সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আজ ১৬ জুলাই ২০২৪ মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ‘পরিচালনা বোর্ড’ এর ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ১ম সভা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রাঙামাটিস্থ প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা ।
সভার আলোচ্যসূচি ছিলো (১) গত ০৩/০৬/২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের অগ্রগতি পর্যালোচনা; (২) ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পসমূহের ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা (৩) ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে উন্নয়ন সহায়তা কোড নং-২২১০০০৯০০ এবং ২২১০০১১০০ এর প্রকল্প/স্কিম বাছাই ও অনুমোদন এবং (৪) বিবিধ।
চেয়ারম্যান উপস্থিত বোর্ড পরিচালনা কমিটির সকল সদস্যকে স্বাগত জানান। সভাপতির অনুমতিক্রমে উপসচিব সদস্য প্রশাসনা মোহাম্মদ মাহুবুবউল করিম বিগত পরিচালনা বোর্ড সভার কার্যবিবরণী পাঠ করে শোনান। তিনি বিগত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতিসহ ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প/স্কিমের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করেন।
চেয়ারম্যান বলেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পার্বত্যাঞ্চলে দুর্গম এলাকাগুলোতে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। বোর্ড পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলায় বোর্ড কর্তৃক গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য প্রকল্প/স্কিমের কার্যক্রমকে জনকল্যাণমুখী করতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। ভবিষ্যতেও সবার সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে মর্মে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় দুর্গম বিলাইছড়ি উপজেলায় কলেজ ভবন, স্কুল ও ছাত্রাবাস নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান যে, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বসবাস করেন এবং তাদের যোগাযোগের জন্য পাকা রাস্তা নির্মাণসহ স্থানীয় জনমানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তামাক চাষের বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে কফি ও কাজুবাদাম, তুলা চাষ এবং সুগার ক্রপ চাষ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এসময় তিনি বান্দরবান পার্বত্য জেলায় মৃত প্রায় ছড়া ও খালগুলো পুনরুজ্জীবিতকরণের লক্ষ্যে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বোর্ডকে অনুরোধ জানান।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসক মোঃ সহিদুজ্জামান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য শুভ মঙ্গল চাকমা এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চগ্যাঁ সভায় গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ দেন। এসময় বোর্ড পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গৃহীত ও বাস্তবায়িত উন্নয়নমূলক প্রকল্প/স্কিমের দৃশ্যমান কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এসময় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও নির্বাহী প্রকৌশলীগণ ধারাবাহিকভাবে প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে স্ব স্ব প্রকল্পের বাস্তব ও আর্থিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি উপস্থাপন করেন। তন্মধ্যে তুলা চাষ প্রকল্প, কফি ও কাজুবাদাম চাষ প্রকল্প, সুগার ক্রপ প্রকল্প, রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় সেচ অবকাঠামো নির্মাণ, খাগড়াছড়ি বিভিন্ন উপজেলায় সেচ ড্রেইন নির্মাণ, বান্দরবান বোয়াংছড়ি-রুমা পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন পল্লী অবকাঠামো নির্মাণ, বান্দরবান সাঙ্গু নদী ও সোনাখালের উপর ব্রীজ নির্মাণ, বান্দরবান পৌরসভা ও লামা পৌরসভা মাস্টার ড্রেইন নির্মাণ, আইসিটি প্রকল্প, ৪টি আবাসিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন রক্ষা প্রকল্প/স্কিমের বাস্তব ও আর্থিক বিষয়ে সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ (যুগ্মসচিব) বোর্ড পরিচালনা কমিটির সদস্যগণের মতামত ও সুপারিশের আলোকে যথাযথ জবাব দেন।
আলোচনার শেষে সভাপতি তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকগণ এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধিকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং উপস্থিত সকলের সুস্বাস্থ্য মঙ্গল কামনা করে সভা সমাপ্তি ঘোষনা করেন।
সভায় বোর্ডের যুগ্মসচিব ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, উপসচিব সদস্য অর্থ মোঃ জসীম উদ্দিন, সদস্য প্রশাসন মোহাম্মদ মাহবুবউল করিমসহ পরিচালনা বোর্ড সদস্যগণ ছাড়াও বোর্ডের উপপরিচালক মংছেনলাইন রাখাইন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত, রাঙামাটি নির্বাহী প্রকৌশলী তুষিত চাকমা, সিএমইউ জেনারেল ম্যানেজার পিন্টু চাকমা, গবেষণা কর্মকর্তা কাইংওয়াই ম্রো, তথ্য অফিসার ডজী ত্রিপুরা, পনেল বড়য়া সহকারী প্রকৌশলী (ভাঃপ্রাঃ), সাগর পাল প্রশাসনিক কর্মকর্ত, সহকারী পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনতোষ চাকমাা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।