হিমেল চাকমা, কক্সবাজার থেকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন রক্ষা করতে হলে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষকে সম্পৃক্ত করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। না হলে বন রক্ষা করা সম্ভব হবে না। বন রক্ষায় শুধু বন বিভাগকে দায়িত্ব দিলে হবে না।
পরিবেশ রক্ষার কাজটি এখন নিজের দায়িত্ব মনে করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। তবেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভুমি রক্ষা করা সম্ভব। কথাগুলো বলেছেন, রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী।
সোমবার সকালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে তিনদিন ব্যাপী “পার্বত্য চট্টগ্রাম জলবায়ু বিপন্নতা, সচেতনতা সিদ্ধান্ত গ্রহণ” বিষয়ক রাঙামাটি জেলার জনপ্রতিনিধি, প্রথাগত প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনদিন ব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অংসুই প্রু চৌধুরী।
অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে জলবায়ু পরিবর্তনে বিদাপন্ন বাংলাদেশে যে ৬টি এলাকার নামের কথা বলা হচ্ছে তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শীর্ষ অবস্থানে আছে। বলা হচ্ছে এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম সবচেয়ে বেশি ঝুকিপুর্ণ এলাকা। এটি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ভাবতে হবে।
অপরিকল্পিত ও দুরদর্শীতের অভাবে আমরা পরিবেশের অনেক ক্ষতি করে ফেলেছি। পেছনে তাকানোর সুযোগ আর নেই। পাহাড়ে বন উজাড় হয়েছে। পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যার নেতিবাচক ফল আজ আমরা পাচ্ছি।
উন্নয়ন হতে হবে পরিবেশ বান্দব। তবে এ উন্নয়ন অবশ্যই পরিবেশকে ঠিক রেখে করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন ভুমির উপর সারা বাংলাদেশ নির্ভর করে আছে। বিশ্ব জলবায়ু তহবিল থেকে বাংলাদেশকে যে তহবিল দেওয়া হয় তা অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামের বন সংরক্ষণের কাজে ব্যয় করতে হবে। এ তহবিল অন্য জেলায় দেওয়া হলে হবে না। এ জলবায়ু তহবিল তিন পার্বত্য জেলাকে গুরুত্ব দিয়ে এ জেলাগুলোতে বন্টন করতে হবে।
ইউএনডিপির ফরেস্ট এ্যান্ড ওয়াটারশেড ম্যানেজম্যান্টের চীফ টেকনিকেল স্পেশালিস্ট রমা শর্মা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার বা পুনজ্জীবিত করা এখনো সম্ভব। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের বন উজার হলেও ভুমিগুলো রয়ে গেছে। এসব ভুমিতে যখন বসতি গড়ে উঠবে তখন বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার বা পুনজ্জীবিত করা কঠিন হবে। এজন্য স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বন উজাড় হলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে এটা পরিস্কার। পার্বত্য চট্টগ্রামের অপরিকল্পিত উন্নয়নে বন পানির উৎস ধংস হয়ে গেছে। এখানে যেখানে সেখানে বহুতল ভবন গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে পর্যটকরা বেড়াতে আসে প্রকৃতি দেখতে। আদিবাসীদের বৈচিত্রময় সংস্কৃতি দেখতে আসে। কিন্তু আমরা সেটির কথা ভুলে বন উজাড় করে উচু উচু দালান করার কথা ভাবছি। চিম্বুক পাহাড়ে যা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে তার একটি প্রমাণ। কর্মশালায় রাঙামাটি জেলা পরিষদের একাধিক সদস্য, বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান, হেডম্যানরা অংশ নিচ্ছেন।