সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। বাংলাদেশে বিদ্যমান বন ও পরিবেশ আইনের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের জীববৈচিত্র সুরক্ষায় বিধি প্রবিধি প্রণীত হলেও তার সুষ্ঠু প্রয়োগ হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রম না থাকা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে গঠিত প্রতিষ্ঠান সমূহকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে ক্ষমতায়ন করা সম্ভব না হওয়ায় এর সুযোগ নিচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহল।
পার্বত্য জনপদ খাগড়াছড়িতে বিগত ৫-৬ বছর ধরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বনজ সম্পদ ধ্বংস করে চলছে ৪০ টির অধিক ইটভাটা। এ ছাড়া বনের কাঠ পুড়িয়ে তামাক চুল্লি, অবৈধ স’মিল, অপরিকল্পিত বনায়ন, ভূ-গর্ভ থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন। থেমে নেই মাতৃ বৃক্ষ নিধন ও অমূল্যবান বনজ সম্পদ পাচারও।
এতো কিছুর পরও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ হচ্ছে না বলে অভিযোগ নাগরিক সমাজের। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন ভিন্ন কথা।
খাগড়াছড়ির মাতৃবৃক্ষ ও অর্কিড সংরক্ষক সাথোয়াই মারমা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ও জঙ্গল থেকে কাঠ পাচার চক্রের সূত্র ধরে দীর্ঘ বছর ধরে একটি মহল মূল্যবান অর্কিড ও মাতৃবৃক্ষ ধ্বংস করছে। তাদের হাত থেকে প্রকৃতিকে রক্ষা করা না যায় এক সময় জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়বে।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা তৃণমূল নামে একটি উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রিপন চাকমা জানান, খাগড়াছড়ি তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক বনাঞ্চলের প্রতি দিন দিন গুরুত্ব বাড়ছে। এতে করে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে সেগুন, রাবার ও ফলদ বাগান করা হচ্ছে। কিন্তু সেগুন, রাবার বাগান পরিবেশের জন্য কতটুকু সহিঞ্চু তার বাস্তবতা মূল্যয়ন করা হচ্ছে না। এতে করে প্রাকৃতিক যে পানির উৎস তা দিনে দিনে ধ্বংস হচ্ছে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বাপা’র খাগড়াছড়ির সমন্বয়ক গফুর তালুকদার বলেন, পাহাড়ে প্রতিবছর ইট ভাটা ও তামাক চুল্লিতে বনজ সম্পদ উজাড় করে কাঠ পুড়িয়ে জ্বালানোর সংস্থান করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বায়ূ দূষণ বাড়ছে অন্যদিকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিলীন হচ্ছে। আইনের অজুহাতে এখানকার ইটভাটাগুলোর পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না অন্যদিকে বন্ধ করা হচ্ছে না। এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধনই বড় সমস্যা। পাহাড় কাটা, নদী খাল দূষণ ও ভূগর্ভস্থ থেকে বালু ও পাথর উত্তোলন চলছে। এতে করে প্রতিবছর পাহাড় ধস, ভূমি ক্ষয়সহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে খাগড়াছড়ি।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে গঠিত স্থানীয় সরকার প্রশাসনে বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় আইন প্রণীত হয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে ক্ষমতায়ন করা যায়নি। এতে করে আইনের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন আর দূর্বলদের ওপর আইনের নাম মাত্র প্রয়োগ দেখাচ্ছে প্রশাসন।
১৯৮৫ সালের হিসেব মতে খাগড়াছড়ি জেলায় কাগজে পত্রে ৮ হাজার ৩ শ ৫৮ একর বন ভূমি রয়েছে বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। তবে মাঠপর্যায়ে এখন কত পরিমাণ বন ভূমি রয়েছে তার সঠিক কোন তথ্য উপাত্ত নেই। বনজ সম্পদ সুরক্ষায় নিজের সংকটের কথা জানিয়ে খাগড়াছড়ি বন বিভাগের উপ বন সংরক্ষক মো. সারওয়ার আলম বলেন, সীমিত জনবল ও দূর্গম অঞ্চলে কাজ করার মতো সুযোগ না থাকায় কাজ করা কষ্টসাধ্য। তারপর বনজ সম্পদ সুরক্ষায় কাজ করছে খাগড়াছড়ি বন বিভাগ। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বন আইনে ২৭ টি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইটভাটা কাঠ পুড়ানোর দায়ে জরিমানা করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ^াস জানান, পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ঘটলে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। ইটভাটা গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার পরামর্শ জেলা প্রশাসকের।