সাইকেলে ভারতের ১০ রাজ্য ঘুরলো বাংলাদেশী যুবক
প্রকাশঃ ১৩ মার্চ, ২০২৪ ১২:৪১:৩৩
| আপডেটঃ ২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৫৫:২৫
|
৯৯১
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। কথায় আছে ‘ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয়’। সেই অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন রাঙ্গামাটির যুবক বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। ৪০ দিনে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়ানোর এবার ভারতের ১০ রাজ্য ঘুরে এলেন সেই বীর কুমার। স্বপ্ন ভারতের ২৯ রাজ্যই সাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়াবেন তিনি। তবে তাঁর এই দীর্ঘযাত্রা মসৃণ ছিল না; খেয়েছেন ঘুমিয়েছেন রাস্তায় তাবু করে। কখনো কখনো ভারতের বাসিন্দারা ভালোবেসে তাকে দিয়েছেন আশ্রয়, সংবর্ধণা আর সম্মানের ফুলঝুড়ি। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন রাঙামাটির প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। পরিচয় করিয়েছেন নিজ জনগোষ্ঠী তঞ্চঙ্গ্যাদের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, তুলে ধরেছেন বাংলাদেশকে।
রাঙামাটির যুবক বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জেলার কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নের কুক্যাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা সুশীল তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে। বীর কুমার পেশায় একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী। সুশীল তঞ্চঙ্গ্যা-কুশিক্কো তঞ্চঙ্গ্যা দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট বীর কুমার। পাঁচ ভাই এক বোনের মধ্যে কনিষ্ঠ বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা স্থানীয় আগুনিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পঞ্চম শ্রেণী পাস করেছেন। এরপর ওয়াগ্গা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি) থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা পাস করেন। এরপর ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল ইউভার্সিটি থেকে ইউনিভাসির্টিতে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি সম্পন্ন করেছেন ২০২১ সালে। বীর কুমারের দুঃসাহসিক যাত্রায় প্রথম ধাপ ২০২৩ সালের ৮ জুন থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত ৪০ দিন সাইকেল চালিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করে তিনি।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ৯০ দিনের সফরের জন্য ভারতে উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন সাইক্লিস্ট বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা। ১৬ ডিসেম্বর থেকে সড়ক পথে বাসযোগে ভারতের কলকাতায় পৌঁছান। এরপর ১৯ ডিসেম্বর থেকে সাইকেল করে ভারতের ১০ রাজ্যে সফরের যাত্রা শুরু করেন। ১৯ ডিসেম্বর শুরু করা ৭৩ দিনের এই সাইকেল ভ্রমণের সাঙ্গ হলো গত ২৮ ফেব্রæয়ারি। এই সময়টাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খÐ, উড়িষ্যা, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তামিলনাড়–, কেরেলা ও গোয়াতে ৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে ভ্রমন করেছেন। ভ্রমণ শেষে চলতি মাসের ৭ মার্চ বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ঢাকায় পৌঁছান এবং ৫ দিন পর মঙ্গলবার (১২ মার্চ) ভোরে তিনি রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের নিজ বাড়িতে এসেছেন।
জানতে চাইলে বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ‘আমি তিন মাসের ভিসা নিয়ে ভারতে গিয়েছি। সেজন্য তিন মাসের বেশি সময় সেখানে অবস্থানের সুযোগ নেই। তবে যাওয়া-আসার সময় ব্যতিত বাকী ৭৩ দিনে ভারতের ১০ রাজ্যে সাইকেল চালিয়ে ৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করেছি। এই যাত্রায় আমাকে অনেকেই সাহার্য্য-সহযোগিতা করেছেন। ভারতেও ওখানকার স্থানীয় এমপি, বিভিন্ন সাইক্লিস্ট গ্রæপ, সামাজিক সংগঠনসমূহ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। আমার এই উদ্যোগের কারণ জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমাদের প্রশংসা করেছেন।’ পুরো সফরকালে বীর কুমার ভারতের ১০টি রাজ্যের মানুষকে জলবায়ু পরিবর্তনে সচেতন হওয়া, মাদকবিরোধী কর্মকাÐে সক্রিয়তা ও স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহের পাশাপাশি সমাজিক কাজে এগিয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে আমি মাত্র ১০টি রাজ্য ঘুরেছি সাইকেল চালিয়ে। আরও ১৯টি রাজ্যে এখনও ঘুরে বেড়ানো বাকি রয়েছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আমি আপাতত ফেরত এসেছি। তবে আমার মিশন এখনও সমাপ্ত হয়নি। আমার এই যাত্রায় সহযোহী হয়ে ভূমিকা রেখেছেন পানাম সাইকেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং, রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদসহ বিভিন্নজন। আমি তাদের সবার কাছে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’
রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ জানান, ‘বীর কুমারের সাহস ও প্রজ্ঞা রাঙামাটি তথা সারাদেশের জন্যই গর্বের বিষয়। বাংলাদেশকে সে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরছে। আমরা তার এই অভিযাত্রায় পাশে দাঁড়িয়েছি এবং আগামীতে তার পাশে থাকব।’