কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। পা দিয়ে এক মিনিটে সর্বোচ্চ ২০৮বার ফুটবল ট্যাপ করে রেকর্ড অর্জন করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লিখিয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি সম্প্রদায়ের প্রেন চ্যুং ম্রো। পার্বত্য জেলা বান্দরবানে এই প্রথমবার সাফল্য পেয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখালেন এই তরুণ,আর তার এই সাফ্যলে উচ্ছস্বিত তার পরিবার এবং বন্ধুমহল ।
বান্দরবান সদর উপজেলার সুয়ালক ইউনিয়নের লামার পাড়ার বাসিন্দা প্রেন চ্যুং ম্রো। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে অধ্যায়নরত। পড়ালেখার পাশাপাশি শখ ফুটবল খেলা আর এই শখকে সাফল্য এনে দিতে আবেদন করেছিল গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বান্দরবানের সুয়ালক ইউনিয়নের লামার পাড়ার একটি জরার্জীণ কাঁচা ঘরে প্রেন চ্যুং ম্রো এর বসবাস। পিতা ও মাতা মারা গেলেও ২ভাই আর ৩ বোন এর সংসারে যৌথভাবে বসবাস করছে প্রেন চ্যুং ম্রো। উন্নত শিক্ষার জন্য বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করলেও বেশিরভাগ সময়ই তার কেটেছে বান্দরবানে। ২০১৫ সালে সুয়ালক ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পর ২০১৭ সালে বান্দরবান সরকারী কলেজে থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করেই উন্নত শিক্ষার জন্য ১৭-১৮ সেশনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে ভর্তি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি ফুটবল খেলায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন জেলার ঘুরে বেড়ায় প্রেন চ্যুং ম্রো।
প্রেন চ্যুং ম্রো জানান, নিজের ব্যক্তিগত তথ্য আর কম সময়ে ফুটবল ট্যাপ করার ফুটেজ ও ছবি ইমেইলে পাঠায় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। আর সবকিছু যাচাই বাচাই শেষে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম ওঠে আমার। বর্তমানে ১মিনিটে সর্বোচ্চবার (২০৮ বার) ফুটবল ট্যাপ করার রেকর্ডটিও এখন আমার দখলে। আর এই সাফ্যলে ২নভেম্বর গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে আমাকে পাঠানো হয়েছে স্বীকৃতিমমূক একটি ই-মেইল।
প্রেন চ্যুং ,ম্রো জানান, এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল কুমিল্লার কনক কর্মকার নামে এক যুবকের দখলে, কনক কর্মক ফুটবল ট্যাপ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ নাম লিখিয়েছিল। আর কনক কর্মকারের এই রেকর্ডটি দেখার পর থেকে তা ভাঙার মনস্থির করে কঠোর অনুশীলনে নেমে পড়ি, কঠোর অনুশীলনে আসে সাফল্য আমার নাম উঠে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে।
প্রেন চ্যুং ম্রো আরো জানান, চলতি বছরে ৩ মে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এর ‘মোস্ট ফুটবল (সকার) টু ট্যাপস ইন ওয়ান মিনিটস’ ক্যাটাগরিতে কুমিল্লার কনক কর্মকারের রেকর্ড ভঙ্গ করার আবেদন জানিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। দীর্ঘ ৬ মাসেরও বেশি সময় পর যাচাই বাচাই করে বুধবার (২ নভেম্বর) তারা রেকর্ডটির (১ মিনিটে ২০৮বার) স্বীকৃতি দেয় এবং গিনেসের ওয়েবসাইটে রেকর্ডটি অন্তর্ভুক্ত করে আমায় একটি মেইল দেয়, তবে স্বীকৃতিপত্র হাতে পেরে আরো কিছুদিন সময় লাগতে পারে।
প্রেন চ্যুং ম্রো জানান ,আমাদের পরিবারের অবস্থা তেমন ভালো নয়। ছোটকাল থেকে মা প্যারালাইসিস হয়ে ঘরে অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকতো, আর মাকে সেবা করার জন্য বেশিরভাগ সময়ই আমাকে ঘরে থাকতো হতো। শিক্ষা জীবনের পাশাপাশি ছোটকাল থেকে ভালো ফুটবলার হিসেবে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলাম , কিন্তুু পরিবারের টানে সেই দক্ষতা না আসলে ও অবশেষে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এর ‘মোস্ট ফুটবল (সকার) টু ট্যাপস ইন ওয়ান মিনিটস’ ক্যাটাগরিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখাতে পারলাম এটা আমার ও এলাকাবাসী এবং দেশবাসী সকলের সাফল্য । প্রেন চ্যুং ম্রো আরো জানান,আগামীতে লেখাপড়া শেষ করে জাতীয় ফুটবল দলে যুক্ত হয়ে দেশী বিদেশী বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে অংশ নিয়ে সাফ্যল্যে অর্জনের প্রত্যাশায় অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমি আগামীতে এই রেকর্ড ভেঙ্গে আরো নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করবো সে প্রত্যাশায় কাজ করছি।
এদিকে প্রেন চ্যুং ম্রো এর এমন সাফল্যে খুশি তার পরিবার ও বন্ধুমহল।
প্রেন চ্যুং ম্রো এর বড়ভাই ক্রং পং ম্রো জানান,ছোটকাল থেকেই প্রেন চ্যুং ম্রো ছিল খুবই পরিশ্রমী । তাকে যে দায়িত্ব দেয়া হতো সে তা সফলভাবে পালন করতো। তার মধ্যে সবসময় চ্যালেঞ্জ থাকতো কিভাবে নিজেকে জয়ী করা যায়। ক্রং পং ম্রো জানান,পার্বত্য জেলার মধ্যে এই প্রথমবারের মত কোন ক্ষুদ্র নৃগোষ্টি পরিবারের সন্তান এমন গৌরব অর্জন করেছে , আর সেটা আমার আপন ছোট ভাই জেনে আমি খুবই খুশি। তার যে প্রতিভা রয়েছে তাতে সে আগামীতে আরো বড় অর্জন নিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করেন ক্রং পং ম্রো।
প্রেন চ্যুং ম্রো এর সহপাঠী খুশীলব রয় জানান, প্রেন চ্যুং ম্রো খুবই সাহসী এবং প্রতিভাবান খেলোয়াড়। তার এই সাফল্য আমাদের সকলের জন্য প্রশংসনীয়।
এদিকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের প্রত্যন্ত এলাকার ক্ষুদ্র নগেৃাষ্টি পরিবারের সন্তান প্রেন চ্যুং ম্রো এর এমন সাফ্যল্যে এলাকার জনপ্রতিনিরা জানিয়েছে অভিনন্দন আর তাকে আগামীদিনে এগিয়ে যেতে আশ্বাস দিয়েছে সহায়তার। সুয়ালক ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান উক্যনু মার্মা বলেন,আমাদের এলাকার সন্তান প্রেন চ্যুং ম্রো কে নিয়ে আমরা সবাই গর্বিত,তাকে আগামীতে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।