কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবানে মৌসুমের শুরুতে গাছে গাছে পর্যাপ্ত আমের মুকুল দেখা দিলেও অনাবৃষ্টি আর প্রকৃতির বিরুপ আবহাওয়া তীব্র তাপদাহের কারনে মুকুল ঝড়ে যাওয়ায় অনেক বাগানে পর্যাপ্ত আম নেই, আর প্রকৃতির এমন আবহাওয়ার কারণে অনেক বাগানের আম এবার পচেঁ ঝড়ে পড়েছে আর আর এতে লোকসানের আশঙ্কা করছে আমচাষীরা।
বান্দরবানের স্থানীয় আমের জাত রাঙোয়া এবং আম্রপালি আমের খ্যাতি দেশজুড়ে। প্রতিবছর বান্দরবানের স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার উৎপাদিত আম চলে যায় দেশের নানান প্রান্তে। এবার ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে বান্দরবানে আমের মুকুলেই জানান দিয়েছিল মধুমাসের আগমনী বার্তা। মুকুলে মুকুলে ভরে গিয়েছিল প্রত্যেকটি বাগান। গাছে গাছে আমের মুকুলের সমারোহ দেখে আশায় বুক বেঁধেছিল চাষীরা, কিন্তু মৌসুমের প্রথমে অনাবৃষ্টি আর তীব্র তাপদাহে আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক বাগানে আম গাছে আম ধরলেও ঝড়ে পড়েছে গাছ থেকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বান্দরবান সদরের ফারুকপাড়া এলাকায় বেশ কিছু আমের বাগান রয়েছে তবে গাছে আমের পরিমান অনেক কম। গাছে পর্যাপ্ত আম না থাকায় এবার লোকসানের সম্মুখিন হবে বলে জানান আমচাষীরা। বাগানের আম বিক্রি করে আম চাষীদের বাগান পরিচর্যা খরচ উঠবে না বলে ধারণা করছে অনেক চাষীই।
বান্দরবানের ফারুকপাড়া এলাকার আমচাষী জেমস বম জানান, এবছর গাছে আম ধরেছে কম আর তার উপরে সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় প্রচন্ড গরমে আম ফেঠেছে অনেকগুলো। জেমস বম আরো জানান, গত বছর আম বিক্রি করে ভালো দাম পেলে ও এবছর লাভ বেশি হবে না।
আম চাষী ইমানুয়েল বম জানান, আমার নিজস্ব ২একর আম বাগান রয়েছে, এবছর আম ভালো পরিমানে পাব না। গত বছর বাগান বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছি এবছর পর্যাপ্ত আমের ফলন না হওয়ায় আমাদের এলাকার অধিকাংশ আম চাষী লোকসানের আশংকা করছে।
আম চাষী নুহই বম জানান, গতবছরের তুলনায় এবছর বাগানে আম কম পাব। তিনি আরো জানান, বাগানে দেশীজাত, রাঙোয়া এবং আম্রপালি চাষ করেছি। কাঁচা ঝড়ে পড়া আম মনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা ও ভালো আম মনপ্রতি ৭০০-৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি, ২০২১-২২ অর্থবছরে বান্দরবানে ৯৮০৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছিল আর ওই বাগান থেকে ১লক্ষ ১১ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল আর এবছর উৎপাদন বেড়ে ১লক্ষ ২০হাজার মেট্রিক টন হবে বলে প্রত্যাশা ।
এদিকে অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিপাত আর আবহাওয়ার বিরুপ প্রভাবের কারণে প্রথমদিকে আমের ফলন কিছুটা কম হলেও তেমন বড় ধরণের ক্ষতি হবে না বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক এম এম শাহ নেয়াজ জানান, বান্দরবানের আম সারাদেশে সুনাম ছড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর বান্দরবান থেকে প্রচুর ফরমালিনমুক্ত আম ক্রয় করে দেশের নানাস্থানে সরবরাহ করে । তিনি আরো বলেন, বান্দরবানে দিন দিন আমের আবাদ বাড়ছে আর এবছর ১লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা।
তিনি আরো বলেন, এবছর প্রচুর আমের ফুল এসেছিল তবে এপ্রিল মাসের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় আম কিছুটা ঝড়ে পড়েছিল, তবে এই ঝড়ে পড়া কাঁচা আমগুলোও চাষীরা বিক্রি করেছে। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক এম এম শাহ নেয়াজ আরো জানান,আমের আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগ চাষীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে আর আগামীতেও সহায়তা অব্যাহত থাকবে।