মঙ্গলবার | ০৭ মে, ২০২৪

দুটি রেস্টুরেন্টের বর্জ্যে দূষণের কবলে রামগড়ের শতবর্ষী সরকারি লেক

প্রকাশঃ ৩০ জুন, ২০২২ ১০:৩০:৩৭ | আপডেটঃ ০৭ মে, ২০২৪ ০১:৫২:৩১  |  ৫৫৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি ও রামগড়। খাগড়াছড়ির রামগড়ে উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন প্রায় ছয় একরের সরকারি লেকটি দুটি রেস্টুরেন্ট এবং আশপাশের বাসিন্দাদের ব্যবহার্য্য ময়লা পানির দুষণের কবলে পড়েছে। তৈলাক্ত বর্জে পানি দূষিত হয়ে মাছসহ বিভিন্ন জলজপ্রাণি মরে যাচ্ছে। পানি দূষণের কারণে লেকের জলজ জীববৈচিত্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে, পর্যটক ও সৌন্দর্যপিপাসুদের কাছে আর্কষণীয হয়ে উঠা  শত বছরের এ প্রাকৃতিক লেক এলাকার পরিবেশ এখন  পঁচা মাছের দুর্গন্ধে  বিষিয়ে উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের সন্মুখে  প্রায় সাড়ে ৬ একরের লেক ঘিরে পর্যটন স্পট গড়ে তোলা হয় ২০০৩ সালের দিকে। লেকের পাড়ে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ভাস্কর্য, মুক্তিযদ্ধের ম্যুরাল, শহীদ মিনার, লেকে ওপর অবস্থিত  ঝুলন্ত সেতু এবং এর চারিপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য জেলার সীমানা ছাড়িয়ে দূরদূরন্তের পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমিদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে পরিণত হয়। এ কারণে লেকের পাড়ে ব্যক্তি উদ্যোগে চালু করা হয় দুটি রেস্টুরেন্ট। গত বছরের অক্টোবরে ‘গোধূলি’ এবং এর প্রায় ৩ বছর  আগে ‘লেকভিউ’ নামে রেস্টুরেন্ট দুটি চালু হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, লেকের ওপর নির্মিত পরিত্যক্ত ক্যাফেটরিয়া ও জলধারের তীরঘেঁষে গোধূলি রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলা হয়। এ রেস্টুরেন্টের গ্রাহকদের হাত ধোয়া এবং খাবারের প্লেট, বাটি ইত্যাদি ধোয়া পানি ফেলা হয় লেকে। এছাড়া অন্যান্য তৈলাক্ত ও চর্বি জাতীয় খাবারের বর্জও সরাসরি লেকের পানিতে ফেলা হয়। অন্যদিকে লেক থেকে কিছুটা দূরবর্তী লেকভিউ নামে রেস্টুরেন্টের গ্রাহকদের হাত ধোয়ার বেসিনের পানিও ফেলা হয় লেকে।  রেস্টুরেন্টের এ তৈলাক্ত ও চর্বি জাতীয় খাবারের বর্জ ফেলার কারণে পুরো লেকে তা ছড়িয়ে পড়ে। পানির  উপর তেলের স্তর ভাসতে থাকে। এছাড়া বাসা-বাড়ির পয়:নিষ্কাশনের পানিও ড্রেনের মাধ্যমে লেকে ফেলা হয়।

রামগড় উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাশ  জানান, ‘রেস্টুরেন্টের তৈলাক্ত ও চর্বি জাতীয় বর্জের কারণেই লেকের পানি দুষিত হয়েছে । পানি  পরীক্ষা করে এটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।  তৈলাক্ত ও চর্বি জাতীয় বর্জ খেয়ে মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এছাড়া তেলের স্তর পড়ায় পানির সাথে অক্সিজেনের মিশ্রন হচ্ছে না। এতে মাছের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশাস প্রক্রিয়াও বিঘিœত হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, ‘মৃত মাছ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, পেট থেকে তৈলাক্ত তরল রস বের হয় এবং মুখ ও শরীরের ক্ষত রয়েছে।’

রামগড় পৌসভার মেয়র মো: রফিকুল আলম কামাল বলেন, ‘এ লেকটি আমাদের অমূল্য সম্পদ। এভাবে এটাকে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ বিগত সামরিক সরকারের আমলে পৌরসভা থেকে সমস্ত নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই লেক ঘিরে গড়া  পর্যটন স্পটটি ক্রমশ: ধ্বংস হয়ে যায়। এখন লেকের  পানিও দুষিত করা হয়েছে।’

রামগড় উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা খোন্দকার মো: ইখতিয়ার উদ্দীন আরাফাত বলেন, ‘লেকের পাড়ের রেস্টুরেন্টের তৈলাক্ত বর্জের কারণেই পানি দুষণ ও মাছ মারা যাওয়ার কারণ উদঘাটনের পরই রেস্টুরেন্টের মালিকদের ডেকে এনে কঠোরভাবে সর্তক করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে  লেকের সাথে সংযুক্ত সকল বেসিন ও ড্রেনেজ লাইন অপসারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘লেকের সাথে সংযুক্ত  পার্শ¦বর্তী বাসা বাড়ির সবগুলো ড্রেন বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

খাগড়াছড়ি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions