সরকারি লম্বা ছুটিতে রাঙামাটির ৭০-৮০ শতাংশ হোটেল-মোটেল বুকিং

সিএইচটি টুডে ডট কম,  রাঙামাটি।  ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে টানা ৫ দিনের ছুটি মিলেছে চাকুরিজীবীদের। উৎসব-ছুটিকে কেন্দ্র করে যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি-অবসাদ কাটাতে অনেকেই ছুটে আসেন পাহাড়ে। তবে এবার দুইটি উৎসব ঘিরে টানা পাঁচদিনের ছুটিতে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক সমাগমের প্রত্যাশা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা ছুটিতে পর্যটক সমাগমের প্রত্যাশায় আগাম প্রস্তুতি সেরে নেওয়া হয়েছে। সাজসজ্জা থেকে শুরু করে হোটেল ব্যবস্থাপনায় নতুনত্ব এনেছেন অনেকেই। ইতোমধ্যে জেলা শহর ও সাজেক ভ্যালি পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রের হোটেল-রিসোর্ট-কটেজের ৭০-৮০ শতাংশ রুম বুকিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।

ট্যুর গাইডরাও জানিয়েছে, পর্যটকদের সেবায় তারা বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে ঘুরে দেখানোর জন্য নানা রকমের প্যাকেজ চালু করেছেন। রাঙামাটি জেলা শহর এবং আশপাশের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রসমূহের মধ্যে রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যক, কাপ্তাই হ্রদ, নীলাঞ্জনা বোট ক্লাব, ডিভাইন লেক, রাঙাদ্বীপ, বার্গী লেকভ্যালি, বেরাইন্না, বড়গাঙ, ইজোর, হিল তাজ, রাজবন বিহার, দৃষ্টিনন্দন আসামবস্তি-কাপ্তাই সংযোগ সড়ক। এছাড়া কাপ্তাই উপজেলার প্রশান্তি পার্ক, জুম রেস্তোরাঁ, প্যারাডাইস, নিসর্গ পড হাউজ প্রভৃতি; বিলাইছড়ির নীলাদ্রি রিসোর্ট। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়ির সাজেক ভ্যালি উপত্যকায় সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে বছরজুড়েই।

বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখের আমেজ সারাদেশের চেয়ে পাহাড়ে একটু বেশি। পাহাড়ের অধিবাসী বিভিন্ন নৃ-তাত্ত্বিকগোষ্ঠীর নিজস্ব জাতি ও সংস্কৃতি হিসেবে আলাদা আলাদাভাবে বাংলা নববর্ষকে বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই৷ সাংক্রান, বিষু ও বিহুসহ বিভিন্ন নামে পালন করে থাকেন। এটি পাহাড়ের প্রধান সামাজিক উৎসবও। যে কারণে নববর্ষে উৎসব আমেজে মেতে উঠে পুরো পাহাড়। আনন্দের ছড়িয়ে পড়ে পাহাড়ি গ্রাম-পল্লীতে।

জানতে চাইলে রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, এবারে দুইটা উৎসব একত্রিত হয়েছে। একদিকে ঈদ, আরেকদিকে নববর্ষ; যেটা রাঙামাটিতে বিজু উৎসব নামে পালিত হয়। একই সময়ে দুইটা উৎসবের কারণে আমরা প্রত্যাশা করছি রাঙামাটিতে আশানুরূপ পর্যটকে সমাগম ঘটবে। পর্যটকদের সেবায় আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের ৮০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে আছে।

জেলা শহরের রিজার্ভবাজার এলাকায় অবস্থিত হোটেল মতিমহলের স্বত্ত্বাধিকারী মো. শফিউল আজম বলেন, ঈদকে ঘিরে আমাদের হোটেলের বুকিং অবস্থা অনেক ভালো। এখন পর্যন্ত ৭০-৮০ শতাংশ রুম বুকিং আছে। আশাকরি এবারের ঈদে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ছাড়াও খাতসংশ্লিষ্টরা ভালো ব্যবসা করবেন।

রাঙামাটি জেলা আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এবারের ঈদে ছুটিতে রাঙামাটিতে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটকের সমাগম হবে আমরা প্রত্যাশা করছি। ইতোমধ্যে জেলা শহরে অবস্থিত হোটেল-মোটেলগুলোতে ৬০-৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। ঈদ ঘিরে আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসা করতে পারবেন আশাকরি। মেঘ পাহাড়ের উপত্যকা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ভ্যালি। সাজেক ভ্যালি পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রে গড়ে উঠেছে শতাধিক রিসোর্ট-কটেজ। ঈদ ও নববর্ষ উৎসবে রেকর্ড পর্যটক সমাগমের প্রত্যাশা করছেন সাজেকের ব্যবসায়ীরাও।

সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিংথাং জাওয়া লুসাই জেরি বলেন, আমাদের সমিতির নিবন্ধনভুক্ত ১১২টি রিসোর্ট-কটেজ রয়েছে। আগামী ১২-১৩ এপ্রিলের জন্য বুকিং রয়েছে, আশাকরি এই দুইদিন শতভাগ বুকিং থাকবে। দুইটি উৎসব একই সময়ে হওয়ার কারণে রেকর্ড পর্যটক আসতে পারেন সাজেকে।

জানতে চাইলে রাঙামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, রাঙামাটি জেলায় এবার পর্যটক সমাগম বাড়বে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। তবে বান্দরবানের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তার কিছুটা প্রভাব অবশ্যই পাহাড়ের পর্যটনশিল্পে পড়বে। যদিও সেটি খুব বেশি পরিমাণে না। নিরাপত্তাজনিত শঙ্কা থেকেই পর্যটক আগমন কিছুটা হ্রাস হবে। যে কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। তবে বান্দরবান থেকে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে পর্যটক বেশি হবে।

তিনি আরও বলেন, রাঙামাটির পর্যটন সেক্টরের উন্নয়নে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রামের রাউজানের কারণে আমরা অনেকাংশে পিছিয়ে আছি। খাগড়াছড়ি থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতের জন্য সরাসরি বাসের সুযোগ থাকলেও রাঙামাটির ক্ষেত্রে নেই। সরাসরি বাস যাতায়াতের সুযোগ থাকলে পর্যটক আরও বাড়বে। অনেকেই চট্টগ্রামে এসে আর রাঙামাটিতে বেড়াতে আসতে চান না। তবে স্থানীয় উদ্যোগ ও শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাসহ নানাভাবেই এখানকার উদ্যোক্তা ও খাতসংশ্লিষ্টরা প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন।