চট্টগ্রামে আইনজীবি হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে আইনজীবিদের মানববন্ধন নাশকতার মামলায় নাইক্ষ্যংছড়ির দুই ইউপি চেয়ারম্যান জেল হাজতে গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে লংগদুতে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত বান্দরবানে আওয়ামী লীগের ৪৮ নেতাকর্মীর জামিন লংগদু-দীঘিনালার মনের মানুষ এলাকায় আগুনে বসতঘরসহ পুড়ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
মেহেদী হাসান সোহাগ, সিএইচটি টুডে ডট কম, কাউখালী (রাঙামাটি)। পাহাড় থেকে সমতল, জেলাশহর থেকে উপজেলা, উপজেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে একাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ নং রাঙামাটি আসনে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের এমপি প্রার্থী অমর কুমার দে।
নিজের প্রচার প্রচারনা নিজেই চালাচ্ছেন। তার ব্যতিক্রম এই প্রচারনা পুরো রাঙামাটি জেলা দশটি উপজেলা নিয়ে সংসদীয় এ আসনের ভোটাররা বেশ উপভোগ করছেন। নিজেই পোস্টার লাগাচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন। প্রচারণার সময় তাঁর সঙ্গে কোনো সমর্থক বা কর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। পাহাড় থেকে সমতল, জেলা শহর থেকে উপজেলা, উপজেলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে একাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি । সরকার দলীয় প্রার্থীর ভয়ে কেউ সাথে না থাকলেও ঠিকই তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে বলে অমর কুমার দে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। শনিবার কাউখালী উপজেলাতে নির্বাচন প্রচারণা কালে অমর কুমার দে অভিযোগ করেন সরকার দলীয় প্রার্থী গোপনে তার কর্মীদের হুমকী দিচ্ছে তবে সরাসরি তার নির্বাচনে বাধা না দিলেও গোপনে প্রচারণার রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
তাই তিনি একা প্রচারণা করছেন ও ভোট প্রার্থনা করে অমর কুমার দে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, রাঙামাটি জেলার দশ উপজেলা ও ১২টি থানা নিয়ে গঠিত রাঙামাটি সংসদীয় আসনের দুর্গম অঞ্চলের ১৮টি ভোটকেন্দ্রে হেলিকপ্টার দিয়ে যেতে হয় বিধায় জেলায় যাতায়াত ব্যবস্থা সুগম করা জরুরি। রাঙামাটিকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন নগরী গড়ে তোলা এবং রেল যোগাযোগ স্থাপন করা; রাঙামাটি শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরবর্তী রাউজান থেকে গ্যাস সঞ্চালন লাইন চালু; পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ সকল সম্প্রদায়ের সমান অধিকার নিশ্চিত করা; পার্বত্য শান্তি চুক্তিতে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কোনো অধিকারের কথা লেখা নেই, সুতরাং জেলা পরিষদে দুইজন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করে পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান; রাঙামাটিতে বিমানবন্দর স্থাপন এবং ভূমি বিরোধ নিষ্পতি করে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতি রক্ষা করা।
অমর কুমার দে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপপ্রচার সম্পাদক। এছাড়া রাঙামাটি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অমর কুমার দে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ রাঙামাটি জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি ও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে কেন্দ্রীয় হিন্দু ফেডারেশনের সহসভাপতি ও জেলা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো পদ নেই তার, যদিও রাঙামাটিতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একনামে পরিচিত তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন অমর কুমার। পরে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। সবশেষ রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
এদিকে একই আসনে অমর কুমার দের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পকিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালূকদার । আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী দীপংকর তালুকদারের প্রচার প্রচারণা পুরো জেলা জুড়ে ব্যাপকহারে চলছে। জেলাশহর থেকে শুরু করে উপজেলা প্রতিটি ইউনিয়েন প্রতিটি গ্রামে গ্রামে দীপংকর তালুকদারের পক্ষে ভোট চেয়ে লাগানো পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চলছে মিছিল-মিটিং ও পথসভা। ভোটারদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে লিফলেট। অনলাইনেও চলছে ভোটের প্রচার। দীপংকর তালুকদারের পক্ষে তাদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভোট চাচ্ছেন। প্রার্থী ছাড়াও ভোটের মাঠ সরগরম রেখেছেন তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনরা। তারাও নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। জমে উঠেছে ভোটের মাঠে প্রচারযুদ্ধ। গণসংযোগ থেকে শুরু করে পোস্টার-ব্যানার সাঁটানো, মাইকিং এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন। ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীরা।১৫বছরের উন্নয়ন তুলে ধরে দীপংকর তালুকদারের প্রতিশ্রুতিদেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, রেলপথ ও বিমান বন্দর, জেলায় চার লেনের রাস্তা, বিশ্ব মানের পরিবেশ বান্ধব ইকো ট্যুরিজম অঞ্চল গঠন, সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সাস্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রযোজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন, ঠেগামুখ স্থল বন্দর স্থাপন করে ইমিগ্রেশন পয়েন্ট চালুর উদ্যোগ, কর্ণফুলী হ্রদ ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমানের দেখা নেই কোথাইও।
ভোটাররা বলছেন, ২৯৯ নং রাঙামাটি আসনে রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এবং খাদ্য মন্ত্রনালয় সম্পকিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালূকদারের পাশাপাশি অন্য কোন হেভিওয়েট প্রার্থী না থাকায় তার নির্বাচনী ভিত বেশ মজবুত। তার সমর্থকরা জানান, উন্নয়নের দিকে তাকালে নৌকার কোন বিকল্প নেই। এখন দেখার বিষয় আগামী ৭ জানুয়ারী নির্বাচনে এ আসনের ভোটাররা কাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে জাতীয় সংসদের যাওয়ার সুযোগ করে দেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসনে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন তিন প্রার্থী। এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৭।