মাসস সংস্থার আওয়ামীলীগপন্থী কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ রাঙামাটিতে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষ্যে র্যাালী ও আলোচনা সভা কাউখালী উপজেলার দুর্গম ফটিকছড়ি ইউনিয়নে ইউএনও’র মতবিনিময় সভা লামায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ২টি ইটভাটাকে ৪লক্ষ টাকা জরিমানা সাজেক থেকে ফেরার পথে জিপ গাড়ি উল্টে নোবিপ্রবি ৫ শিক্ষার্থী আহত
সাকিব আলম মামুন, লংগদু (রাঙামাটি)। সরকারি খালের নালার মুখে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের ফলে পানির সংকটে নষ্ট হয়ে যাওয়ার হুমকিতে পড়েছে ১০ হাজার বিঘা ফসলী জমির ধান। রাঙামাটির লংগদু উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের গাউসপুর রাঙ্গীপাড়া ও ঠেকাপাড়া এলাকার মধ্যে থাকা পাহাড়ি খালের পানি আটকে রাখতে এই বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণের ফলে গত দুই-তিন মাস ধরে পানি নালা দিয়ে নামতে না পারায় কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমির ধান, গম ও অন্যান্য ফসল ইতোমধ্যে পানি সেচের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সরজমিনে মঙ্গলবার দুপুরে বিলের আশেপাশে থাকা জমির কয়েকশ কৃষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকদের বাঁধা উপেক্ষা করে সরকারি নালাতে অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণ করেছে একই এলাকার প্রভাবশালী আবু কালাম, মো. কামাল ও কুলসুম বেগম সহ আরো অনেকে।
কয়েকশ কৃষক বাঁধ নির্মাণ না করার জন্য হাজারো অনুরোধ করলেও তা শুনেননি তারা। ইতোমধ্যে বাঁশ, গাছ ও কাঠের খুঁটি দিয়ে সাথে বালির বস্তায় কাজ সম্পন্ন করেছে তারা। কৃষকরা বাঁধা দিতে গেলে উল্টো তাদেরকে নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। বাঁধের ফলে পানি নিচের দিকে নামতে পারছে না এতে পানি সংকটে সেচের অভাবে বিলের ফসলী জমির ধান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আরও পরিলক্ষিত হয় যে, সেচের অভাবে মাঠের ধান, গম ও অন্যান্য ফসলী জমি রোদের তীব্রতায় ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। ফসল সব ঝলসে গেছে ও বিভিন্ন রোগজীবাণু আক্রান্ত হয়েছে।
কৃষক কামাল বলেন, আমাদের পরিবারের প্রায় ৭০ বিঘা ও আমার ব্যক্তিগত ১০ বিঘা জমির ধান পানির অভাবে শেষ হয়ে গেছে। অবৈধভাবে বাঁধ নির্মাণের কারণে আমার মতো শতশত কৃষক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের স্বপ্নগুলো এখন পানি সংকটে বিলিন হচ্ছে। এর একমাত্র কারণ অবৈধভাবে এই বাঁধ নির্মাণ। বাঁধের জন্য পানি নামতে পারছে না।
রাঙ্গীপাড়া গ্ৰামের কৃষক শফিকুল ও আসাদুল জানান, সরকারি নালায় বাঁধ নির্মাণের কোন অধিকার নেই। অথচ আইন-কানুন অমান্য করে তারা এই বাঁধ নির্মাণ করছে। আমরা চাই, অবৈধ এই বাঁধ ভেঙে খালের পানির অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা হোক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কৃষক মুঠোফোনে জানান, বাঁধ নির্মাণকাজে আমরা বাঁধা দিলে ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এসে আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। ভয়ে মুখ খুলতে পারিনি। ধারদেনা করে ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এখন সবটুকু ধান সেচের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে আছে। নালা দিয়ে পানি নামতে না দিলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ কৃষকদেরকে বাঁচান। না হলে আমরা না খেয়ে মরব।
অন্যদিকে অভিযুক্তদের মধ্যে আবু কালাম ও কুলসুম বেগম জানান, আমরা পাহাড় থেকে আসা পানি আটকে রেখে আমাদের তামাক ক্ষেতে দেই। মূলত পানি স্বল্পতার কারণে এই বাঁধ দেওয়া হয়েছে। যারা অভিযোগ করেছে তারা চাইলেও এভাবে উপরে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে ফসলী জমিতে পানি নিতে পারে। আমরা যদি বাঁধ ছেড়ে দেই তাহলে সব পানি একসাথে শেষ হয়ে যাবে। তখন আমাদের তামাক ও অন্যান্য শস্য ক্ষেতে পানি দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তবে কোন অনুমতি না নিয়ে সরকারি নালায় বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন তারা।
এবিষয়ে বগাচতর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল বাশার জানান, বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখার বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। ভোক্তভোগী কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করার পর দুইপক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে পানি ছাড়ার ব্যবস্থা করে দেই। এখন আবার সমস্যা হচ্ছে তাই বিষয়টি নিয়ে অতি শীঘ্রই বসে সমাধান করবো।
বিএফডিসি লংগদু শাখার উপ-কর্মকর্তা আকবর হোসেন বলেন, সরকারি জায়গায় থাকা নালার পানি প্রবাহে বাঁধা দিতে বাঁধ নির্মাণ করা সম্পূর্ণ আইন বিরোধী কাজ। উপজেলা প্রশাসনকে এবিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকিব ওসমান বলেন, সরকারি নালায় ব্যক্তিগতভাবে এভাবে বাঁধ নির্মাণের কোন সুযোগ নেই। বাঁধ নির্মাণের ফলে কৃষকদের ধানের জমিতে সেচ দিতে পারছে না। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক বলছেন, পাহাড় থেকে প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট হওয়া এই নালাই এলাকার ফসলী জমির পানির একমাত্র উৎস। এভাবে প্রাণনাশী তামাক চাষের জন্য অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রেখে দেশের কৃষি খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তামাকের চেয়ে ধান, গমের চাষে গুরুত্বারোপ করা উচিত। এর একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা হোক। পাশাপাশি সরকার যেন পানি সংকট নিরসনে ডীপ সিস্টেমের মাধ্যমে একটা স্থায়ী সমাধান করে দেন, যাতে করে এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার সাথে কৃষকদের জন্য ফলপ্রসূ হয়।