অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নানা সংকটে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ

প্রকাশঃ ৩০ মার্চ, ২০১৮ ০৬:০৮:৩৬ | আপডেটঃ ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ০৫:৪৩:৩৬

সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। নানা সংকটের মধ্যে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে চলছে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম। আবাসিক অনাবাসিক একাডেমিক স্থাপনাসহ রয়েছে বিভিন্ন সংকট। এর মধ্যেই অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রায় তিন বছর চলছে।
কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন করে চার ব্যাচে ভর্তি করা ২০০ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে এ মেডিকেল কলেজে। ৫০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে নিয়মানুযায়ী কোটায় প্রতি ব্যাচে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় তিনটি পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে। এতে ১৩ জনের মধ্যে তিন জেলা থেকে তিনটি বাঙালির এবং বাকি ১০ আসন পাহাড়ির। ৭৫ শতাংশের সাধারণ আসনে ভর্তি করা হয় দেশের বিভিন্ন জেলা হতে।  
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, এ মেডিকেল কলেজের বর্তমানে আবাসন সমস্যাটি বেশী। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে পানির সংকট তীব্র। শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে যাতায়াত নিয়ে। একাডেমিক স্থাপনার সংকটে ভোগান্তির মধ্যে চলছে শ্রেণী ও শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক সংকট প্রকট না হলেও ফরেনসিক বিভাগে শিক্ষক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে বিভাগটির শ্রেণী কার্যক্রম। স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য একাডেমিক স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প এখনও রয়েছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। সংকট দূর করতে দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। সমস্যা নিয়ে সরাসরি কথা বললে দাবিটি তুলে ধরেন তারা।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি শুরু হয় রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা ও শ্রেণী কার্যক্রম। শহরের উত্তর কালিন্দীপুরে অবস্থিত রাঙামাটি সদর হাসপাতালের পাঁচ তলাবিশিষ্ট করনারি ভবনে স্থাপন করা হয় এ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ী ক্যাম্পাস। প্রথম ব্যাচে ভর্তি করা ৫০ শিক্ষার্থী দিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে শুরু করা হয় শিক্ষা ও শ্রেণী কার্যক্রম।
কলেজের অধ্যক্ষ ডা. টিপু সুলতানসহ শিক্ষকরা বলেন, অস্থায়ী ক্যাম্পাসে প্রশাসনিকসহ শিক্ষা ও শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে কেবল একটি একাডেমিক ভবনে। ফলে শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভোগান্তি হচ্ছে। চলমান চার ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সকালে একটি শাখা হাসপাতালে এবং বিকালে অন্যদের নিয়ে কক্ষে কোনো রকমে শ্রেণী ও পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।  স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এসব বিদ্যমান নানা সংকট দূর হবে না।
তিনি বলেন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে শহরের রাঙ্গাপানির হ্যাচারি এলাকায় ২৬ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এজন্য ক্ষতিপূরণের ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। এর মধ্যে ২৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। একাডেমিক স্থাপনা নির্মাণের জন্য ডিপিপি (প্রকল্প প্রস্তাবনা) পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায়। অনুমোদন হলেই নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে।
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তন্ময় চৌধুরী ও সুমাইয়া বিনতে মিম বলেন, স্থায়ী ক্যম্পাস না থাকায় আমাদের সংকট অনেক। এখানে অডিটরিয়াম নেই। হোস্টেলে পানির খুব সংকট। পুরো হাসপাতালসহ একটি মাত্র টিউবওয়েল আছে। পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও হাসপাতালের সঙ্গে। মেয়েদের হোস্টেলে লাইট বাতি ও পাখার সম্যসাও রয়েছে। হাসপাতালের পুরানো একটি ভবনে ব্যবস্থা করা হোস্টেল ছাদ দিয়ে বৃষ্টির পানি গড়িয়ে ঢুকে যা ভেতরে। এ ছাড়া রাঙামাটি যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের ছাত্র হোস্টেলটি ক্যাম্পাস থেকে অনেক দূরে হওয়ায় সেখানকার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে খুব সমস্যা হয়। সেটি প্রধান সড়ক থেকে অনেক দূরের ভেতরে হওয়ায় সময় মতো পরিবহনও পাওয়া যায় না। তারা সুষ্ঠু ও পরিবেশ সম্মত পড়ালেখার জন্য দ্রুত স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের দাবি করেন।
হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বিঞ্চুপদ দত্ত বলেন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা জায়গার এরই মধ্যে ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন করেছে গণপূর্ত বিভাগ। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কোনো রকম জটিলতা আর নেই। একাডেমিক স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন হলে দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করা যাবে। অস্থায়ী ক্যাম্পাসে নানা সংকট নিয়ে চালাতে হচ্ছে প্রশাসনিক, দাফতরিক, শিক্ষা ও শ্রেণী কার্যক্রম।
আবাসন সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য যথাক্রমে ৩০ ও ৪০ আসনবিশিষ্ট দুইটি হোস্টেল নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। বিকল্পভাবে কোনো রকমে শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। রাঙামাটি যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের ছাত্র হোস্টেল ভাড়া নিয়ে সেখানে ৫০ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেটি ক্যম্পাস হতে অনেক দূরে হওয়ায় তাদের যাতায়াত নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আর শিক্ষকদের জন্য হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারগুলো আবাসিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি আর জানান, শিক্ষকের তেমন একটা সংকট নেই। বর্তমানে অধ্যক্ষসহ ৪৫ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। তবে ফরেনসিক বিভাগে শিক্ষক না থাকায় বিভাগটিতে শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে সংকট হচ্ছে। বর্তমানে এ বিভাগে অন্য বিভাগের শিক্ষকরা শ্রেণী ও পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।



সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত, ২০১৭-২০১৮।    Design & developed by: Ribeng IT Solutions