কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। বান্দরবান সদরের রেইচা এলাকার গোয়ালিয়াখোলা এলাকায় প্রায় সব ধরনের সবজির চাষ হয়।পাহাড়ি জেলা হলেও বান্দরবান সদর উপজেলার ৩নং সদর ইউনিয়নের গোয়ালিয়াখোলা এলাকা সমতল। সমতল এলাকার মতই এর গঠন প্রকৃতি হওয়ায় এখানে প্রায় প্রতি ইঞ্চি জমিতেই চাষাবাদ হয়।
গোয়ালিয়াখোলা এলাকায় বর্তমানে শিম চাষের মৌসুম চলছে। শীত মৌসুমের অন্যতম সবজি শিম। গোয়ালিয়াখোলা এর আশেপাশের এলাকায় যতদূর চোখ যায় শিম আর শিমের ক্ষেতে চোখ জুড়িয়ে যায়। তবে সদর উপজলার গোয়ালিয়াখোলা এলাকা ছাড়াও ডলুপাড়া, কুহালং, গুংগুরু পাড়া, ক্যামলং পাড়া, ভরাখালী, রেইচা, রেইচা লম্বা ঘোনা, থলিপাড়া, রেইচা লম্বা রাস্তা, মুসলিমপাড়া, সুয়ালক, মাঝের পাড়া, ছাইঙ্গা এলাকায় ব্যাপকভাবে শিমের আবাদ হয়। শিম চাষে খরচের তুলনায় ফলন ভালো ও লাভ ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা শিম চাষের প্রতি বেশি আগ্রহী।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় , এবার বান্দরবানের ৭ উপজেলায় প্রায় ৬শত হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বান্দরবান সদর উপজেলাতে ১০৮হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ করা হয়।
কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক একর জমিতে গড়ে ২৫ মণ বা ৮০০ কেজি’র মত শিমের ফলন হয়েছে এবার। কৃষকদের সাথে কথা বলে আরো জানা গেছে, শিমের একটি ক্ষেত থেকে মৌসুমে অন্তত ৫ বার শিম উত্তোলন করা হয়। চলতি মৌসুমে কোনো কোনো শিমের ক্ষেতে তিন, কোনো ক্ষেতে চারবার ফলন তোলা হয়েছে। আরও কয়েক মাস শিমের ফলন থাকবে। কৃষকরা বলেন, এই মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়া থাকায় বান্দরবানে শিমের ফলন ভালো হয়েছে, ভালো লাভও হচ্ছে।
সরেজমিন বান্দরবান সদর উপজেলার গোয়ালিয়াখোলা, রেইচা, রতœাপুর পাড়া এলাকায় গিয়ে কয়েকজন শিম চাষীর সাথে কথা হয়। তাঁরা বলেন, এবার শিমের ফলন ভালো হয়েছে । সেখানে কথা হয় শিম চাষী মো. রুবেল, মো. মুছা, আবদুর রাজ্জাক, হরিপদ দাশের সাথে। তাঁরা বলেন, তাঁরা চলতি মৌসুমে শিমের চাষ করেছেন। আবার কেউ কেউ পেঁপে, গোল আলু, ফেলেন শিম (প্লাস শিম বলে স্থানীয়ভাবে) চাষ করেছেন। তবে বেশিরভাগ জমিতেই শিম চাষ করেছেন। প্রথমে বাগান হতে শিম তুলে সেখানেই পাইকারী ৪০ টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করলেও বর্তমানে পাইকারী শিমের দাম অনেক কম।
গোয়ালিয়াখোলা এলাকার রেইচা লম্বাঘোনায় শিমের জমিতে কথা হয় মো. রুবেল নামে এক চাষীর সাথে। তিনি বাগানে শিম গাছের পরিচর্যা করছেন। জমিতেই রুবেলের সাথে কথা হয়। মো. রুবেল জানান, তিনি পুরোপুরি কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। কৃষি কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়েই পুরো বছর সংসার চলে। তিনি বলেন, কৃষি কাজ হতে তাঁর ভালো আয় হয়। মোটামুটি সারাবছর সাচ্ছন্দে জীবন যাপন করেন। মো.রুবেল আরো বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি তিন একর ৬০শতক জমিতে শিমের চাষ করেছেন। কৃষক রুবেল জানান, প্রায় চারমাস শিমের ফলন উত্তোলন করা যায়। প্রথমে প্রতি কেজি শিম পাইকারী ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রতি কেজি শিম ৩৮, ৩৩, ২৮ টাকা দরে বিক্রি করলেও বর্তমানে মাত্র ১৬ টাকা দরে পাইকারী শিম বিক্রি করছেন। রুবেল জানান,এক একর জমিতে কমপক্ষে ২৫মণ শিমের ফলন হয়। এক একরে শিম চাষে খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা, শিম বিক্রি করেন প্রায় ৮০-৮৫ হাজার টাকা।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানে দিন দিন শিম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিমের পুষ্টিগুণ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। ১০০ গ্রাম শিমে ৮৫ গ্রাম পানি ও ৪৮ কিলোক্যালরি রয়েছে। বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক জানান, সদর উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১০৮হেক্টর জমিতে শিমের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে অন্তত ১৫ টন শিমের ফলন হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার বান্দরবানের আবহাওয়া ভালো থাকায় শিমের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ শিম চাষীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে।