বুধবার | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়ি

সুদৃষ্টি চান সুদর্শন, নতুন মুখ অলিভ

প্রকাশঃ ২৪ মে, ২০২৪ ০৮:৪৪:২২ | আপডেটঃ ২৬ নভেম্বর, ২০২৪ ০৯:৫৫:০৯  |  ১৬১৪
বিশেষ প্রতিনিধি, সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে উপজেলাটির। ভারত সীমান্তবর্তী বাঘাইছড়ি সীমান্তের উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, পূর্বে মিজোরাম। পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলসমূহের অবস্থান ও নানা ঘটনাবলির কারণে পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলাও এই বাঘাইছড়ি। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দৃশ্যত জাতীয় রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী নেই এখানে। একজন প্রার্থী সরাসরি আঞ্চলিক রাজনীতির ‘গুরুত্বপূর্ণ মুখ’ হিসেবে পরিচিত; আরেকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও ভোটের মাঠে আঞ্চলিক দল ভর করেই। তবে নির্বাচনী প্রচারে ভোটের মাঠ গরম রেখেছেন চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ৯ প্রার্থীই।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৮ মে রাঙামাটির চারটি উপজেলা; রাঙামাটি সদর, বরকল, জুরাছড়ি ও কাউখালীতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় ধাপের ভোটে ২১ মে জেলার কাপ্তাই, বিলাইছড়ি ও রাজস্থলী ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ রাঙামাটির শেষ ধাপে ভোট হবে বাঘাইছড়ি, লংগদু ও নানিয়ারচরে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ভোটে চেয়ারম্যান পদে চার উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও তিন উপজেলায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস নেতারা বিজয়ী হয়েছেন।

তবে শেষ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য হলেও জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে বাঘাইছড়ির ভোটকেই দেখছেন স্থানীয় ভোটাররা। দৃশ্যত আঞ্চলিক দলের মধ্যকার এই ভোটযুদ্ধে বাঘাইছড়ি উপজেলায় লড়ছেন দুইবারের উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা। নির্বাচনে তার প্রতীক ঘোড়া। তিনি পঞ্চম ও তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। সুদর্শন চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক। উপজেলায় উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও পাহাড়ে চলমান ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধে ভূমিকা রাখার প্রত্যয়ে জনগণের ফের সুদৃষ্টি চান সুদর্শন চাকমা।

অন্যদিকে, সুদর্শনের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে আছেন বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদ্য-সাবেক চেয়ারম্যান অলিভ চাকমা। তিনি মূলত উপজেলার ভোটে অংশগ্রহণ করতেই ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। নির্বাচনে তার প্রতীক আনারস। অলিভ চাকমা রাঙামাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে থাকলেও নির্বাচনের মাঠে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কম দেখা যাচ্ছে। মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) তাকে ভোটে সমর্থন জানিয়েছে। অলিভ চাকমার সমর্থকরা বলছেন জনগণ ভোট দিতে পারলে তিনিই হবেন দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলার আগামীদিনের কা-ারি।

দুইবারের চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমার সঙ্গে আছে তাঁর রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) ও ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (গণতান্ত্রিক)। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো জাতীয় রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী নির্বাচনে না থাকলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বৃষকেতু চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সুদর্শনের পক্ষে নির্বাচনের দৌঁড়ে আছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুপিটার চাকমা বলেন, ‘বাঘাইছড়ি উপজেলায় আমাদের দলের সমর্থিত প্রার্থী সুদর্শন চাকমা। তিনি দুইবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এবং বর্তমান পরিষদেও সফলতার সঙ্গে দায়িত্বপালন করে আসছেন। বাঘাইছড়ি উপজেলায় চলমান উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধে সুদর্শন চাকমার কোনো বিকল্প নেই। আমরা প্রত্যাশা করছি আগামী ২৯ মে’র ভোটে সেই জনগণ রায় দেবেন।’

এদিকে, সাজেকে নির্বাচনী প্রচারে থাকায় আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী অলিভ চাকমার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তাকে সমর্থনকারী পাহাড়ের আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চাকমা বলেন, ‘জনগণ চাইছে বাঘাইছড়িতে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ ভোট হোক। কোনো প্রার্থীই যেন নির্বাচনে প্রভাব-বিস্তার করতে না পারে। নির্বাচনে যেহেতু আমাদের সরাসরি কোনো প্রার্থী নেই; তাই আমরা চেয়ারম্যান পদে অলিভ চাকমা, ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিখিল জীবন চাকমা ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুমিতা চাকমাকে সমর্থন জানিয়েছি। জনগণ বলছেন অলিভ চাকমা নির্বাচনে বিজয়ী হলে আগামী পাঁচবছর বাঘাইছড়িতে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে। তবে যদি পুরনো ব্যক্তি আবারও আসেন সেক্ষেত্রে হানাহানি-খুনোখুনি বাড়তে পারে। সবকিছু মিলে আমরা ভোট নিয়ে উদ্বিগ্ন আছি।’

এই উপজেলায় ভাইস চেয়ারমানে পদে প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন; তারা হলেন বই প্রতীকে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম (বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান), তালা প্রতীকে দীপ্তিমান চাকমা, উড়োজাহাজ প্রতীকে নিখিল জীবন চাকমা, চশমা প্রতীকে মো. আনোয়ার হোসেন ও টিউবওয়েল প্রতীকে লড়ছেন মো. মনসুর আলী। অন্যদিকে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সাগরিকা ফুটবল প্রতীক (বর্তমান মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান) ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুমিতা চাকমা প্রজাপতি প্রতীকে। ভোটাররা বলছেন, মূলত দুজন করে প্রার্থী হওয়ায় চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেই দৃঢ় ভোটযুদ্ধ হবে বাঘাইছড়িতে।

প্রসঙ্গত, তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিতব্য রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৭৮ হাজার ২৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৪০ হাজার ৭৯৬ জন, নারী ভোটার ৩৭ হাজার ২৩২ এবং হিজড়া রয়েছেন ১ জন। ভোটকেন্দ্র ৩৯টি।

রাঙামাটি |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions