কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর পার্বত্য এলাকায় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষা ,স্বাস্থ্য আর যোগাযোগসহ বিভিন্নখাতে উন্নয়ন হয়েছে অভুর্তপূব আর এতে বান্দরবানের জনসাধারণের অর্থনৌতিক উন্নয়ন তরান্বিত হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড,বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ,স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি),সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিয়ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ আর বাস্তবায়নে এই এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও ৩০০নং আসনের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির উন্নয়ন পরিকল্পনায় পার্বত্য এলাকার বিভিন্ন দুর্গম এলাকাগুলোতে হচ্ছে স্কুল-কলেজ,মন্দির-মসজিদ-গীর্জা সেতুসহ অসংখ্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । যে এলাকায় পৌঁছতে একসময়ে সড়কের অভাবে হাঁটাপথে অথবা নৌকাযোগে যাতায়ত করতে ২-৩দিন লাগতো সে এলাকাগুলোতে এখন সুদৃশ্য সড়কে কয়েকঘন্টায় যাওয়া আসা করা যায়। সড়ক যোগাযোগের সুবিধার কারণে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের যেকোন প্রান্তে এখন সহজেই যাওয়া যাচ্ছে।
পার্বত্য এলাকা বান্দরবানের অর্থনৌতিক সমৃদ্ধির পথ অনেকটাই প্রসার করেছে কৃষিখাত। পাহাড়ের বিভিন্নস্থানে চাষ হচ্ছে দেশি ফলের,পাশাপাশি চাষ হচ্ছে বিদেশি আম,লিচু আর কমলাসহ অসংখ্য ফলফলাদি। একসময় শুধু পাহাড়ে জুম চাষ করে অনেকেই জীবন নির্বাহ করে সংসার চালালেও বর্তমানে জুমের সাথে সাথী ফসল হিসেবে তুলাসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছে অসংখ্য জুমিয়া পরিবার। কৃষি বিভাগের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও বিনামুল্যে সার ,বীজ ,স্প্রে মেশিন সংগ্রহ করে অনেকেই বাড়িয়েছে তাদের উৎপাদন। জুমিয়াদের বর্তমানে অর্থনৌতিক উন্নয়ন বেড়েছে কয়েক শতাংশ। একসময় কলা আর পেঁপে চাষ করে পাহাড়ে ছিড়ে বাগানে রেখে দিত হতো তবে সময়ের পরিক্রমায় এখন পাইকারী ব্যবসায়ীরা পাহাড়ের আনাচে কানাচে ছুটে গিয়ে অগ্রীম অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে নিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের উৎপাদিত টাটকা এই ফল ফলাদি।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.ওমর ফারুক বলেন,পার্বত্যজেলা বান্দরবানের কৃষিখাত অনেকটাই সমৃদ্ধ। এই এলাকায় নদীর পাড়,পাহাড়ের উঁচু-নিচসহ সমতলে চাষ হচ্ছে অসংখ্য ফল ফলাদি। একসময় শুধু দেশি ফল ফলাদি চাষ হলে ও অর্থনৌতিক অবস্থার উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে কৃষকরা এখন বিদেশি ফল চাষে আগ্রহ বাড়াচ্ছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.ওমর ফারুক আরো বলেন,এখন পাহাড়ে চাষ হচ্ছে কাজুবাদাম,কফি,গোলমরিচ,বিদেশি আমসহ বিভিন্ন ফল আর কৃষকরা বাজারের অবস্থা বিবেচনা করে সহজেই উৎপাদন করে লাভের পরিমান বাড়ানোর পন্থা নিজেরাই আয়ত্বে নিয়ে এসেছে।
বান্দরবানের অর্থনৌতিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণখাত পর্যটন। প্রশাসনের সহযোগিতা আর ধারাবাহিক পরিকল্পনা জেলার পর্যটনখাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটেছে। পুরে জেলায় অর্ধশতাধিক হোটেল মোটেল আর গেষ্ট হাউসে কাজ করছে প্রায় ৫হাজার কর্মচারী । বান্দরবানের আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমল কান্তি দাশ বলেন,বান্দরবানের পর্যটনখাতে এই এলাকার অসংখ্য জনগণ সম্পৃক্ত হয়েছে এবং প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে অনেকেই। তিনি আরো বলেন,শান্তি ও সম্প্রীতির জেলা হিসেবে পরিচিত এই জেলায় পর্যটনখাতে অর্থনৌতিকভাবে লাভবান হচ্ছে সংশ্লিষ্টরা। রাজনৌতিক ,সামাজিক ও অর্থনৌতিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় জেলার প্রতিটি উপজেলায় গড়ে ওঠেছে অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র এবং সেই সাথে হোটেল-মোটেল ও গেষ্টহাউস ও রির্সোট। পর্যটনখাতে যুক্ত হয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
অর্থনৌতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছে জেলার পর্যটকবাহী যানের মালিক ও শ্রমিকরা। যেখানে বিগত ৫বছর আগে হাতেগোনা কয়েকটি পর্যটকবাহী যানবাহন ছিল সেখানে বর্তমানে পর্যটকদের ভ্রমনের জন্য যুক্ত হয়েছে আধুনিকমানের প্রায় ৫শতাধিক জীপ,মাইক্রো,চাঁদেরগাড়ী,বি স্যাভেনটি এবং জীপ গাড়ী। বান্দরবানের মাইক্রোবাস,জীপ ও পিকআপ মালিক সমবায় সমিতির লাইন পরিচালক মো.কামাল জানান, বান্দরবানে নীলগিরী,চিম্বুক,শৈলপ্রপাত,নীলাচল,মেঘলা,স্বর্ণমন্দিরসহ অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠেছে আর এতে বেড়েছে পর্যটকবাহী যানের চাহিদা। তিনি আরো বলেন, একসময় কয়েকটি গাড়ী থাকলে ও এখন প্রতিদিন বান্দরবানে দেশি বিদেশি অসংখ্য পর্যটক আসছে আর তাদের সেবা দিয়ে অসংখ্য পর্যটকবাহী যান চলাচল করছে আর অর্থনৌতিক অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে এই পর্যটনখাতের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, অর্থনৌতিকভাবে বান্দরবানের গুরুত্ব অপরিসীম। জেলার পর্যটন ও কৃষিখাতে জড়িত অসংখ্য জনসাধারণ আর তাদের শ্রম ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বান্দরবানের সুনাম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে আর অর্থনৌতিকভাবে উন্নয়ন হচ্ছে সর্বত্র। তিনি আরো বলেন,বান্দরবান জেলা প্রশাসনের উদ্যাগে জেলার পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটেছে এবং বর্তমান জেলা প্রশাসনও পর্যটন বিকাশে বহুবিধ ভূমিকা রাখছে আর এই পর্যটন বিকাশের মুল উদ্যাশে হল পর্যটকরা বান্দরবানে আসলে এখানকার পর্যটনশিল্পের উন্নয়নের সাথে সাথে অন্যান্য সেক্টরগুলোও বিকশিত হবে আর অথনৌতিক উন্নয়ন ঘটবে সকলের।