাতিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি।
ইসমাইলের বোন পারভীন আক্তার ঘটনার বিবরণ দিয়ে জানান, আমরা বিকট শব্দ শোনার পর মনে করি, এখানে বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার বিস্ফোরিত হয়েছে। পরে এসে দেখি আমরা ভাইয়ের ঘর অন্ধকার, আর আমার ভাবি চিৎকার করছে। একপর্যায়ে ঘরের দরজা বন্ধ থাকায় আমরা দরজা ভেঙে ঢুকে দেখি আমার ভাই ও ভাইয়ের ছেলে বিস্ফোরণে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তারপর আমরা দ্রæত পানি ঢেলে দিয়ে তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।
নিহত ইসমাইল হোসের প্রতিবেশী রোমানা আক্তার জানান, ‘ইসমাইলের বউসহ আমি প্রতিদিন গরুর ঘাস আনতে জঙ্গলে যাই। ঘটনার দিন সকালেও আমরা একইসঙ্গে জীবতলী এলাকায় গরুর ঘাস সংগ্রহে গিয়েছি। সেখানে একটি ‘লাল বল জাতীয় বস্তু’ দেখতে পেয়েছি। যেটি ইসমাইলের বউ খেলার বস্তু ভেবে ছেলের জন্য নিয়ে আসেন। এলাকাবাসীর ধারণা, ওই বস্তুটি বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনার সকলে হতবাক হয়ে পড়েছেন।’
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কাপ্তাই সার্কেল) রওশন আরা বর বলেন, বিস্ফোরণে নিহত বাবা-ছেলের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। যে ঘরের ভেরত বিস্ফোরণে হয়েছে, সেখানে বিস্ফোরণের পর ‘গ্রেনেডের পিন’ পাওয়া গিয়েছে। পরিবারের লোকজন কোথাও থেকে লোহজাতীয় জিনিস বাসায় এনেছেন। যেগুলো সেনাবাহিনী কিংবা নৌবাহিনীর কোন প্রশিক্ষণ স্থানের আশপাশ থেকেও নিয়ে আসতে পারেন। তবে আজকে বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। তারা পরিদর্শন শেষে অফিসিয়ালি কোনো মন্তব্য করেননি। তাই আপাতত ঘটনার ক্লু বলা যাচ্ছে না।