শনিবার | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

বান্দরবানে আপল্যান্ড তুলা চাষে লাভবান চাষীরা

প্রকাশঃ ০১ এপ্রিল, ২০২২ ১১:০৭:৫৯ | আপডেটঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০৬:১৬:২৯  |  ১২৯৮
কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বেশিরভাগ এলাকায় একসময় তামাকের আগ্রাসনে ভরপূর থাকলে ও সময়ের পরিবর্তনে অনেক এলাকাতে এখন শুরু হয়েছে তুলা চাষ,আর এই তুলা চাষের ফলে চাষীদের জীবনে ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা, চাষীরা ঝ্ুঁকছে এই তুলা চাষে আর বিক্রি করে অনেকেই হচ্ছে লাভবান ।  

বর্তমানে জেলার ৭টি উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় থেকে তুলা উত্তোলন শুরু করে দিয়েছে চাষীরা, চাষীরা পাহাড়ী তুলার পাশাপাশি আপল্যান্ড জাতের তুলা চাষে ফলন ভাল পাওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। জেলার ৭টি উপজেলার পাশাপাশি সদর উপজেলার মেঘলা,চিম্বুক,চড়–ইপাড়া,লেমুঝিড়ি,বালাঘাটা জয়মোহন পাড়াসহ বিভিন্ন পাড়ায় চলছে তুলার আবাদ,চাষীরা পাহাড়ে জুম চাষের পাশাপাশি তুলা চাষ করে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় খুশি।

বান্দরবান সদরের লেমুঝিড়ির তুলা চাষী অনঙ্গ্যা তংচঙ্গ্যা বলেন,এক সময়ে শুধু তামাক চাষ করে পরিবার চালাতাম,তবে তামাক চাষ আর বিক্রি করে যে অর্থ সাশ্রয় হতো তার চেয়ে তুলা চাষে কষ্ট কম আর লাভ বেশী।

বান্দরবান সদরের লেমঝিড়ির তুলা চাষী চে অং মারমা বলেন,আগে পাহাড়ী তুলা চাষ করতাম আর এখন আপল্যান্ড তুলার চাষ করেছি,আগের চেয়ে উৎপাদন বেশি লাভও বেশী।

তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা বলছে, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ক্ষতিকর তামাক চাষ বন্ধ করে ওইসব জমিতে তুলার আবাদ বৃদ্ধি ও কৃষকদের উন্নয়নে তুলা উন্নয়ন বোর্ড প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে আর তুলা চাষীদের পাহাড়ী তুলার পাশাপাশি আপল্যান্ড জাতের তুলার চাষ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বিনামুল্যে বীজ,সার ও কীটনাশক এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান জোন এর ফিল্ড সুপারভাইজার ববিতা তংচঙ্গ্যা বলেন, আমরা চাষীদের তুলা চাষের জন্য বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছি আর এতে পার্বত্য জেলা তুলার আবাদ বাড়ছে । তিনি আরো বলেন, আমরা বেশিরভাগ এলাকায় গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিই এবং কৃষকরা আমাদের পরামর্শ পেয়ে তুলার আবাদ বৃদ্ধিতে কাজ করে।

বান্দরবান পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্র এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মংসানু মারমা বলেন, তামাকের আগ্রাসন থেকে পাহাড়ের চাষীদের রক্ষা করা এবং পার্বত্য জেলার চাষীদের তুলার চাষ সম্প্রসারণ বৃদ্ধিতে আমরা নিয়মিত চাষীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি এবং তুলার জাত সম্প্রসারণ এবং তুলার উন্নয়নে আমাদের কর্মকর্তারা সচেষ্ট রয়েছে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান জোনের তথ্যমতে , ২০২০-২১ অর্থ বছরে বান্দরবানে ৬ হাজার ৮০হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে আর তার বিপরীতি ২১৫০.৭মেট্রিক টন তুলার উৎপাদন হয়েছে আর ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৫৯০১হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে আর তার বিপরীতি ২৪২০.১৭ মেট্রিক টন তুলা উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা।        

তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবান জোন এর  প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো:আলমগীর হোসেন মিধা বলেন,বান্দরবানে পূর্বে পাহাড়ী তুলা উৎপাদন হলেও ধীরে ধীরে চাষীরা আপল্যান্ড জাতের তুলা চাষ করছে আর এতে কয়েকগুন উৎপাদন বেশি হচ্ছে এবং দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বান্দরবানে ৫৫৭৩জন চাষী তুলা চাষে সম্পৃক্ত আর এবছর তুলা চাষ করে পাহাড়ী তুলা প্রতিমনে ২৮০০ টাকা ও আপল্যান্ড জাতের তুলা প্রতিমনে ৩৪০০টাকা দামে বিক্রি করছে কৃষকরা। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় তুলার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে হ্ইাব্রীড তুলাবীজসহ প্রায় ৪.৫টন তুলাবীজ চাষীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে, যেখান থেকে  ৬৫০০বেল আঁশতুলা ছাড়াও ১৫০০টন তুলাবীজ পাওয়া যাবে। প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো:আলমগীর হোসেন মিধা আরো বলেন, পাহাড়ী তুলার  ফলন ২৭০কেজি অথচ উচ্চভূমির তুলা (আপল্যান্ড) তুলার ফলন হেক্টর প্রতি ৫০০কেজি। উচ্চভূমির তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য,বর্ণ, স্প্রিনিং গুণাবলী কাঙ্খিত মানের হওয়ায় এর বাজারদর পাহাড়ী তুলার চেয়ে ভাল আর কৃষকরা এখন আপল্যান্ড তুলার চাষ বৃদ্ধি করছে এবং বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

তুলা উন্নয়ন বোর্ড সদর দপ্তর,ঢাকা এর নির্বাহী পরিচালক কৃষিবিদ মো.আখতারুজ্জামান বলেন, পার্বত্য জেলা বান্দরবানে আমরা তুলার চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের বিনামুল্যে বীজ ,সার ,অনুসারসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে পাহাড়ে আপল্যান্ড জাতের তুলার চাষ বাড়ছে। আপল্যাড তুলা হলো টেক্সটাইল এ ব্যবহৃত তুলা, যার ফলন জুমে চাষকৃত সাধারণ তুলার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি আরো বলেন ,বান্দরবনের পাহাড়ের উপত্যকায় ও পাহাড়ের ঢালে চাষ উপযোগী এই আপল্যান্ড তুলা। তামাকের চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক হওয়ায় চাষীরা তামাক চাষ ছেড়ে তলা চাষে মনোনিবেশ করছে। বর্তমানে প্রতি কেজি তুলা ৯০টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে এ তুলা চাষ করতে ১০-১২ হাজার টাকা ব্যয় হয় আর উৎপাদন হয় ১২-১৪ মন তুলা, তাই ১ বিঘা জমি হতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা নীট লাভ করা যায় ,আবার সাথী ফসল চাষ করে বাড়তি আয় করা যায়।


অর্থনীতি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions