সোমবার | ১৪ অক্টোবর, ২০২৪
একান্ত সাক্ষাতকারে

নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নয়, প্রতিযোগিতা হবে আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে : ওয়াদুদ ভুইয়া

প্রকাশঃ ২৯ মার্চ, ২০১৮ ১১:৫৮:১৩ | আপডেটঃ ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:৫৮:২০  |  ৭১০২

ওয়াদুদ ভুইয়া সাবেক সংসদ সদস্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি। পাহাড়ের বাঙ্গালীদের মধ্যে নেতৃত্বের যে সংকট চলছে তার শুন্যতা পুরনের চেষ্টা করছেন। তার এলাকার পাশাপাশি তিনি রাঙামাটি জেলার বাঙ্গালীদের একটি অংশের কাছে বেশ জনপ্রিয় নেতা।  ওয়াদুদ ভুইয়া ১৯৬৫ সনের ৫ জানুয়ারী তিনি খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৮০ সনে রামগড় সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। তার উচ্চতর লেখা পড়া শেষ করেন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শোনার সময় ১৯৯৮৬-৮৭সনে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহবায়ক ছিলেন। ১৯৮৯ সনে খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে তিনি সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওয়াদুদ ভুইয়া ষষ্ঠ, সপ্তম, ৮ম নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছেন এবং দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  জেলে থাকার কারনে ২০০৯ সনের নবম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারেননি। সর্বশেষ ২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন না করার কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নেননি। গতবার বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তিনি পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩ বছর জেলে থাকার পর ২০০৯ সনের মে মাসে জামিনে মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পর ২/৩ এলাকায় গেলেও প্রশাসনের বাঁধার কারনে এলাকায় থাকতে পারেননি। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে নানাভাবে সর্ম্পক গড়ে তোলে দলকে সুসংগঠিত করেছেন। বর্তমানে তিনি বেশীর ভাগ সময় এলাকায় অবস্থান করছেন এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত জোট থেকে খাগড়াছড়ি আসনে অংশ গ্রহন করবেন।
ওয়াদুদ ভুইয়া পাহাড়ের জনপ্রিয় অনলাইন দৈনিক সিএইচটি টুডে ডট কমের ৪ বছর পেরিয়ে ৫ বছর  পর্দাপন উপলক্ষে একান্ত সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন আগামীতে নির্বাচিত হলে পাহাড়ী বাঙ্গালী সবাইকে সাথে নিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন। সাক্ষাতকারটি গ্রহণ করেছেন  সিএইচটি টুডে ডট কম এর সম্পাদক ফজলুর রহমান রাজন। নিচে তার সাক্ষাতকারটি হুবহু তোলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: কেমন আছেন?
ওয়াদুদ ভুইয়া : ভালো আছি।

প্রশ্ন: আপনার ছাত্রজীবন ও রাজনৈতিক জীবন সর্ম্পকে যদি কিছু বলেন, রাজনীতিতে কিভাবে জড়ালেন?
ওয়াদুদ ভুইয়া: আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার দেখা করার সৌভাগ্য হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের  পরে উনি ফেণীর জিয়াউর রহমানের সাথে আমার প্রথম দেখাটা হয়, ফেণীর শুভপুর ব্রিজের কাছে। তিনি সেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধের স্মৃতিগুলো দেখতে এসেছিলেন। আমি সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। স্বাধীনতা যুদ্ধে তখন আমরা যার নাম শুনেছিলাম তিনি জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান শুভপুর ব্রিজের কাছে আসার পর  তখন আমি উনার কাছে ছোট শিশু হিসেবে বেশ আদর পেয়েছি, তখন থেকে উনার প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ছিল। এখান থেকেই প্রথম সূচনা। পরে আমি যখন ১৯৮০সালে এসএসসি পরীক্ষা দেই তখন তিনি রামগড় এসেছিলেন একটা সমাবেশে, সেই সমাবেশে রাঙামাটির তৎকালীন ডিসি আলী হায়দার সভাপতিত্ব করেন। এই সভায় প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। আমি সেই সভা উপস্থাপনা করি। তখন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু সেই দিনের সভায় আমি রামগড়ে যেহেতু কলেজ ছিলো না, তাই আমি সভায় কলেজ নির্মানের দাবি জানালাম। তারই প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসককে ৩ মাসের মধ্যে কলেজ নির্মানের নির্দেশ দেন জিয়াউর রহমান। সে সময় তিনি বলেন, আগামী বছরই আমি কলেজ চালু দেখতে চাই ও উদ্বোধনও করতে চাই। ফলে রামগড় সরকারি কলেজ মর্নিং শিফট চালু হয়েছিল। তাই আমি চট্টগ্রাম ভর্তি না হয়ে আমার বাড়ীর পাশে যে রামগড় কলেজ নির্মাণ হলো সেখানে ভর্তি হলাম। আর সেই থেকে জিয়াউর রহমানের আদর্শ উপর ভিত্তি করে, তার আদর্শকে ভালোবেসে রাজনীতিতে জড়ালাম এবং কলেজে পুরাদমে রাজনীতি শুরু করলাম।

কলেজে পড়ালেখা কালে আমি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। তারপর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হলাম, পরে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। সেখানে রাজনীতিতে ছাত্রদলের সদস্য থেকে শুরু করে আহ্বায়কও হলাম। পরে আমি আমার নিজ বাড়ী খাগড়াছড়িতে এসে রাজনীতি শুরু করলাম।  

প্রশ্ন: আগামী সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রস্তুতি কেমন,বিজয়ের ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী? নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলো ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে কিনা?  

প্রশ্ন: নির্বাচনে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে তখন আমরা নির্বাচন করবো এবং সুষ্ঠ নির্বাচন হলে আমরা শতভাগ বিজয় অর্জন করব। আঞ্চলিক দলগুলো নির্বাচনে ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে। কারণ পাহাড়ের রাজনীতিতে তারা মূল দল হিসেবে আতœপ্রকাশ করে ফেলেছে ইতিমধ্যে। এর জন্য আমি সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করব। তাদের কারণেই পাহাড়ের সশস্ত্র গ্রুপগুলো আতœপ্রকাশ করে মাথাছাড়া দিয়ে উঠছে। জাতীয় দলগুলোর অনৈক্যের সুযোগ নিচ্ছে আঞ্চলিক দলগুলো।

প্রশ্ন: সরকার বলছে, আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী তাদের অধীনে হবে সেক্ষেত্রে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ হওয়ার ব্যাপারে আপনারা কতটুকু আশাবাদী?

ওয়াদুদ ভুইয়া: বর্তমান সরকার ২০১৪সালেরর ৫ই জানুয়ারীর মত আবার নির্বাচন তারা করতে চাচ্ছে। আমরা আগের সেই নির্বাচন করব না, মানবো না এবং শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচনে যাব না। বর্তমান সরকারের অধীনে আমরা এইবার কোন নির্বাচন করতে দিব না। দেশে বিদেশে জাতীয়, আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন সরকারকে করতে হবে। যদি তারা ৫ই জানুয়ারীর মত নির্বাচন করতে চায় তাহলে দেশে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে সেই নির্বাচন প্রতিহত করবো।

প্রশ্ন: ১০ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে , দলের নেতা কর্মীরা কেমন উজ্জীবিত? শোনা যায়, খাগড়াছড়ি বিএনপিতে গ্রুপিং আছে বিষয়টি কতটুকু সত্য?


ওয়াদুদ ভুইয়া: ১০বছর ধরে বিএনপি শুধু ক্ষমতার  বাইরে নয়, তার পাশাপাশি মামলা হামলায় জর্জরিত।  এরপরও বিশেষ করে আমার এলাকার নেতাকর্মীরা ভীষণ রকমের উজ্জ্বীবিত ও চাঙ্গা এবং আমার এলাকায় নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত গতিতে নির্বাচন করবে।

খাগড়াছতিতে বিএনপিতে কোন গ্রুপিং নাই। তবে নির্বাচনে অনেকে মনোনয়ন চাইতে পারে। আমি এটিকে গ্রুপিং মনে করি না, এটি একটি প্রতিযোগিতা। মনোনয়ন চাওয়াটা কোন গ্রুপিং না। নির্বাচনে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন চাইতে পারে। তাই এটিকে অনেকে গ্রুপিং মনে করছে, কিন্তু আমি এটাকে গ্রুপিং মনে করি না।

প্রশ্ন: ওয়ান এলেভেনের সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন, এখনো অনেকগুলো মামলায় হাজিরা দিচ্ছেন, এক সময় ঢাকা থাকলেও বর্তমানে বেশিরভাগ সময় খাগড়াছড়িতে থাকছেন, এতে দলের নেতা কর্মীরা কতটুকু প্রাণ ফিরে পেয়েছে? দলীয় কর্মসুচীগুলোতে কেমন অংশ গ্রহণ করছে, আপনার নামে অনেকগুলো রাজনৈতিক মামলা রয়েছে,  নির্বাচনের সময় মামলাগুলোতে জামিনে থেকে নির্বাচন করতে পারবেন বলে কি মনে হয়?

ওয়াদুদ ভুইয়া: আমি আমার সব মামলায় জামিনে আছি। এই মামলাগুলো আমার নির্বাচনে কিংবা আমার কার্যক্রমে  কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে না। সরকারদলীয় লোকেরা আমাকে অনেক দিন এলাকায় থাকতে দেয়নি । তখনও  আমার নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা ছিল, এখনো আছে। এখন আমি আমার নিজ এলাকায় রয়েছি তাই নেতা কর্মীরা আমি মনে করি আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বীবিত ও উৎসাহিত। কেন্দ্র ঘোষিত সকল জাতীয় ও স্থানীয় সকল কর্মসূচি একমাত্র খাগড়াছড়িতে ঠিকমত আমাদের নেতা কর্মীরা পালন করে, আমার জেলায় একটা কর্মসূচিও বাতিল হয়নি। আমরা সরকারের সব বাঁধা উপেক্ষা করে সকল কর্মসূচি পালন করছি।  

প্রশ্ন: পার্বত্য শান্তি চুক্তি নিয়ে আপনাদের বর্তমান অবস্থান কি?
ওয়াদুদ ভুইয়া: শান্তি চুক্তি নিয়ে বিএনপির অবস্থান আগে যেমন ছিল এখনো তেমনি আছে। আমরা দলের অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকায় শান্তি চুক্তি নিয়ে আপাতত কিছু ভাবছি না। তাহলে পাহাড়ীরা বিএনপিকে কিভাবে গ্রহন করবে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি পাহাড়ীদের বেশীর ভাগ এই চুক্তিকে মানে না, আমরাও মানি না। তাই আমি মনে করি, বিএনপির সাথে পাহাড়ীদের রাজনীতিতে কোন সমস্যা হবে না।

আমরা এই শান্তি চুক্তি মানি না কারণ এই চুক্তি সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। এই চুক্তি জাতিতে জাতিতে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, বৈষ্যম সৃষ্টি করেছে। এই চুক্তিতে সকল সম্প্রদায়ের অধিকার সংরক্ষিত হয়নি। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব অনেকটা হুমকির মুখে তাই আমরা এটার বিরোধীতা করেছি।
যেমন এই চুক্তি বলা হয়েছে, কোন ভূমি অধিগ্রহন করতে হলে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়াম্যানের অনুমতিক্রমে করতে হবে। কিন্তু আমি মনে করি যে, রাষ্ট্রের স্বার্থে রাষ্ট্র যে কোন জায়গা নিতে পারবে কিন্তু এখানে আঞ্চলিক পরিষদের অনুমতি লাগবে কেন? আমাদের দেশের সরকার বিদেশের সাথে বিভিন্ন সম্পদ নিয়ে চুক্তি করতে পারবে কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলের কোন খনিজ সম্পদ নিয়ে সরকার চুক্তি করতে পারবে না। আঞ্চলিক পরিষদের অনুমোদন নিয়ে করতে হবে। এতে প্রমাণিত হয় যে, পার্বত্য অঞ্চলের উপর সরকারের কোন অধিকার নেই। তাহলে সরকারের যদি অস্তি¡ত্ব না থাকে তাহলে এটি তো সরাসরি সংবিধানের পরিপন্থি হয়ে গেল এবং সেই কারণে আমরা হাইকোর্টে মামলা করেছিলাম। হাইকোট আঞ্চলিক পরিষদকে বাতিল করেছে এবং এই মামলাটিকে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে। বর্তমানে তা চলমান বয়েছে। আপিলে যদি আমরা জয়লাভ করি তাহলে শান্তি চুক্তি আর থাকবে না।

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক দল জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউপি নির্বাচনে পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেছে, এটি জাতীয় রাজনীতির জন্য কোন অশনি সংকেত কিনা? নাকি জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা?

ওয়াদুদ ভুইয়া: এটি সরকারসহ জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা। সরকারের ব্যর্থতার কারণেই পাহাড়ের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে। তা না হলে তাদের দিনে দুপুরে তারা অবৈধ অস্ত্র নিয়ে কিভাবে বিচরণ করে, নির্বাচনের সময় অবৈধ অস্ত্র ধরে ভোটারদের বাধ্য করে তাদের প্রার্থীকে ভোট দিতে, এছাড়া প্রকোশ্যে অস্ত্রের মুখে চাঁদাবাজি করা এসবের জন্য সরকারই দায়ী, সরকার যদি এদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় না দিত তাহলে এরা এসব কিছু পারত না। সশস্ত্র গ্রুপগুলো সরকারের আশ্রয় প্রশ্রয়ে আছে বলেই আজকে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নয়, আমাদের প্রতিযোগিতা হবে আঞ্চলিক দলগুলোর সাথে। তাই আমি মনে করি পাহাড়ে  জাতীয় নির্বাচনে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব পড়বে আর এজন্য দায়ী থাকবে জাতীয় দলগুলো ও সরকার।  

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে খোদ আওয়ামীলীগ মাঠে নেমেছে, এতে বিএনপির অবস্থান কি?

ওয়াদুদ ভুইয়া: আমরা এই ইস্যুতে বরাবরই মাঠে আছি সবসময়। আমরা বিভিন্ন জায়গায় সভা, বিভিন্ন সেমিনারে সব সময় দাবি করে আসছি পাহাড় থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হোক। অবৈধ অস্ত্র বহনকারীদের গ্রেফতার করা হোক। অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠনের নেতাদের গ্রেফতার করা হোক, তারা কি করে ঢাকায় আরাম আয়াশে থাকে, তারা কি করে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুমকি দেয়। অবৈধ অস্ত্র বহনকারী, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায়কারীরা যে সব অন্যায় কাজ করছে এসবের জন্য সরকার দায়ী, না হলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?  প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে এরা এইগুলো করছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিস্কার, আমরা চাই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হোক সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার হোক। শান্তি চুক্তির পর সন্ত্রাসীরা যদি সব অস্ত্র জমা দিয়ে থাকে তাহলে পাহাড়ে অস্ত্র আসে কোথা থেকে? আমার মনে হয় প্রশাসন এদের সহযোগিতা করছে, কারন সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো বছরে হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে সেই চাঁদার ভাগ হয়ত প্রশাসনের কেউ কেউ পায়, না হলে ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?

প্রশ্ন: পাহাড়ে বাঙালী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?

ওয়াদুদ ভুইয়া: পাহাড়ে যে বাঙালী সংগঠনগুলো রয়েছে সেগুলো বেশীর ভাগই ভুইফোড়, এগুলোর কোন কাঠামো, জনভিত্তি নাই। মৌলিক অর্থে আন্দোলন সংগ্রামে জনগণকে সম্পৃক্তকরণে ব্যর্থ হয়েছে, তারা কেবল কে কিভাবে শিরোনামে আসবে ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করে। বাঙালী সংগঠনগুলোর পেছনে কোন জনবল নাই, শুধু একটি মাত্র সংগঠন রয়েছে সেটি হলো সমঅধিকার আন্দোলন। এই সংগঠনটাকে সবাই চিনে এবং সবাই সম্পৃক্ত আছে। কিন্তু এই সংগঠনটা কে সরকার আগাতে দিচ্ছে না। সরকার এবং সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি এই সংগঠনকে গলা চিপে ধরেছে। এই সংগঠনকে বাদ দিলে আর কোন সংগঠন নাই যে বাঙালী সংগঠন বলা যায়। বরং এদের বলা যায় বাঙালী চাঁদাবাজি সংগঠন। এরা বাঙালী অধিকারের নামে চাঁদা সংগ্রহ করে। পেট চালায়, পরিবার  চালায়। এদের কেউ করে জামাত, কেউ করে বিএনপি কেউ আওয়ামীলীগ।


প্রশ্ন: বিএনপি ক্ষমতায় আসলে পাহাড়ী বাঙালী সর্ম্পক উন্নয়নে কি উদ্যেগ নিবেন?

ওয়াদুদ ভুইয়া: আমরা অবশ্যই পরস্পরের প্রতি সমঝোতামুলক, আস্থা বিশ^াস স্থাপন করে একটি সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করবো, যাতে করে কোন সম্প্রদায় জাতিগোষ্ঠী  উন্নয়ন বঞ্চিত না থাকে।  এখন জাতি সম্প্রদায় দল দেখে উন্নয়ন করা হচ্ছে, আমি মনে করি সব সম্প্রদায় যখন উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে তখন তারা মূল ¯্রােতধারার সাথে সম্পৃক্ত হবে।

পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রধারীরা থাকলে বাংলাদেশের মানচিত্র, পতাকা, হুমকির মুখে পড়বে। এখনি সময় সরকার এবং তাদের এজেন্সিদের যাতে অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়। তা না হলে সরকার যদি এই চাঁদাবাজি সংগঠনগুলোকে আশ্রয় প্রশয় দেয় তাহলে পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এখনি সময় বাংলাদেশকে বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমা রেখার মধ্যে রাখতে হলে পাহড়ের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর লাগাম টেনে ধরতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, চাঁদাবাজি বন্ধ এবং মানুষের জীবনের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

প্রশ্ন: আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
ওয়াদুদ ভুইয়া: আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।


এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions