সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। একটি নতুন ধরনের মাইক্রো-গ্রিড আগামীর বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীর জন্য স্থিতিশীল, সাশ্রয়ী মূল্যের এবং পরিষ্কার নবায়নযোগ্য শক্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়।
১লা ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে স্থানীয় সময় বিকাল ৫টায় বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার টংকাবতীতে একটি সুইচ ফ্লিক করা হয়েছিল এবং সাথে সাথে একটি এলইডি লাইটবাল্ব চালু হয়েছিল। অন্যান্য পরিস্থিতিতে এটি একটি তুচ্ছ ঘটনা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য এটি একটি পরিষ্কার, নির্ভরযোগ্য, দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রথম পদক্ষেপ। যুক্তরাজ্যের স্টার্ট-আপ কোম্পানি সিমওয়েভস লি. এর নেতৃত্বে, ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো এর গবেষকদের সহায়তায় এবং ঢাকায় অবস্থিত জে এন্ড সি ইমপেক্স লি. এর সহযোগিতায় একটি নতুন ধরনের সৌর-হাইড্রো মাইক্রো-গ্রিডের প্রথম পুনরাবৃত্তি থেকে বাল্বটি আলোকিত হয়েছে। সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন কর্মসূচির অধীনে ইনোভেট ইউকে এনার্জি ক্যাটালিস্ট -৭ প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিদ্যুতায়নকে ত্বরান্তিত করার জন্য সরকারী নীতি ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকল্পগুলি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) অঞ্চলের গ্রামগুলো এই ধরনের প্রচেষ্টার বিভিন্ন তরঙ্গের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, সাধারণত সোলার-হোম-সিস্টেম এর প্রাপক যা একটি বাড়িতে অল্প পরিমাণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে, কিন্তু তারা সীমিত পরিমাণে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করতে পারে এবং প্রতি ২-৩ বছরে ব্যাটারি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। এর আগে একটি গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ রিসার্চ ফান্ডেড প্রকল্পের মাধ্যমে, ইউনিভার্সিটি অব গøাসগো এবং সিমওয়েভস লি. কম নির্ভরযোগ্য, উচ্চ খরচ এবং স্বল্প কর্মজীবনের কারণে সোলার-হোম-সিস্টেম ইউনিটগুলোর সাথে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। প্রতিক্রিয়া হিসেবে, সিমওয়েভস লি. দ্বারা মাইক্রো-গ্রিডের একটি অভিনব রূপ প্রস্তাব করা হয়েছিল যা শুধুমাত্র পূর্বোক্ত লিড-অ্যাসিড ব্যাটারির উপর নির্ভর না করেই স্থিতিশীল ক্লিন এনার্জি (২৪/৭) প্রদান করতে পারে। এই সিস্টেম যা সিমওয়েভস লি. এর পেটেন্ট রয়েছে, সৌর শক্তি ব্যবহার করে কাছাকাছি উৎস থেকে পাহাড়ের উপরে একটি উঁচু ট্যাঙ্কে পানি পাম্প করে, রাতে যখন কোন সৌরবিদ্যুৎ পাওয়া যায় না তখন একটি হাইড্রো টারবাইনের মাধ্যমে ট্যাঙ্ক থেকে পানি ছেড়ে দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং এই অঞ্চলের দোকান, স্কুল, কমিউনিটি ক্লিনিক, কেয়াং (প্যাগোডা), মসজিদ, গির্জা এবং মন্দিরসহ প্রায় ১০৫টি পরিবারে গ্রিড মানের এসি বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, ভবিষ্যতের বছরগুলোতে আরও প্রসারিত হওয়ার আশা আছে।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এস. সাহা, সিইও, সিমওয়েভস লি. বলেছেন,“প্রত্যন্ত অবস্থান, পাহাড়ি, ল্যান্ডস্কোপ এবং অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হওয়ার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ নেই। উন্নত স্টোরেজ সিস্টেমসহ আমাদের মাইক্রো-গ্রিড তাদের ২৪/৭ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ করতে, এসি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে, স্থানীয় অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও সুস্থতা এবং উন্নত শিক্ষায় অবদান রাখতে সক্ষম করবে। এটি বাংলাদেশে সরকারের ভিশন “সবার জন্য বিদ্যুৎ” অর্জনে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির (সীমিত রিজার্ভ) উপর বোঝা কমাতেও সাহায্য করবে।”
ভবিষ্যতে, টংকাবতীর আরও বেশি সংখ্যক বাড়ি তাদের নতুন সোলার-হাইড্রো মাইক্রো-গ্রিডের সাথে সংযুক্ত হবে। প্রতিটি সংযুক্ত বাড়ি আরও বেশি এলইডি লাইট যোগ করবে ঘরে আলো, আরও বেশি রেডিও এবং টিভি যোগ হবে যা বিশ্বের সাথে সংযোগ প্রদান করবে এবং আরও বেশি মোবাইল ফোন যোগ করবে যা ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সন্তুষ্টি এবং এজেন্সির নতুন স্তর নিয়ে আসবে। সফল পরীক্ষামূলক চালানোর পর, কনসোর্টিয়াম ১লা নভেম্বর ২০২২এ প্ল্যান্টটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে হস্তান্তর করছে, যারা নিজেরা এটি পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ করবে।
প্রকল্পের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে, ড. মুহাম্মদ তারেক বিন আলী, সিএফও, সিমওয়েভস লি., ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগো এর ড. চং লি এবং ড. ইয়ে কোয়ান ট্যাং, জে এন্ড সি ইমপেক্স লি. এর ইঞ্জিনিয়ার দো অং গ্যা মারমা ও ইঞ্জিনিয়ার কায়সার আহমেদ এবং চুয়েট থেকে প্রফেসর ড. সুদীপ কুমার পাল। অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে, কনসোর্টিয়াম নবায়নযোগ্য শক্তির অংশীদ্বারিত্ব বাড়াতে এবং জাতীয় গ্রিড সিস্টেমে শক্তির ঘাটতি কমাতে একই রকম অনগ্রিড ও অফগ্রিড সোলার সিস্টেম বিকাশ করতে চাইছে।