প্রকাশঃ ২৮ নভেম্বর, ২০১৯ ০৩:২৫:০৭
| আপডেটঃ ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১০:২৭:৪৬
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তিচুক্তির ফলে পার্বত্য অঞ্চলে এখন ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। সেদিকে বিশেষ নজর দিয়েছে তার সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রাম এক সময় ছিল অশান্ত। সেখানকার মানুষ ছিল অত্যন্ত দরিদ্র। এখন আর সেই অবস্থায় নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠাসহ অঞ্চলের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছি।
বৃহষ্পতিবার সকালে সরাসরি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের পৃথক চার প্রকল্প উদ্বোধন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধশীল দেশ গড়ার স্বপ্নে এ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। ‘৭৫’এর ১৫ আগষ্ট স্বপরিবারে জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। আমি বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গেছি। ছয় বছর বিদেশে থাকতে হয়েছিল আমাকে। শুধু তাই নয়-‘৭৫’ পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সেখানে শুরু হয় অস্ত্রের ঝনঝনানি আর রক্তপাত। বিদেশ থেকে ফেরার পর তখন আমি পার্বত্য চট্টগ্রাম গিয়েছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম অশান্ত কেন, মূল সমস্যা কোথায়- তা খুঁজতে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করেছিলাম। ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করি। এরপর নিজের উদ্যোগে আলোচনা চালাই। পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করি। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন করি। এর মধ্য দিয়ে ১৯৯৮ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে ১৮০০ সশস্ত্র সদস্য আমার কাছে অস্ত্র সমর্পণ করেছেন। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আর অবহেলিত নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। পরবর্তীতে আবার ক্ষমতায় এসে আমরা মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চালু করেছি। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত দরিদ্র ছিল। তাদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। তাই সেখানকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রত্যেকটি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সোলার প্যানেল দেয়া হচ্ছে। কোথাও কোনো বাড়িঘর অন্ধকারে থাকবে না। ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স করে দিচ্ছি, যাতে আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদসহ সেখানকার জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট লোকজন ঢাকায় এসে তাদের কাজ করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাই লেক সৃষ্টি মূলত: কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে। সেটি এখন বিশাল জলরাশির এলাকা। হ্রদ ঘিরে গড়ে উঠেছে নতুন শহর। মৎস্য উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে দরকার গবেষণা। মাছের অভয়ারণ্য, ডিম পাড়ার আবাসস্থল এবং কীভাবে উৎপাদন বহুমুখী করা যায়- সেসব বিষয় গবেষণার জন্য চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ‘কাপ্তাই লেকে গবেষণা তরী’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা চার প্রকল্পের মধ্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় বাস্তবায়নাধীন দুটি হচ্ছে- ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস শীর্ষক প্রকল্পের আওতাধীন কাপ্তাই হ্রদে নির্মিত ‘ভ্রাম্যমাণ গবেষণা তরী’ বাস্তবায়ন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এটির কার্যাদেশ মূল্য ৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রীর এ দুটি প্রকল্প উদ্বোধন উপলক্ষে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্প নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এবং কাপ্তাই হ্রদে নির্মিত ‘ভ্রাম্যমাণ গবেষণা তরী’ প্রকল্পে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভাকক্ষে পৃথক দুটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এসব সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়, জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা।