স্বপরিবারে বৌদ্ধ বিহার বর্জনের ঘোষণা
বিলাইছড়িতে দীপঙ্কর ভান্তের কার্যকলাপে অসন্তোষ হয়ে বিহার সভাপতির পদত্যাগ
প্রকাশঃ ২৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০৬:১৬:৫৪
| আপডেটঃ ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:৫২:০১
|
২৩৪৪২
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটির বিলাইছড়িতে অবস্থানরত দীপঙ্কর ভান্তে নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং সংশ্লিষ্ট বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতির মধ্যকার ধর্মীয় নীতি নিয়ে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ। দীপঙ্কর ভান্তের কার্যকলাপে অসন্তোষের জেরে নিজ দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ এবং স্বপরিবারে ভান্তেসহ তার অবস্থান করা বিহারটি বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন, ফারুয়া ধুতাঙ্গ বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও হেডম্যান (মৌজাপ্রধান) সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যা। বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের এগুজ্জ্যাছড়ি নামক পাহাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত কার্যকলাপ নিয়ে ওই বৌদ্ধ ভিক্ষুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যাসহ তার পরবিারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মতবিরোধ চলে আসছে। ভান্তের কার্যকলাপে শ্রদ্ধাশীল হতে না পারায় এক পর্যায়ে পরিবারের অগোচরে আত্মগোপনে চলে যায় সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে তুফান তঞ্চঙ্গ্যা (২৮)। তার আত্মগোপনের বিষয়টিকে অপহরণ ধারণা করে আশঙ্কা তৈরি হয় পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে। বেশ কিছুদিন পর সন্ধান পেয়ে স্বজনদের কাছে অভিমানের বিষয়টি প্রকাশ করে তুফান তঞ্চঙ্গ্যা।
এদিকে দীপঙ্কর ভান্তের কার্যকলাপকে বৌদ্ধ ধর্মবিরোধী বলে মন্তব্য করছে বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যা (তুফানের বাবা) ও তার পরিবার। এ বিষয়ে শনিবার সংবাদ মাধ্যমে এক যৌথবিবৃতি দিয়েছেন সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যা ও তার স্ত্রী মন্দুরী তঞ্চঙ্গ্যা। বিবৃতিতে দীপঙ্কর ভান্তের কার্যকলাপে অসন্তোষ প্রকাশ করে স্বপরিবারে ভান্তে ও তার অবস্থান করা ফারুয়া ধুতাঙ্গ বৌদ্ধ বিহার বর্জনসহ সভাপতি হতে পদত্যাগ ঘোষণা করেছেন সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যা।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমি মহামানব গৌতম বুদ্ধের প্রবর্তিত পবিত্র বৌদ্ধ ধর্মের মূলীতি ‘অহিংসা পরম ধর্মের’ প্রতি সব সময় নতশির। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের মূলমত্র মতে দীপঙ্কর ভান্তের সদ্ধর্ম প্রচারে আমি ব্যক্তিগতভাবে অমিল ও গড়মিল অনুভব করছি। তার কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বৌদ্ধ ধর্মের মূলমত্রের বিপরীত। তাই কারও কোনো প্ররোচনা ছাড়া স্বজ্ঞানে ও সুস্থ মস্তিস্কে বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে পদত্যাগ করেছি। ২৮ এপ্রিল হতে আমার পরিবার দীপঙ্কর ভান্তের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে এবং তার বিহারে আমরা কেউ যাব না।
সমূল্য তঞ্চঙ্গ্যার স্ত্রী মন্দুরী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, কিছু দিন আগে আমার ছেলে তুফান কাউকে কিছু না বলে হঠাৎ বাড়ি হতে এলাকার বাইরে চলে যায়। বিষয়টি এলাকায় অপহরণ বলে প্রচার হয়। আসলে তাকে কেউ অপহরণ করেনি। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, আামার ছেলে তুফান তঞ্চঙ্গ্যা দীপঙ্কর ভান্তের কার্যকলাপে শ্রদ্ধাশীল নয়। সে আমাদেরকে বারবার দীপঙ্কর ভান্তের বৌদ্ধ ধর্মের নীতি বিরোধী কার্যকলাপ ত্যাগ করতে বলেছিল। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পরিবারে মতবিরোধ চলে আসছিল। কিন্তু আমরা তার কথায় সাড়া না দেয়ায় সে পরিবারের অগোচরে আত্মগোপনে চলে যায়। এখন আমরা দীপঙ্কর ভান্তের কার্যকলাপ নিয়ে প্রকৃত উদ্দেশ্য বুঝতে পারায় ছেলে তুফানের মতের সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছি। আমাদের এ ঘোষণা প্রচারের পর ছেলে তুফান তার সব মান অভিমান ভুলে মা-বাবার কোলে ফিরে আসবে বলে আমরা আশা করছি।