শুক্রবার | ১৭ মে, ২০২৪

দুর্নীতির কারণে বন্ধ হয়ে যাবার পথে রাঙামাটি সরকারী হাঁস প্রজনন খামারটি !

প্রকাশঃ ২৪ জুলাই, ২০১৯ ১২:২১:১৬ | আপডেটঃ ১১ মে, ২০২৪ ০৭:০৭:০৬  |  ২৪৮৭
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। ধবংস হবার  পথে রাঙামাটি সরকারী হাঁস প্রজনন খামারটি।  কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির কারণে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে খামারের। সম্প্রতি একটি বেসরকারী টেলিভিশনে শুক্রবার দিনে ভোর সকালে হাঁস বিক্রির স্বচিত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পর টনক নড়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের।

তবে এখনো অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন খামারের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক ও জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বরুন কুমার দত্ত।

গুরুতর অভিযোগ আছে, খামারের হিসাব রক্ষক নজরুলের বিরুদ্ধে। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নায্য দামের প্রকৃত খামারীদের কাছে হাঁসের ডিম, বাচ্চা ও হাঁস বিক্রি না করে বেশী দামে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। এ টাকা ভাগ ভাটোয়ারা করেন খামারের গুটি কয়েক কর্মকর্তা। এ অভিযোগ আছে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বরুন কুমার দত্তের বিরুদ্ধেও। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বরুন কুমার দত্ত।

হাঁস খামারের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশনা করার শর্তে বলেন, জেলা প্রাণি স¤পদ কর্মকর্তা হাঁস খামারটি নিজের হাতে রেখে দুর্নীতি করে যাচ্ছে মাসের পর মাস। তাকে সহযোগীতা করছে খামারের হিসাব রক্ষক নজরুল ইসলাম।

নজরুলের পদ হিসাব রক্ষক হলেও খামারের সবকিছু তার কথায় চলতে হয়। সে ক্ষমতাও নাকি দিয়ে রেখেছে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক বরুন কুমার দত্ত। ফলে নজরুলের কথায় চলতে হয় তার উর্ধতন কর্মকর্তাদের। না হলে খামার থেকে বদলীর হুমকি দেয় নজরুল। এজন্য খামারের নানান অনিয়ম নিরবে সহ্য করেন অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
কোন সরকারী নিয়ম নীতি অনুসরন না করে যত্রতত্র ডিম, বাচ্চা, হাস বিক্রি করে দেন নজরুল। ক্রেতাদের কাছ থেকে আদায় করেন বাড়তি টাকা। ক্রেতাদের দেন না কোন রশিদ।

হাঁস খামারের তথ্যমতে, কাপ্তাই হ্রদ হাঁস পালনের উপযোগী হওয়ায় তিন পার্বত্য (রাঙমাটি,বান্দরবান, খাগড়াছড়ি) জেলা ও কক্সবাজার জেলার খামারীদের কম দামে হাঁসের বাচ্চা সরবরাহ, এ এলাকার পুষ্টি চাহিদা পুরণ করতে সরকার ২০০১ সালে রাঙামাটিতে খামারটি স্থাপন করে।  শুরু দিকে এ খামারটি আলোর মুখ দেখতে শুরু করলেও খামারের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাক্তির কারণে হুমকির মুখে পড়ে খামারটি। খামারীরা নায্য মুল্যর খবরে খামারে ডিম, বাচ্চা, হাঁস ক্রয়ের জন্য আসলে সরকারী দামের চেয়ে বেশী দাম চেয়ে বসেন নজরুল।

টেলিভিশনের ঐ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায় ২৬৫টি হাঁস  প্রতিটি ২২৫ টাকা করে নেন নজরুল।  কিন্তু জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা জানান, খামারের হাঁসের সর্বোচ্চ দাম ১৭০ টাকা। নজরুল বেশী টাকা নিয়েছে স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। সংবাদ প্রচারের পর হাস বিক্রির সব টাকা সকরারী কোষাগারে জমা দেখানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানান, টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারের পর বরুন কুমার দত্ত একটি ব্যাখ্যাও দেন। এতে তিনি বলেন,  ওজন করে হাসগুলো বিক্রি করা হয়েছে। সব টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিডিউল মোতাবেক হাসগুলো বিক্রি করা হয়েছে।




এ ব্যাপারে ২৬৫টি  হাঁস ক্রেতা প্রতিময় চাকমা বলেন, তার কেনা ২৬৫ টি হাস কোনটিই ওজন করা হয়নি। সাংবাদিক আসার খবরে তড়িগড়ি করে হাসগুলো নৌকায় উঠিয়ে দেয় নজরুল। এ হাঁসগুলো ক্রয় বাবদ তাকে কোন ভাউচার দেয়নি নজরুল। তিনি বলেন, হাসগুলো ক্রয়ে তাকে কোন সিডিউল বা সরকারী নিয়ম অনুসরণ করতে হয়নি। সবকিছু নজরুল করেছে। টাকা নিয়েছে খামারের ভিতরে। সাংবাদিক আসার কারণে তিনি খুব তড়িগড়ি করে আমাকে বিদায় দেওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং দ্রুত খামার ত্যাগের পরামর্শ দেন।

প্রতিময় চাকমা আরো বলেন, সেদিন হাঁস ধরার সময় খামারে সাংবাদিক আসায় আমার উপর বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন নজরুল। তিনি আমাকে নানান প্রশ্ন করতে থাকেন। সাংবাদিক আসার পেছনে আমাকে দায়ী করছে নজরুল।   

হাঁস খামারের পাশে বাসিন্দা খোকন দে বলেন, খামারটি আমাদের চোখের সামনে ধ্বংস হচ্ছে। কি অনিয়ম হচ্ছে আমরা নিয়মিত দেখতেছি। খামারটি বাঁচিয়ে রাখা দরকার। কিছু কর্মকর্তার কারণে খামারটি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ের খামারীরা এর সুবিধা পাচ্ছে না।

সংবাদ প্রচারের প্রতিক্রিয়ায়  বরুন কুমার দত্ত বলেন, খবরটি উদ্দেশ্যমুলক, মিথ্যা, অপ্রাসঙ্গিক, সরকারী কাজে বাধা দেওয়ার সামিল। যা হয়েছে সম্পূর্ণ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে হয়েছে।
 

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions