রাঙামাটির আনন্দ বিহারে ৮৫তম ব্যূহ চক্র মেলা উদযাপিত
প্রকাশঃ ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ ০৯:০৪:২১
| আপডেটঃ ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ০৩:৫৭:৪৯
|
১৮৩৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। শুভ মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় রাঙামাটির আনন্দ বিহারে মাঠে উৎসব ও আনন্দঘন পরিবেশে ৮৫তম ঐতিহ্যবাহী সার্বজনীন ব্যূহচক্র মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারী) সকালে সার্বজনীন শুভ মাঘী পূর্ণিমা ও ব্যূহচক্র উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ফিতা কেটে দিনব্যাপী ব্যূহচক্র মেলা উদ্বোধন করেন আনন্দ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপধ্যক্ষ ভদন্ত ধর্মেশ্বর স্থবির, আনন্দ বিহারের পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা সমীর কান্তি চাকমা, সাধারণ সম্পাদক জয়াকর চাকমা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উসাং মংসহ ধর্মপ্রাণ দায়ক-দায়িকারা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ব্যূহচক্র মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিলে মেলায় অংশ নিতে শত শত ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ নারী-পুরুষ ধর্মীয় চক্রবাক বা প্যাঁচঘরে দল বেধে ঘুরতে শুরু করে। এ সময় শত শত পূণ্যার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো আনন্দ বিহার প্রাঙ্গন। দিনব্যাপী অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল বৌদ্ধ পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধ পূজা, পিন্ডদান ও ধর্মীয় আলোচনা সভা।
প্রাচীন ঐতিহ্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধুমাত্র আনন্দ বিহারে প্রতিবছর শুভ মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে এই ব্যূহচক্র মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা উদ্বোধনের পর শুভ মাঘী পূর্ণিমার ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পাদিত হয়। মেলায় বৌদ্ধসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনের অংশ গ্রহণে এ উৎসব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়। মেলা উপলক্ষে আনন্দ বিহারের পাশে পাশে বসে হরেক রকম পসরা সাজিয়ে দোকান বসায় ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য, ব্যূহচক্র মেলা উপলক্ষে আনন্দ বিহার মাঠে এক রকমের চক্রবাক বা প্যাঁচঘর তৈরী করা হয়। তার মাঝখানে কারুকার্য দিয়ে মন্দির তৈরি করে সেখানে রাখা হয় বুদ্ধমূর্তি। আর এই চক্রবাক বা প্যাঁচঘরে দল বেঁধে ঘুরে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। আবার দলে দলে ঘুরে বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়। এতে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে লোভ-দ্বেষ-মোহ ও হিংসামুক্ত জীবন গড়ার জন্য মহাপূণ্য অর্জন করা যাবে এমনটাই প্রত্যাশা ভক্তদের।
বৌদ্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, এই চক্র আবর্তন করে যে চক্রের বাঁধা অতিক্রম করে অভীষ্টস্থানে পৌঁছাতে পারে তিনিই পূণ্যের অধিকারী। কোনো লোক চাইলেই বহু আকাঙ্খিত পূণ্য লাভ করতে পারে না। সংসার চক্রে ঘুরতে ঘুরতে জীবদ্দশার ভালো কর্মের প্রভাবে একপর্যায়ে মানুষ পূণ্য লাভ করতে সক্ষম হয়, আবার পুনর্জন্ম গ্রহণ করে মর্ত্যলোকে ফিরে আসে। তাই এই বিশ্বাস থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এই পূণ্য অর্জন করতেই এই বহুচক্র আবর্তনে অংশ নেয়। পুণ্যের আশায় অনেকই তা অতিক্রম করতে পারে আবার পাপী ব্যক্তিরা সহজে তা অতিক্রম করতে পারেনা। ব্যূহচক্রের ভেতরে আটকা পড়ে এবং আরেকটি রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে আসতে হয়। এটাই ব্যূহচক্রের মূল বৈশিষ্ট্য।