সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। সাফ
নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সেরা
গোল রক্ষক রূপনা চাকমার
পরিবারকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয় থেকে রূপনা চাকমার
পরিবার ঘর করে দেওয়ার
মৌখিক নির্দেশনা এসেছে বলেও জানিয়েছেন
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক। ইতোমধ্যে
নানিয়ারচর ইউএনও ও উপজেলা
প্রকৌশলী রূপনা চাকমার বাড়িতে
গিয়েছেন সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে।
রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড ভূঁইয়াদাম
গ্রামে রূপনা চাকমার বাড়ি। পরিবারের
চার ভাই-বে নের
মধ্যে রূপনা চাকমা সবার
ছোট। পরিবারের
একমাত্র অভিভাবক রূপনা চাকমার মা। ঘরবেলা
থেকেই প্রতিকূল পরিবেশে তাদের বেড়ে ওঠা। নেই
ভালো ঘরবাড়ি, পারিবারিক স্বচ্ছলতা। নানান
প্রতিকূলতা ও সমাজের টিপ্পনীকে
ডিঙিয়ে যখন দেশের জন্য
সাফ জিতিয়ে নিলেন, সেরা
গোল রক্ষক হলেন- তখন
সকলের মুখেমুখে প্রশংসার জুড়ে নেই, অথচ
রূপনাদের বেড়ে উঠা ও
এই পর্যায়ের আসা পথ কখনোই
মসৃণ ছিল না।
গত সোমবার নেপালের রাজধানী
কাঠমন্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে
বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাফ
নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবারের
মতো শিরোপার জয়ী হয় বাংলাদেশ
নারী ফুটবল দল।
এই ফুটবল টিমেই আছেন
পাহাড়ের ৫ কৃতী ফুটবলার। রাঙামাটির
দুজন, খাগড়াছড়ির তিনজন ও একজন
সহকারী কোচ। পাহাড়ের
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ওঠে
আসা রূপনা-আনাইয়ের সাফল্যে
ভাসছে পুরো দেশ।
এদিকে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের
জিরোপা জেতায় বাংলাদেশ নারী
ফুটবল দলের খেলোয়াড় রিতুপর্ণা
চাকমা ও রূপনা চাকমা
পরিবারকে মঙ্গলবার দেড় লাখ টাকা
করে ৩ লাখ টাকা
দিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন।
এদিন বিকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ
মিজানুর রহমান রূপনা চাকমার
বাড়িতে যান। এসময়
তিনি রূপনা চাকমার মায়ের
হাতে দেড় লাখ টাকার
চেক হস্তান্তর করেন। তখন
পরিবার ও রূপনাদের ঘরবাড়ির
অবস্থা দেখে ঘর দেওয়ার
আশ্বাস দেন জেলাপ্রশাসক।
পাশাপাশি রূপনা ও রিতুপর্না
চাকমার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাঘাট
ও ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাসও
দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বুধবার বিকালে রূপনা চাকমার
পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার
বিষয়টি জানিয়ে জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ
মিজানুর রহমান বলেন, সকালে
রূপনা চাকমার পরিবারকে ঘর
করে দেওয়ার জন্য নির্দেশনা
এসেছে। আমি
নানিয়ারচর ইউএনওকে দ্রুত কাজ করার
জন্য বলেছি। ইউএনও
এবং এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী এখন
রুপনা চাকমার বাড়ীতে গেছেন ।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে
সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবল দলের
সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমার বাড়ির
পর ঋতুপর্না চাকমার বাড়িতেও যান
জেলাপ্রশাসক। তিনি
দুজনের পরিবারকেই দেড় লাখ টাকা
হারে ৩ লাখ টাকা
দিয়েছেন। এসময়
তাঁর সঙ্গে জেলা প্রশাসনের
অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম,
জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক
খেলোয়াড় ও জেলা ক্রীড়া
সংস্থার সহ-সভাপতি বরুণ
বিকাশ দেওয়ান, জেলা মহিলা ক্রীড়া
সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নিরূপা
দেওয়ানসহ আরো অনেকেই উপস্থিত
ছিলেন।
একসময়ে রূপনা, ঋতুপর্না, মনিকা,
আনাই মগিনি ও আনুচিং
মগিনিদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দিয়েছেন
রাঙামাটির ঘাগড়ার বাসিন্দা কোচ
শান্তি মনি চাকমা।
শান্তি মনি চাকমা বলেন,
আমাদের মেয়েদের সাফল্য দেখে গর্ব
হয়, সারাদেশের মানুষ উচ্ছ্বসিত।
অথচ তারা কত প্রতিকূলতার
মধ্য দিয়ে এ জায়গায়
এসেছে সেটা আমরাই জানি। কেউই
তাদের খোঁজ রাখেনি, তারা
কেমন পরিবার থেকে উঠে
এসেছে সেটা তো এখন
দেশের মানুষ দেখছে।
তাদের পাশে সরকারের দাঁড়ানো
দরকার। সরকারি
সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এমন রূপনা
চাকমারা দূর পাহাড় থেকে
আলো ছড়িয়ে দেশের মুখ
উজ্জ্বল করবে।
রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার
সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আজম
বলেন, রূপনা-ঋতুপর্নাদের জেলা
ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা
দেওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে ভাবছি। সংস্থার
সভাপতি ও এমপি মহোদয়ের
সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা শিগগিরই
সিদ্ধান্ত নেব।
প্রসঙ্গত, সোমবার সাফ নারী
চ্যাম্পিয়নশিপের জিরোপা জেতায় বিজয়ী
দলের খাগড়াছড়ির তিন খেলোয়াড় খেলোয়াড়
ও এক কোচের জন্য
আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন খাগড়াছড়ি
জেলাপ্রশাসন। খাগড়াছড়ির
মনিকা চাকমা, আনাই মগিনি
ও আনুচিং মগিনি এবং
দলের সহকারী কোচ তৃষ্ণা
চাকমাকে ১ লাখ টাকা
করে প্রণোদনা দেয় প্রশাসন।
এরমধ্যে আনাই ও আনুচিং
যমজ বোন।