বৃহস্পতিবার | ২৮ মার্চ, ২০২৪

বান্দরবানে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উপলক্ষে ক্ষুদ্র নৃগোষ্টিদের মধ্যে উৎসবের আমেজ

প্রকাশঃ ১৯ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:৩৩:৩৫ | আপডেটঃ ২৮ মার্চ, ২০২৪ ০১:৫৪:১৭  |  ৫৫৯
সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। মারমা সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব “ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে” যা শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা নামে পরিচিত।

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা পুরো তিন মাস বর্ষাবাস পালন করার পর অপেক্ষায় থাকে এই দিনটির জন্য। এসময় ক্ষুদ্রনৃগোষ্টি পল্লীগুলোতে উৎসবের প্রস্তুতির মধ্যে থাকে নানারকম আমেজ ও আনন্দ। প্রতিবছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা এই উৎসবটি পালন করে থাকে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে গেল বছর পাহাড়ে “ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে ” উৎসব থাকলেও তেমন আনন্দ বা প্রাণ ছিলনা বললেই চলে। শুধুমাত্র স্বল্প পরিসরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে উৎসবটি পালন করতে হয়েছে এই সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীদের।

তবে সাধারণ মানুষ করোনার টিকার আওতায় আসার পাশাপাশি দেশে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে,তাই চলতি বছর কিছুটা আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারে পাহাড়ের ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে।

এদিকে “ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে” (শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা) কাছে আসায় অতি আনন্দের মধ্য দিয়ে দিন গুণছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্টিরা আর পাহাড়ী পল্লীগুলোতে ধুম পড়েছে উৎসবের আমেজে। এই বছরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি পালনে কড়াকড়ি নির্দেশনা থাকবে এমনটিই জানিয়েছেন বান্দরবান প্রবারণা উৎসব উদযাপন পরিষদ।

জানা যায়,চলতি মাসের ২০শে অক্টোবর বান্দরবানে শুরু হচ্ছে মারমাদের ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে। বান্দরবানে মারমাদের ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে” উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে মঙ্গল শোভা রথযাত্রা। সন্ধ্যায় পুরাতন রাজবাড়ীর মাঠ হতে রথের ওপর বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে রথটি টেনে পুরো শহর ঘুরিয়ে বৌদ্ধ বিহারে রাখা হবে।

২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় আবার রথ টেনে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মধ্যরাতে সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হবে এবারের প্রবারণা উৎসবের। এসময় পূণ্য লাভের আশায় ভগবানের উদ্দেশ্যে নগদ টাকা দান, মোমবাতি জ্বালিয়ে বুদ্ধ মূর্তিকে পূজা করবে পূজারীরা। রথের পিছনে সর্বস্তরের মানুষ মারমাদের ঐহিত্যবাহী গান গেয়ে ঢোল বাজিয়ে সকলকে উৎসাহের যোগান দিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠবে।


এদিকে অনুষ্ঠানের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে তৈরি করা হচ্ছে ভয়ংকর আকৃতির পুতুল। আর নির্মিত পুতুলের ভিতরে মানুষ প্রবেশ করে নাচের মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দেয়। সেইদিন রাতের এই রথযাত্রা দেখার জন্য রাস্তার দুপাশে উপচেপড়া ভিড় জমবে সাধারণ জনগণ ও পূজারীদের। যেহেতু বান্দরবান সম্প্রীতির জেলা নামে পরিচিতি সেক্ষেত্রে জাতি ভেদাভেদ ভুলে অন্যান্য সম্প্রদায়ের জনগণ একযোগে এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করে থাকে। সেই সময়টা এক মিলনমেলায় পরিণত হয় পুরো বান্দরবান। তাছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ার এবারে মারমাদের ওয়াগ্যোয়াই উৎসব উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকদের অসংখ্য আগমণ ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

বান্দরবান সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত এমেসিং মার্মা বলেন, প্রত্যেক বছর এই দিনটির জন্য আমরা অধির আগ্রহে বসে থাকি। গেল বছর ঘরের গন্ডির ভিতরে ধর্মীয় পূজার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দেশে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এবারে পুরোদমে বন্ধু-বান্ধবের সাথে মজা করা, একযোগে ফানুস উড়ানো, পিঠা তৈরি উৎসব, রথ যাত্রায় দলবেঁধে অংশগ্রহণ করতে পারবো।

বান্দরবানের মধ্যম পাড়ার মংচিং মারমা বলেন,করোনার কারণে গতবছর প্রবারণার আনন্দ উদযাপন করতে পারিনি, তবে এবছর আনন্দঘন মুহত্বটি স্বপরিবারে উপভোগ করার ইচ্ছা আছে। মঙ্গল রথযাত্রা বিসর্জনের সাথে বিশ্ব থেকে করোনা আমাদের কাছ থেকে দূর হবে এই প্রত্যাশা করছি।

বান্দরবান ওয়াগ্যোইয়া পোয়ে উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শৈটিংওয়াই মারমা জানান, এবারে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের “ওয়াগ্যোইয়া পোয়ে” (প্রবারণা পূর্ণিমা) দুই দিনব্যাপী অনুষ্টান হবে, ২০ ও ২১ অক্টোবর। 




ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে বান্দরবান ওয়াগ্যোইয়া পোয়ে উৎসব উদযাপন পরিষদ সমন্ধয় করে এই উৎসব উদযাপন করবে।করোনার কারণে সীমিত আকারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার পাশাপাশি সামাজিক অনুষ্ঠান,পিঠা তৈরি উৎসব, মঙ্গল রথযাত্রা ও ফানুস উড়ানো, গুরুত্বপূর্ণস্থানে আলোক সজ্জা করা হবে। উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শৈটিংওয়াই মারমা আরো জানান, ২০শে অক্টোবর সন্ধ্যায় পুরাতন রাজবাড়ীর মাঠ হতে রথের ওপর বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে রথটি টেনে পুরো শহর ঘুরিয়ে বৌদ্ধ বিহারে রাখা হবে। আবার ২১অক্টোবর সন্ধ্যায় রথ টেনে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মধ্যরাতে সাঙ্গু নদীতে রথ বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হবে এবারের প্রবারণা উৎসবের। সাধারণ সম্পাদক শৈটিংওয়াই মারমা আরো জানান, সরকারের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবারের অনুষ্ঠানগুলি আয়োজন করা হবে,অনুষ্ঠানমালা সুন্দর ও সার্থক করতে সুশীল সমাজসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।
 
বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল  ইসলাম জানান, উৎসবকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্যে নিরাপত্তা জোরদারের যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছ। প্রত্যক বৌদ্ধ উপসনালয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়ন করা হবে।

প্রসঙ্গত, আদিকাল থেকে তিন মাস ব্যাপী বর্ষাবাস (উপোস) থাকার পর মারমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীরা ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ব্যাঁপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎসব পালন করে আসছে। কথিত আছে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তাঁর মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন , তাই আশ্বিনী পূর্ণিমার এই তিথিতে বৌদ্ধধর্মলম্বীরা আকাশে ওড়ায় শত শত ফানুস বাতি। নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবছরই নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্টান,রথযাত্রা আর ফানুস বাতি বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে ভগবান বুদ্ধকে স্মরণ করেন ভক্তরা।



বান্দরবান |  আরও খবর
এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions