মঙ্গলবার | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
রাঙামাটিবাসীকে

খোলা চিঠি লিখে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

প্রকাশঃ ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০৭:০১:২১ | আপডেটঃ ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৩৭:৪৮  |  ১৮০৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটি জেলাবাসির উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখে নিজের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন  রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ অংসুই প্রু চৌধুরী। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এই কথা জানিয়েছে। তার চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

প্রিয় রাঙ্গামাটিবাসী,

শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ও স্মরণ করছি মহান সৃষ্টিকর্তাকে। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি রাঙ্গামাটির সর্ব স্তরের জনগণকে।        

প্রিয় এলাকাবসী,

মাননীয় সাবেক প্রধান মন্ত্রীর ইচ্ছা ও আমার প্রিয় নেতা দীপংকর তালুকদারের আমার  প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন হিসেবে গত ১৪ ডিসেম্বর ২০২০ সালে নিয়োগ পেয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্র্বতীকালীন পরিষদ  চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করি। দায়িত্ব গ্রহণের পর হতে আমি চেয়ারম্যান হিসাবে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি- দল মত সাম্প্রদায়িকতার উর্ধে থেকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাকে একটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পরিবেশ, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন ও পর্যটন উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করে একটি সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতির জেলা হিসেবে রূপান্তর করতে। সকল সেক্টরে উন্নয়ন ও সম্প্রীতির রাঙ্গামাটি গড়ার লক্ষ্যে দীপংকর তালুকদারের নেতৃত্বে ও উনার সহযোগিতায় ইতোমধ্যে নানান উন্নয়নমুখী কর্মসূচি ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু বিরাজমান পরিস্থিতির  মধ্যে সময় ও সুযোগ না থাকার কারণে সেগুলোর শতভাগ প্রতিফলন ঘটানো বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নাই। এটাই আমার জীবনের সব চাইতে বড় ব্যর্থতা এবং গ্লানি। এই ব্যর্থতা ও গ্লানিকে সাথে নিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছি। আমি চেয়েছিলাম, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক প্রভাবমুক্ত একটি জনমুখী ও জনকল্যাণমুলক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা  ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে। এই লক্ষ্যকে  সামনে রেখে কাজ করেছিলাম; কিন্তু সেই লক্ষ্যকে চূড়ান্ত করতে পারি নাই। এ জন্য আন্তরিকভাবে দঃখিত এবং সবার কাছে  ক্ষমাপ্রার্থী। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষাপটে ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বাস্তবায়নে পার্বত্য জেলা পরিষদ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলেও বিভিন্ন সরকার ও ব্যক্তিদের কারণে এই প্রতিষ্ঠানকে একটি দলীয় পুনর্বাসন কেন্দ্র, স্বেচ্ছাচারী, অনিয়ম ও  দুর্নীতিগ্রস্থ  প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাধারণ জনগণের মধ্যে এই নেতিবাচক বার্তা পৌঁছেছে, যেটা পার্বত্যবাসীর জন্য দুঃখজনক এবং আমার জন্য অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর ছিল। আমি মনে করি আমার মতন যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা এদেশের সচেতন নাগরিক ও জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব এড়াতে পারে না। আমিও এর উর্ধে নই। যারা আগামী দিনে এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন তাদের প্রতি আমার বিনয়ের সাথে আবেদন থাকবে যে লক্ষ্যে পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও ন্যুনতম হলেও লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা রাখতে। পার্বত্য অঞ্চলে সকল জনগোষ্ঠির শিক্ষা,  সংস্কৃতি, ভাষা বেকারত্ব দূর, যুব ও ছাত্র সমাজের উন্নয়নের জন্য অধীর প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। এই সকল কর্মসূচিতে ইচ্ছা  করলে জেলা পরিষদের  কাজ করার অনেক সুযোগ আছে।  আমি দায়িত্বে আসার পর সেই কাজ শুরু করার প্রচেষ্টা করেছি। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাবাসীর সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে আমি যেসকল কর্মসূচিগুলো শুরু করেছিলাম সে সকল কর্মসূচিগুলো চলমান রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক রাস্তা, ব্রীজ, অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি, ভাষা, নারী উন্নয়নসহ পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।  

পরিশেষে, আমার দায়িত্ব পালনকালীন আমার পরিষদের সকল সদস্য, পরিষদে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন্, সেনাবাহিনী, লাইন ডিপার্টমেন্টের সকল বিভাগ/দপ্তর প্রধান, পার্বত্য চট্টগ্রাম  আঞ্চলিক পরিষদ, সাংবাদিক, আওয়ামীলীগের সকল স্তরের নেতৃবৃন্দসহ জননেতা দীপংকর তালুকদারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। দায়িত্ব পালনকালীন সকল সফলতা রাঙ্গামাটি পার্বত্যবাসীর।  সকল ব্যর্থতা   নিজ কাঁধে নিয়ে বিশেষ কারণে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি গ্রহণ করছি।

সকলে ভালো থাকবেন, আপনাদের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো- এই আমার প্রত্যাশা।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হউক।  

এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যানকে কয়েক দফা ফোন করলেও তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।   

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions