ষ্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর জুম্ম জনগনের স্বাধীকার, আতœ নিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকার চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো চুক্তি স্বাক্ষরকারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বকে ধব্বংস করার না পায়তারা করছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও নেতাকর্মীদের উপর হামলা করছে।
তিনি আরো বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২৫ বছর হলো, এসময় এসে সরকারের কাছে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি করার কথা না, তবুও আমরা শাসিত ও শোষিত হিসাবে বিশেষ একটা বাস্তবতায় সরকারকে বলতে চাই, সরকার কি চুক্তি বাস্তবায়ন করবে, নাকি কি করবে না, তার একটা রোড ম্যাপ ঘোষণা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অরাজকতা চলছে প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর যে অত্যাচার দমন পীড়ন চালাচ্ছে সেটি অবসান করার জন্য। নতুবা আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।
পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ৩৩তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) এসব কথা বলেন।
‘‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠায় পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন জোরদারকরণে ছাত্র সমাজ অধিকতর সামিল হউন’’এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী পরিষদ (পিসিপি)’র ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ছাত্র-জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
শক্রবার ( ২০মে২২) সকাল ১০টায় রাঙামাটি শহরের জিমনেসিয়াম মাঠ প্রাঙ্গণে পিসিপি’র উদ্যোগে আয়োজিত এই ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২৬তম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের অনুষ্ঠানমালার শুভ উদ্বোধন করেছেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবি অধ্যাপক মংসানু চৌধুরী। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
এছাড়াও অতিথি ও বক্তা হিসাবে ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরিণ কণা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবি অধ্যাপক অংসানু চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল কবীর, শিক্ষবিদ শিশির চাকমা, জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক সাংসদ উষাতন তালুদার, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, সমাজ তান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহ-সভাপতি রায়হান উদ্দিন, আদিবাসী যুব ফোরামের সভাপতি টনি ম্যাথিউ চিরান প্রমুখ। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন, পিসিপি’র সভাপতি সুমন মারমা।
অনুষ্ঠানে সন্তু লারমা আরো বলেন, আবারো ধাপে ধাপে পার্বত্য অঞ্চলের বুকে জাতিগত শোষণ নিপীড়ন বঞ্চনা সর্বক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে। আমরা এখন এমন একটা সমাজে বসবাস করছি যেখানে হাত পা বাঁধা কথা বলার সুযোগ থাকলেও কথা বলতে পারছি না। সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করবে কি করবে না তার উত্তর পাহাড়ী জনগণ জানতে চায়। পাহাড়ে একের পর এক সংকট বাড়ছে, আর সরকারকে ভুল বোঝানো হচ্ছে।
সভায় বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অবস্থা ভয়াবহভাবে বিরাজ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক জীবন এক অলিখিত কারাগারে বাস করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর হতে চললেও সরকার চুক্তির মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ অবাস্তবায়িত অবস্থায় রেখে দিয়েছে। পার্বত্য চুক্তির দুই-তৃতীয়াংশ ধারা অবাস্তবায়িত রেখে দিয়ে সরকার উল্টো ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে বলে অব্যাহতভাবে দেশে বিদেশে অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, জনসংহতি সমিতির সদস্য ও সমর্থকসহ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে সোচ্চার ব্যক্তি ও সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘অস্ত্রধারী দুর্বৃত্ত’ হিসেবে পরিচিহ্নিত করার জন্য ব্যাপক অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীরা রাষ্ট্রীয় নানা বঞ্চনা ও নিপীড়নের শিকার। রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের ফলে ক্রমান্বয়ে অস্তিত্ব হুমকিতে থাকা জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব রক্ষার দায়িত্ব ছাত্রসমাজকে নেওয়ার আহব্বান জানানা হয়।
পরে আলোচনা সভাশেষে, একটি র্যালী বের করা হয়। র্যালীটি শহরের জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণ হতে শুরু হয়ে, শহরের হ্যাপি মোড়, বনরুপা হয়ে আবার জিমনেশিয়াম গিয়ে শেষ হয়।