সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটিতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শুভ প্রবারণা পুর্ণিমা উৎসব উদযাপিত হয়েছে। শুরু হয়েছে কঠিন চীবর দানোৎসব। উৎসবে মুখর হয়ে উঠেছে রাঙামাটির পাহাড়ি জনপদ।
বুধবার বাংলাদেশের প্রধান বৌদ্ধধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি রাজবন বিহারসহ জেলায় প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে প্রবারণা পুর্ণিমা। উৎসবে নানা আচার-অনুষ্ঠানে দিনব্যাপী পালিত হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। এ উপলক্ষে রাঙামাটি রাজবন বিহারসহ প্রতিটি বৌদ্ধ মন্দিরে সকালে ধর্মীয় পতাকা উত্তোলণ, ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, বুদ্ধ পূজা, পঞ্চশীল প্রার্থনা, অষ্টপরিস্কার দান, বুদ্ধমূর্তি দান, পিন্ডদান, পরিত্রাণ পাঠ, উৎসর্গ, ধর্মীয় দেশনা এবং বিকালে ধর্মীয় সভা, উৎসর্গ ও সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উড়ানো হয়েছে। রাজবন বিহারে এসব অনুষ্ঠানে ধর্মীয় বাণীর উদ্ধৃতি দিয়ে দেশনা দেন, বিহারটির আবাসিক ভিক্ষুপ্রধান ও মহানির্বাণপ্রাপ্ত শ্রাবকবুদ্ধ শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের অন্যতম শীয্য শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। অনুষ্ঠানে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটেছে।
এসময় রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিকা কার্যনির্বাহী পরিষদ’র সভাপতি গৌতম দেওয়ান, সাবেক মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান সহ হাজারো পূণ্যার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরে শুরু হয়েছে দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসবের। আজ থেকে আড়াই হাজার বছরেরও আগে মহামতি গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় তাঁর প্রধান সেবিকা বিশাখা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা কেটে রংকরণসহ তৈরি শেষে বৌদ্ধ সন্যাসীদের গেরুয়া কাপড় (চীবর) গৌতম বুদ্ধকে দান করেছিলেন। প্রতি বছর ভিক্ষুদের বর্ষা অধিষ্ঠান শেষে বিশাখা প্রবর্তিত এ দানকে কঠিন চীবর দানোৎসব পালন করেন বৌদ্ধরা। এবার প্রবারণার সঙ্গে সঙ্গে বুধবার থেকে দু’দিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়েছে- রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের খারিক্ষ্যং শাক্যবন বিহার, সাপছড়ি ইউনিয়নের বোধিপুর বন বিহার এবং শহরের আসামবস্তীর বুদ্ধাঙ্কুর বৌদ্ধ বিহারে। ১৪-১৫ নভেম্বর সার্বজনিন কঠিন চীবর দানোৎসব আয়োজন করা হবে রাঙামাটি রাজবন বিহারে।
জানা যায়, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী বর্ষা অধিষ্ঠান শেষে আশ্বিনী পুর্ণিমা তিথিতে ধর্মীয় মহোৎসবের আয়োজন করেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। আষাঢ়ী পুর্ণিমা তিথিতে বর্ষা অধিষ্ঠান শুরু হয়ে তা শেষ হয় আশ্বিনী পুর্ণিমায়। এর সঙ্গে সঙ্গেই আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় কঠিন চীবর দানোৎসবের। এ উপলক্ষে প্রবারণা উৎসব পালন করেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী।