প্রকাশঃ ০২ এপ্রিল, ২০১৯ ০৬:৫৮:১৪
| আপডেটঃ ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০১:৫০:১২
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীগুলো তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবিকে ঘিরে নানা কর্মসুচী হাতে নিয়েছে, আগামীকাল মঙ্গলবার ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউটের উদ্যেগে আলোচনাসভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে, পাহাড়ে বিরাজমান পরিস্থিতির কারনে মারমা সাংস্কৃতিক সংস্থা মাসস কেন্দ্রীয়ভাবে জল উৎসব না করার সিদ্ধান্ত নিলেও অন্য সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসুচী হাতে নিয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ও প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু, সাংগ্রাইং,বৈসুক, বিষু, বিহু । মুলত আগামী ১২,১৩ এবং ১৪ এপ্রিল এই তিন দিন ব্যাপী মুল উৎসব পালন করা হলেও এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠন নানা কর্মসুচী পালন করে । যার মধ্যে রয়েছে চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও কবিতা পাঠের আয়োজন ছাড়াও রাঙামাটি স্টেডিয়ামে আদিবাসী জুম পিঠা,পোষাক,বই, আলোক চিত্র প্রদর্শনী আদিবাসী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনূষ্ঠান । বলিখেলা নাদেং খেলা, ঘিলা খেলা, পুত্তি খেলা, গুদু খেলা, বয়োজ্যেষ্ঠদের সন্মাননা ও আলোচনা সভা রযেছে।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউট: রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউট ৪দিনব্যাপী বিজু, সাংগ্রাই বৈসুক বিষু মেলার আয়োজন করেছে এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমার সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ রিয়াদ মেহমুদ এএফডব্লিউসি, পিএসসি এবং জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউটের মেলা ২ এপ্রিল থেকে ৫এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এতে প্রথমদিন আলোচনা সভা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয়দিন ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, কবিতা পাঠ, সন্ধ্যায় ৩ জেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, তৃতীয়দিন বিকাল ৪টায় ঐতিহ্যবাহী পিঠা তৈরি ও বিভিন্ন খেলাধুলার প্রতিযোগিতা, নাটক মঞ্চায়ন ও রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউট শিল্পীদের পরিবেশনায় ওপেন কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। চতুর্থদিন ঐতিহ্যবাহী পাচন রান্না, বিভিন্ন খেলাধুলা ও সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউট এর পরিচালক রনেল চাকমা জানান, প্রতি বছরের মত এবছরও ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী ইনষ্টিটিউট মেলার আয়োজন করেছে। মুলত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টীর শিল্প ও সংস্কৃতিকে তোলে ধরতে এমেলার আয়োজন।
জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিল জাক: এর পর জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিল (জাক) এর উদ্যেগে ৩দিনব্যাপী জুম সংস্কৃতি মেলা ৬এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। জুম সংস্কৃতি মেলার উদ্বোধন করবেন সঙ্গীত শিল্পী রনজিত দেওয়ান এতে প্রধান অতিথি থাকবেন দেশের বিশিষ্ট নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ। সর্বশেষ ২০১৫ সনে জাক আদিবাসী মেলা করেছিল, এবার চার বছর পর আবার জুম সংস্কৃতি মেলা করতে যাচ্ছে জুম ঈসথেটিকস কাউন্সিল জাক। জাক এর আহবায়ক শিশির চাকমা জানান, পার্বত্য এলাকার ১১টি জনগোষ্ঠীর মাঝে মেল বন্ধন সৃষ্টির জন্য মেলার আয়োজন, প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এবার ষ্টলগুলোতে জুম চাষ এর উপর গুরুত্বরোপ করা হবে, পাহাড়ের মানুষ জুম চাষের উপর নির্ভরশীল হলেও অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে সে সব অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে আমরা চাচ্ছি মেলায় এবার বিভিন্ন ফসলের বীজগুলো প্রর্দশন করতে।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষূ, বিহু সাংক্রান উদযাপন কমিটি: “জুম্ম সংস্কৃতি সংরক্ষন ও অধিকার নিশ্চিতকরনে ঐক্যবদ্ধ হোন” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মত এবারো র্যালী, আলোচনা সভা, খেলাধুলা, ফুল বাসানোসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষূ, বিহু সাংক্রান উদযাপন কমিটি। ৯ এপ্রিল থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে নানা অনুষ্ঠানমালা। প্রথমদিন ৯ এপ্রিল সকাল ৯টায় রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা ও র্যালী অনুষ্ঠিত হবে। উদযাপন কমিটির আহবায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধি প্রিয় ওরফে সন্তু লারমা। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার।
ওইদিন বিকাল ৩টায় মারী ষ্টেডিয়ামে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুুষ্ঠিত হবে।
১০ এপ্রিল বিকালে চিং হ্লা মারী ষ্টেডিয়ামে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ১১ এপ্রিল একই স্থানে সকালে জুম্ম খেলাধুলা বিকালে বলিখেলা এবং ১২ এপ্রিল রাজবন বিহার পুর্বঘাট সকাল ৬টায় ফুল ভাসানো হবে।
বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষূ, বিহু সাংক্রান উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি চাকমা জানান, প্রতি বছরের মত এবছরও আমরা উৎসব পালন করব, কিন্তু চুক্তি পুনাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া এবং পার্বত্য এলাকার পরিস্থিতির কারনে অনেকটা নিরাপত্তাহীন মনে হচ্ছে, উৎসব নির্বিঘœ করতে সরকারের কাছে আমরা সব ধরণের নিরাপত্তা প্রদানের দাবি করছি।
মুলত বৈসাবি উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়ীরা পুরানো বছরকে বিদায় জানায় আর নতুন বছরকে বরন করে নেয়। সবার কামনা থাকে পুরানো বছরের সকল গ্লানি,র্ব্যথতা,হিংসা,বিদ্বেষ মুছে যাক নতুন বছর ভালোবাসা, সাফল্য আর সম্প্রীতির হোক।