সোমবার | ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

দুর্গম পাহাড়ের একজন মানবিক ডাক্তারের বিদায়

প্রকাশঃ ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ০৪:১৮:৪৬ | আপডেটঃ ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১১:২৮:৪৬  |  ৩৮৮৯
বিশেষ প্রতিনিধি, রাঙামাটি। করোনাভাইরাস মহামারীতে দুর্গম পাহাড়ে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়া বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা  ডা. রশ্মি চাকমা বদলি হয়েছেন। যিনি করোনাভাইরাস মহামারীর সময় করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিন নিয়ে বিলাইছড়ির দুর্গম বড়থলী ও ফারুয়ার অঞ্চলে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে সাধারন মানুষকে টিকা দিয়েছেন। বিলাইছড়িতে করোনা সংকটে যথেষ্ট দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি । নিজেও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রশ্মি চাকমা নিজে করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে থেকেও রোগীদের টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে গেছেন।

করোনাকালে নমুনা সংগ্রহ, নমুনা পরীক্ষা-রিপোর্ট, ল্যাব সমূহের সাথে সমন্বয়সাধন, লকডাউন বাস্তবায়ন, রোগীদের সঙ্গে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন, রোগীদের ভর্তি, বাসায় আইসোলেশন, থাকা রোগীদের সার্বিক সকল দপ্তরের সাথে সমন্বয়ে ঘুরুত্ব¡পূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ডা. রশ্মি চাকমা।

এক কথাই ডা. রশ্মি চাকমাই বিলাইছড়ির স্বাস্থ্য কেন্দ্রের  সেবায় গুণগত মান বাড়িয়েছেন। তিনি বিলাইছড়ির  দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে ভ্রাম্যমান মেডিক্যাল টিম পরিচালনা করেছেন। তার আগে আর কাউকে পায়ে হেটে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে স্বশরীরে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছেন কিনা তা কারো জানা নেই। তার বিলাইছড়ি তে ২ বছর ৮ মাস দায়িত্বপালন কালীন সময়ে বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র একটি আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে পাকা ভবনে রূপ নেয় । তার সময়েই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মা ও শিশু স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবার নতুন মাত্রা যোগ হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দুর্গম পাহাড়ি এলাকার গর্ভবতী মায়েরা নিরাপদ সন্তান প্রসব করতে সক্ষম হয়। মা ও শিশুরা সহজে চিকিৎসা সুবিধা পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকেই বাড়ি ফিরে গেছে। জটিল দু একটি রোগী ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোন রোগীকে জেলা কিংবা চট্টগ্রামে যেতে হয়নি।

ডা রশ্মি চাকমা খুব স্থির ও ধৈর্যশীল মানুষ। রোগীর কথা , মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। বিরক্ত, অবহেলা বা ব্যস্ততা দেখাতেন না কাউকে।

গত প্রায় তিন বছর বিলাইছড়ি উপজেলার মানুষকে চিকিৎসা সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এ সময়ে তিনি সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে জনগণের সেবা দিয়েছেন। করোনা মহামারীর মধ্যেও উপজেলার সার্বিক উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর ছিল তার সজাগ দৃষ্টি।

তার কাছে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন বিষয়ে তার নজরে এলে কালবিলম্ব না করে তাৎক্ষণিক সরেজমিনে গিয়ে তা দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছেন। তার কাজের মধ্যদিয়ে বিলাইছড়ির জনগণের আস্থা অর্জন করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন।

গত ১১ অক্টোবর তার বদলির আদেশ হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানবিদ বরুন দে । বলেন, তাকেঁ হাটহাজারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বদলী করা হয়েছে আর হাটহাজারীর ইউএইচএফপিও ডা সুরজিৎ দত্তকে বিলাইছড়ির উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ২৩ অক্টোবর নতুন কর্মস্থল হাটহাজারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদান করেছেন ডা. রশ্মি চাকমা। হাটহাজারীতে যোগদান শেষে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ ইলিয়াছ চৌধুরীা সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি ।

করোনার শুরু থেকে বিলাইছড়িবাসীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আলোচিত হয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রশ্মি চাকমা। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তিনি যেভাবে সেবা দিয়েছেন তা প্রশংসার দাবিদার।


স্বাস্থ্য |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions