শুক্রবার | ২৯ মার্চ, ২০২৪
কাল রাঙামাটি জেলা আওয়ামালীগের কাউন্সিল, চলছে হিসাব নিকাশ

রাঙামাটি আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে কে আসছেন ?

প্রকাশঃ ২৩ মে, ২০২২ ০৭:১৪:৪৫ | আপডেটঃ ২৪ মার্চ, ২০২৪ ০৬:৫৫:৫৪  |  ১২৭৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। দীর্ঘ ১০ বছর পর কাল মঙ্গলবার (২৪ মে) রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলকে ঘিরে নেতা কর্মীদের মাঝে চলছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা পাশাপাশি চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। কারা এবার গুরুত্বপুর্ণ সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে আসছেন। সভাপতি পদে ২জন এবং সাধারন সম্পাদক পদে ২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর আগে ২০১২ সনের ৮ ডিসেম্বর রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

১৯৯৬ সন থেকে এখনো পর্যন্ত টানা ২৬ বছর ধরে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব  পালন করছেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার এমপি। দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে সভাপতি পদে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস কেউ পাননি। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে কয়েকবার সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। দল টানা ৩ বার ক্ষমতা থাকার সুবাদে তাকে ব্যবহার করে অনেকে অবৈধ সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তোলেছেন, আবার তার বিরুদ্ধে নেতা কর্মীদের সাথে রুঢ় আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন অনেক নেতা কর্মী। দীপংকর তালুকদারের কেন্দ্রের লবিং ভালো থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াতে সাহস পায়নি। এবার কাউন্সিলের পরিস্থিতি ভিন্ন হওয়ায় সভাপতি পদে দাঁড়াচ্ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সচিব পদ মর্যাদায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা। নিখিল কুমার চাকমা ইতিপুর্বে নানিয়াচর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ব্যাক্তি হিসাবে তিনিও অসম্প্রদায়িক পাহাড়ী বাঙালীর কাছে তারও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এদিকে সভাপতি পদের মত সাধারন সম্পাদক পদে ২জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে বর্তমান সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর ও সাবেক সাধারন সম্পাদক হাজী কামাল উদ্দীন। দীপংকর তালুকদার এমপির প্যানেলে সাধারন সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর ও নিখিল কুমার চাকমার প্যানেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী কামাল উদ্দীন।


এদিকে বিগত সময়ে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের আচার আচরন ও দলীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করা এবং ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত রাখা এসব নিয়ে হিসাব নিকাশ চলছে।

জেলা সম্মেলনকে ঘিরে উজ্জীবিত দলের নেতাকর্মীরা। তাদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা। তৎপর হয়ে উঠেছেন প্রার্থীরা। তারা ভোটের জন্য কাউন্সিলারদের  বাসায় বাসায় ধর্ণা দিচ্ছেন। তবে সাধারন কাউন্সিলাররা চান সিলেকশন নয় ইলেকশন।

আওয়ামীলীগ টানা ৩ বার ক্ষমতা থাকার সুবাদে দলকে ব্যবহার অনেকে অর্থ বিত্ত বানিয়েছেন। দলের দুর্দিনের ত্যাগী নেতারা বরাবরের মত বঞ্চিত থেকেছেন।   

শোষণ, বঞ্চনা অবহেলা থেকে দলের অনেক কাউন্সিলার নেতৃত্বের পরিবর্তন চান, তারা চান ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃত্ব আসুক। আবার কেউবা পাহাড়ের বৃহত্তর রাজনীতির স্বার্থে দীপংকর তালুকদারকে সভাপতি হিসাবে দেখতে চান।

রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক রফিক আহম্মদ তালুকদার বলেছেন, পাহাড়ে দীপংকর তালুকদারের বিকল্প নেই, পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি শান্তি চুক্তি করাসহ আওয়ামীলীগকে মডেলে নিয়ে গেছেন। উনার বিকল্প কাউকে আমরা দেখছিনা। আমরা তাকে আজীবন রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসাবে দেখতে চাই।

রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রুবেল বলেছেন, যারা দলে ত্যাগী এবং দু:সময়ে ছিলো তাদেরকেই কাাউন্সিলাররা বেছে নিবেন এমন প্রত্যাশা করছি।  কাউন্সিলরদের অনেকেই বলছেন যে নিখিল কুমার চাকমা কর্মীবান্ধব। আমি মনে করি কাউন্সিলররা অনেক সচেতন। তারা যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নেবেন।

রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ও প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতা আবদুুল মতিন জানান, দাদা, অনেকদিন দায়িত্বে ছিলেন, আবার এক সাথে অনেক দায়িত্ব পালন করার কারণে অনেক সময় তিনি কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কারো সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন না। টেন্ডারবাজি ও চাকুরিতে নিয়োগ বাণিজ্যে করা হয়, কাজ দেয়া হয় সিন্ডিকেটদের, এতে বঞ্চিত হয় নেতা কর্মীরা।

তিনি আরো বলেন, দাদা, কেন্দ্রে আছেন, আমরা উনাকে সংসদ সদস্য ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে দেখতে চাই, তাই  আমরা নেতৃত্ব পরিবর্তনের পক্ষে, আমরা চাই নেতা কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব আসুক।

জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জমির হোসেন জানান, শুধু দেশের নয় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব বিকশিত হয় কাউন্সিলের মাধ্যমে, আগামী ২৪ মে কাঙ্খিত কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আমরা পরিবর্তনের পক্ষে, আমরা আশা করছি কাউন্সিলাররা পরিবর্তনের পক্ষে রায় দিবেন।

বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলার ও জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য অমর কুমার তংচঙ্গ্যা এবং জুরাছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সিন্ধু প্রিয় চাকমা বলেন, বর্তমান নেতৃত্ব অনেক পুরানো, তাই পরিবর্তন দরকার।

বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও কেংড়াছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল মারমা বলেন, দাদা নিজেকে রাজা ভাবেন, অন্যদের প্রজা মনে করেন। দীর্ঘদিন ধরে দলের ত্যাগী নেতা কর্মীরা বঞ্চিত ছিলো, তাদের সাথে চাকরের মত আচরণ করা হয়। কিছু সিন্ডিকেট চক্র বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দকে ঘিরে রেখেছে, দলের সকল সুযোগ সুবিধা তারাই ভোগ করে। কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না, প্রতিবাদ করলে থাকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জীবনের ঝুকি। কিন্তু নেতা কর্মীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা জবাব দিতে চায়, কিন্তু কাউন্সিলারদের নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে।
 

আবারো জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক পদ প্রার্থী হয়েছেন হাজী মুছা মাতব্বর, তিনি  জানান, গত ১০ বছরে রাঙামাটিতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হয়েছে, রাস্তা-ঘাট, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। আমি দায়িত্ব নেবার পর পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেগুলো আঞ্চলিক দলের দখলে ছিলো সেগুলোর অনেকগুলোতে দলের প্রার্থী জিতিয়ে এনেছি। করোনা ভাইরাসসহ নেতা কর্মীদের দুর্দিনে পাশে ছিলাম, তাই আশা করি কাউন্সিলররা আমাকে আবারো নির্বাচত করবেন।

অপর প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী কামালউদ্দিন বলেন, আমি সাড়ে ৪ বছর দলের সাধারন সম্পাদক ছিলাম, আমার আমলে কোন দুর্নীতি হয়নি, আমি সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি, এবারো যদি সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হই তাহলে ত্যাগী নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করব।

এবার সভাপতি পদে আর একক প্রার্থী থাকছেন না বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি। তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে দাঁড়িয়েছেন জেলা আওয়ামালীগের সহ সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা।

এবিষয়ে দীপংকর তালুকদার এমপি বলেন, আওয়ামীলীগ একটি গণতান্ত্রিক দল, কাউন্সিল আসলে আমাদের নেতা কর্মীদের কর্ম তৎপরতা বাড়ে। কাজেই সম্মেলনে যে কোন পদে একাধিক ব্যাক্তি দাঁড়াতেই পারে এবং দাঁড়ানোর মধ্যে দিয়ে আওয়ামীলীগ পথ চলতে চায়, এবং এখানেই আওয়ামীলীগের গর্ব ও অহংকার। এতে প্রমাণিত হয় আওয়ামীলীগ একটি গনতান্ত্রিক দল গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচত সভাপতি ও সম্পাদক আওয়ামীলীগকে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবে। এই প্রতিযোগিতাকে আমি স্বাগত জানাই।

অপর সভাপতি প্রার্থী নিখিল কুমার চাকমা বলেন, জেলা ও উপজেলা দলের নেতা কর্মীরা চাইছে বলে আমি সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। দাদা দাঁড়াবেন কিনা জানি না। কাউন্সিলাররা মনে করছে আমি অসম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করি, পাহাড়ী বাঙ্গালী সকল সম্প্রদায়ের উন্নয়নে কাজ করব, তাদের সুখে দুখে পাশে থাকব, সে কারণে তাদের অনুরোধে আমি দাঁড়িয়েছি। আমারও ইচ্ছা আমি যদি সভাপতি হই দলের ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে রাঙামাটির উন্নয়নে কাজ করব। আর যদি সভাপতি নাও হই তাতেও সমস্যা নেই, আমি তো দলে আছি, দাদার নেতৃত্বে কাজ করে যাবো।  

সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক বর্তমান কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি জানান, শান্তিপুর্নভাবে কাউন্সিল শেষ করতে সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে কাল সময়মত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, যুগ্ন সম্পাদক সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।   

এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে কালো টাকার ছড়াছড়ি হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। যারা দলের দায়িত্বে ছিলেন তারা কাউন্সিলারদের টাকা দিয়ে ভোট চাইছে।

রাঙামাটি জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে ২৪৬জন কাউন্সিলার যদি ইলেকশন হয় তাহলে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সম্মেলনের প্রথম পর্বে দলীয় নেতা কর্মী, অতিথিসহ আড়াই হাজার মানুষকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারন সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর।  





এইমাত্র পাওয়া
আর্কাইভ
সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions