কৌশিক দাশ, সিএইচটি টুডে ডট কম, বান্দরবান। সবার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াস আর সদিচ্ছা যে একটি সমাজকে বদলে দিতে পারে তার দৃষ্টান্ত হতে পারে বান্দরবানের প্রত্যন্ত অঞ্চল লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ। শুধু শিক্ষা নয়, খেলাধুলা, সংস্কৃতি চর্চা সব কিছুতেই শীর্ষে এখানকার ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও আছে তাদের। তাই তো তারা স্বপ্ন দেখে খেলাধুলার সর্ববৃহৎ আসর অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের। তাদের প্রতিদিনকার অনুশীলনই বলে দেয়, একদিন ওরা সফলতার চূড়ায় পৌঁছাতে পারবে।
সামর্থ্য আর অর্জনের দিক থেকে স্বপ্ন আকাশ ছোয়ার মতো হলে ও যাদের প্রচেষ্টা আর নিয়মানুবর্তিতার কাছে সেই স্বপ্ন পূরণই যেন মামুলি ব্যাপার। তাইতো লক্ষ্য পুরণের জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক হাজার ফিট উপরে পাহাড়ের চূড়ায় তাদের জন্য তৈরী করা হয়েছে গ্রাউন্ড অলিম্পিয়াড, যেখানে রোজই চলে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির ২ হাজার ২শত ৩ জন আবাসিক শিক্ষার্থীকে পাঠদানের পাশাপাশি সব সুযোগ দিয়ে আসছে স্কুলটি। এক কথায় পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একটি শিশুর প্রয়োজনীয় সবকিছুই দেয়া হচ্ছে এখানে। আর লেখাপড়ার পাশাপাশি দুর্গম পাহাড়ে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে থেকে শিক্ষা সংস্কৃতি ও খেলাধুলার বিকাশ করতে পারায় খুশি শিক্ষার্থীরা। ২০২৪ সালে অলিম্পিক গেমসে এই প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীরা স্বর্ণ জয়ের আশায় তাই কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র রাজীব চাকমা বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি দুর্গম পাহাড়ে এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে থেকে শিক্ষা সংস্কৃতি ও খেলাধুলার বিকাশ ঘটছে । আমরা এই প্রতিষ্টানে লেখাপড়া করে অনেক এগিয়ে যাচ্ছি ।
কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী সাগরিকা ত্রিপুরা বলেন, কোয়ান্টাম কসমো স্কুলের লেখাপড়া করে আমরা ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছি । দুর্গম পাহাড়ে লেখাপড়া করলে ও আমরা সমতলের মত সকল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি । আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক পুরস্কার অর্জন করেছি। আমাদের এবারের লক্ষ্য ২০২৪ সালে অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়।
কোয়ান্টাম কসমো কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র কিতং মারমা বলেন,আমাদের শিক্ষকরা আমাদের খুব ভালোভাবে লেখাপড়া ও খেলাধুলা শিখিয়ে আমাদের আলোকিত মানুষের মত গড়ে তুলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এই কোয়ান্টাম কসমো কলেজের প্রতিটি শিক্ষার্থী তাদের প্রতিদিনের কর্মকান্ডে নিয়মাবর্তিতা পালন করে তাদের জীবন সুন্দর করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে।আমাদের সকলের সামনে এখন একটা প্রত্যাশা ২০২৪ সালে অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ পদক জয় লাভ করা।
খেলা-ধুলার পাশাপাশি শিশুদের সংস্কৃতি চর্চায়ও নেই কোন কমতি। নৃত্য, গান, বাদ্যযন্ত্র প্রশিক্ষণ,অভিনয় সবক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নজর কেড়েছে এসব ক্ষুদে শিল্পী। জেলা, বিভাগ এমনকি জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও শীর্ষ স্থান দখল করছে ওরা,আর শিশুদের উন্নত জীবন গড়তে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের এই প্রতিষ্ঠানে ভুমিকাকে আলোর বর্তিকা হিসেবে দেখছে সকলে। ক্রীড়াক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রয়েছে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজের ব্যাপক সাফল্য।এই পর্যন্ত এই প্রতিষ্টান আরচ্যারিতে ১টি ব্রোঞ্জ পদক,জিমন্যাস্টিকসে ১টি ব্রোঞ্জ পদক,খো খো তে ২০টি রৌপ্য এবং হ্যান্ডবলে ১টি রৌপ্য ও ২টি ব্রোঞ্জ পদক লাভের গৌরব অর্জন করে।
কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের প্রধান ক্রীড়া প্রশিক্ষক কিশোর কুমার খীসা বলেন,জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে কোয়ান্টামের শিশু শিক্ষার্থীরা, আর ২০২৪ সালের অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ পদক জয়ের স্বপ্ন নিয়ে কঠোর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এখানকার শিক্ষার্থীদের।আমরা আমাদের প্রতিটি কোয়ান্টাকে যতœ করে শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিনই ব্যায়াম অনুশীলন করে থাকি ,আর যারা বিভিন্ন ইভেন্টে ভালো ফলাফল করে থাকে তাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নেয়ার সুযোগ দেই।
কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ ছালেহ আহমেদ বলেন, আমাদের একটাই মনছবি ২০২৪ সালের অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ পদক জয়ের স্বপ্ন,আর এই স্বপ্নকে লালন করেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ,আশা করি আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌছাঁব।
সম্প্রতি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো:জাহিদ আহসান রাসেল ,এমপির সফর উপলক্ষে এখানে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ প্যারেড,জিমন্যাস্টিক শো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অনুষ্টিত হয়। তাদের পরিবেশনায় মুগ্ধ হন মন্ত্রী। আগামী দিনে এই প্রতিষ্টানের উন্নয়নে যে কোন সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানান ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী।এসময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো:জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া ও খেলাধুলা বিকাশে,আগামী দিনে এই প্রতিষ্টানের আরো উত্তোরত্তের সমৃদ্ধি আমি কামনা করি, আর কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের উন্নয়নে কোন সহযোগিতা প্রয়োজন হলে আমি তাদের পাশে থাকবো।
শিক্ষার পাশাপাশি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় পারদর্শী করে তুলছে পাহাড়ের এই কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ,আর আগামী দিনে দেশ জাতির কল্যাণে কাজ করবে এই শিশুরাই এমনটাই আশা সকলের।