প্রকাশঃ ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০৪:৫৯:৩২
| আপডেটঃ ২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১০:৫৫:২৮
সিএইচটি টুডে ডট কম, খাগড়াছড়ি। করোনা ভাইরাসের কারণে খাগড়াছড়িতে কোটি টাকার লোকসানের মুখে বাঁশ ব্যবসায়ীরা। বিভাগীয় বন অফিস বন্ধ থাকায় মিলছে না বাঁশ পরিবহনের অনুমতি। এতে দুই কোটি টাকা লোকসান গুনছে ব্যবসায়ীরা। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বাবুছড়ায় দেশের অন্যতম বৃহৎ বাঁশের বাজার।
বাবুছড়া বাজার সংলগ্ন ৪টি ঘাট থেকে প্রতিদিন অন্তত ২৪টি বাঁশ বোঝায় ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত। রাঙামাটি উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন নাড়াইছড়ি রেঞ্জ থেকে স্থানীয়দের মাধ্যমে এসব কিনে নিয়ে আসে ব্যবসায়ী। প্রতিটি বাঁশ বাবদ ১ টাকা ৭০ পয়সা রাজস্ব হিসেবে বন বিভাগে জমা দিতে দেয় ব্যবসায়ীরা।। বাঁশ বিপণন থেকে সরকার প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে।
বাবুছড়া বাঁশ কল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায় ,‘ গত অর্থ বছরের নয় মাসে অথ্যাৎ ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১লা মে পর্যন্ত পরিবহন করা হয়েছে ২৮ লাখ ৪৪ হাজার বাঁশ। চলতি বছরে বছরের তিন মাস বাঁশ কর্তন বন্ধ থাকে। এই বাঁশ কর্তন,পরিবহন ও লোডিংয়ের সাথে জড়িত অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। এখন বাঁশের মৌসুম চললেও কোন কর্মব্যস্ত নেই পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের । করোনর কারণে বন্ধ রয়েছে বাঁশ পরিবহন। এতে বেকার হয়ে পড়েছে শত শত শ্রমিক। লোকসানের মুখে ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে বাবুছড়া সংলগ্ন মাইনী নদীতে পড়ে আছে অন্তত ৫ লাখ বাঁশ। বাঁশের বিপরীতে রাজস্ব পরিশোধ করা হলেও বাঁশ পরিবহন করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। তাদের অভিযোগ ,‘করোনার কারণে রাঙামাটি বনবিভাগ অফিস বন্ধ থাকায় মিলছে পরিবহন অনুমতি। এর মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নদীতে রাখা বাঁশ। নদীতে রাখা বাঁশ নষ্ট হয়ে গেলে ব্যবসায়ীদের লোকসান হবে ২ (দুই) কোটি টাকা।
বাবুছড়া বাঁশ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অরুন বিকাশ চাকমা জানান ‘ বাঁশ ব্যবসার এখানকার অনেক মানুষই জড়িত। বাঁশ ব্যবসার উপর অন্তত ৫০ হাজার মানুষের জীবিকা নিভর করে। কিন্তু করোনার কারণে বিভাগীয় বন অফিস বন্ধ রয়েছে। এতে আমাদের বাঁশ পরিবহনের অনুমতি মিলছে না। এখন নদীতের পড়ে আছে প্রায় ৫ লাখ বাঁশ । এসব বাঁশ দ্রুত বিপণন করতে না পারলে সব নদীতেই পঁচে যাবে। সরকার বা বন বিভাগ দ্রুত বাঁশ পরিবহনের অনুমিত না দিলে আমাদের পথে বসতে । এই পেশায় জড়িত সবাইকে অনাহারে থাকতে হবে ।
নদীতে আটকে থাকা ৫ লাখ বাঁশ দ্রু“ত পরিবহনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছে ব্যবসায়ীরা। বাবুছড়ার বাঁশ ব্যবসায়ী মো.শরীফুল ইসলাম,বদিউল আলম ও মো আব্দুল্লাহ জানান,‘নাড়াইছড়ি থেকে অগ্রীম টাকা দিয়ে বাঁশ কিনে নিয়ে এসেছি। বাবুছড়া থেকে বাঁশ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে বাঁশগুলো নদীতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কদিন পরই ভারী বর্ষণ ও উজানের পানিতে নদীতে ঢল নামবে। এভাবে বাঁশগুলো নদীতে পড়ে থাকলে পাহাড়ি ঢলে মূল্যবান বাঁশ ভেসে যাবে।
এছাড়া অনেকে বাঁশ কয়েকগুণ লোকসান দিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছ। প্রতিটি বাঁশ সাধারণত ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি করছি ১০ টাকায়। দ্রুত ট্রাকে করে বাঁশ পরিবহন করতে না পারলে পরিবার নিয়ে আমাদের অনাহারে থাকতে হবে। বাঁশ ব্যবসা ছাড়া আয়ের কোন বিকল্প পথ নেই। ’
বাঁশ পরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি লোকসানে রয়েছে বাঁশ কর্তন ,পরিবহন ও লোডিং শ্রমিকরা। এখাতে জড়িত রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। বাঁশ পরিবহনের সাথে জড়িত কয়েকজন শ্রমিক জানান ,‘বাঁশ কাটার পরে তা নদী পথে পরিবহন করে আমরা নিয়ে আসি। পরে তা আবার ট্রাকে লোড করি। কিন্ত সব এখন বন্ধ । করোনার কারণে বাঁশ কোথাও যাচ্ছে না। তাই আমাদের কোন কাজ নেই। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের পরিবার নিয়ে না খাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বাঁশ পরিবহন চালু হলেও আমাদের আয়ের পথ খুলবে। ’
দ্রুত সময়ের যাতে পুনরায় বাঁশ ব্যবসা চালু হয় সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান,‘ বাঁশ ব্যবসায়ীদের নদীতে বাঁশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা যাতে বাঁশ পরিবহনের অনুমতি পায় সেই বিষয়ে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমি অবগত করব। ’
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.আব্দুস সালাম প্রধান জানান ,‘করোনা সংক্রমণে কারণে আমাদের বিভাগীয় কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। এতে নাড়াইছড়িসহ ৫ টি রেঞ্জের বনজ সম্পদ পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে অনেক বনজ সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলেও অফিস না খোলা পর্যন্ত আমরা কিছু করতে পারছি না। অফিস খুললে দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁশসহ বনজ সম্পদ পরিবহনের অনুমতি দেয়া হবে। ’