সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। করোনার ২বছর পর আবারো পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীসমুহ ৯আগষ্ট আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস পালন করবে, আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করার বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত চিঠিতে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ। সরকার পঞ্চদশ সংশোধনীতে পাহাড়ীদের ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও পাহাড়ীরা আদিবাসী হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “ ঐতিহ্যগত বিদ্যা সংরক্ষন ও বিকাশে আদিবাসী নারী সমাজের ভুমিকা”।
জানা গেছে, রাঙামাটিতে কাল মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে নয়টায় শহরের পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে ৯ আগষ্টের কর্মসুচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য মাধবীলতা চাকমা ও প্রধান অতিথি হিসেবে রাঙামাটির সাবেক সংসদ সদস্য ও জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সংগঠনটির পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তব্য রাখবেন- জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রাঙামাটি শাখার সভাপতি দীপন কুমার ঘোষ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী লেখক ফোরামের সাবেক সভাপতি শিশির চাকমা ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি এডভোকেট ভবতোষ দেওয়ান প্রমুখ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আলোচনা সভা, পাহাড়ি নৃত্য-ডিসপ্লে প্রদর্শনের কথা রয়েছে। এছাড়া সকাল সাড়ে ১১টায় পৌরসভা প্রাঙ্গণ হতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ৯ আগষ্ট দিবসটির রাঙামাটির উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি তালুকদার বলেন, ৯ আগস্ট জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ''ঐতিহাসিক বিদ্যা সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারী সমাজের ভূমিকা'। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে র্যালিসহ নানান আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশে মোট ৫৪টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে আসছেন, আমরা তাদের মৌলিক ও সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য দাবি জানিয়ে আসছি।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন হিলর ভালেদী ও হিলর প্রোডাকশনের সভাপতি নিপায়ন চাকমা বলেন, আমরা দীর্ঘকাল এই পাহাড়ে বসবাস করে আসছি। আমাদের চাকমাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী আমরাও আদিবাসী। কিন্তু রাষ্ট্র আমাদের আদিবাসী স্বীকৃতি দিচ্ছে না। আমরা ক্ষুদ্র জাতিসত্তা হিসেবে নয়, আদিবাসী হিসাবে নিজস্ব আত্মপরিচয়ে বাঁচতে চাই।
এদিকে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, সংবিধানে আদিবাসী শব্দটি উল্লেখ না থাকলেও উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃ-গোষ্টী রয়েছে। তার মানে এই নয় যে কেউ আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করতে পারবেন না, স্বীকৃতির দাবি জানাতে পারবেন। তথ্য মন্ত্রণালয় মিডিয়ার উদ্দেশে যে আদেশপত্র দিয়েছে তা আমি দেখেছি, আমি বলবো এই আদেশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কোনো শব্দ যদি ব্যবহার না করতে বিধিনিষেধ দেয়া হয়, তবে সেটি আইন প্রয়োগ করে বিধিনিষেধ দিতে হবে। সংবিধানের কোথাও তো ধর্মীয় কিংবা জাতিগত সংখ্যালঘু এই শব্দটিও নেই। তার মানে তো এই নয় সংখ্যালঘু শব্দ ব্যবহার করা যাবে না?