সিএইচটি টুডে ডট কম, লংগদু (রাঙামাটি)। ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পার্ত্যাঞ্চলের কৃষি খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি থেকে রক্ষা পায়নি পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলাও। এবারের দুই দফার বন্যায় ১৭ কোটি ৬১ লক্ষ ৮৮ হাজার ১২৫ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ ক্ষয়ক্ষতির চিত্র নিরূপণ করেছে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে এলাকার ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। বন্যায় লংগদুর কৃষি অঞ্চলে ৩০৫ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলার আটারকছড়া, লংগদু সদর, বগাচতর ও গুলশাখালী ইউনিয়নে ফসলের বেশি ক্ষতি হয়েছে। সাতটি ইউনিয়নে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ৮০ হেক্টর সবজি বাগান। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ও আমন খেত। যা ১০৫ হেক্টর ও ১২০ হেক্টর জমি। আমন ধানের উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রাঙামাটির লংগদুতে শুধু আমনের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকার মতো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ক্ষতির যে আর্থিক মূল্য নিরূপণ করেছে প্রকৃত ক্ষতি এর চেয়ে বেশিও হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে আনতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন শুরু করেছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে লংগদু উপজেলা পরিদর্শন করেছেন সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছরের বন্যায় কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যায় লংগদুতে শুধু রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ১২০ হেক্টর জমির রোপা আমন সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৯৬০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। চলতি মাসে আউশ ধান ঘরে তোলার মৌসুম। কিন্তু ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আউশ ধানের খেত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। লংগদুর ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আটারকছড়া ও লংগদু সদর।
উপজেলায় এবার ১ হাজার ১২ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বন্যায় তলিয়ে গেছে ২৪০ হেক্টর জমির ফসল। একই সঙ্গে আউশের ২১০ হেক্টর বীজতলা। উপজেলায় ১২শ ৫৫ হেক্টর আউশের মধ্যে ২১০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া সবজি ১৬০ হেক্টর এবং পেঁপে সহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চলতি বন্যায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে কমবেশি সবগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হলো- আটারকছড়া, কালাপাকুজ্জ্যা, গুলশাখালী, বগাচতর, ভাসান্যাদম, মাইনীমূখ ও লংগদু সদর।
আটারকছড়ার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক অমল চাকমা বলেন, এক মাসে দুই দফায় বন্যায় ডুবেছে তার খেত। সবশেষ চারা রোপণ করার কয়েক দিন পর থেকে বন্যা শুরু হয়। এতে তার জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এখন বন্যার পানি কমলেও নতুন করে চাষ করার মতো সময় নেই। তা ছাড়া সার, বীজ এবং শ্রমিকের মজুরি বাবদ যে অর্থ প্রয়োজন সেটাও হাতে নেই। এখন আমরা কী করব? এভাবেই মনের কষ্টের কথা প্রকাশ করেন দিশাহারা এ কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লংগদু অফিসের উপ সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রতন চৌধুরী বলেন, আমরা এ পর্যন্ত লংগদুর ৭টি ইউনিয়নের আনুমানিক ১৮ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছি। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হচ্ছে। শিগগরই ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ণয় করতে পারব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, কৃষক ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে এ আশায় ক্ষতির পরিমাণ পরিমাপ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। যদি কৃষক প্রণোদনা আসে সেটি যথা নিয়মে কৃষকদের বিতরণ করা হবে।