প্রকাশঃ ২৩ নভেম্বর, ২০২৪ ০৮:০৮:০১
| আপডেটঃ ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ০১:১৬:৩২
এস এম নাজিম উদ্দীন, কাউখালী (রাঙামাটি)। ঘর দিবে রাস্তা দিবে বলে বলে সাবেক সরকারের এমপি মন্ত্রী ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার আশ্বাস দিলেও দুই বছর পার হলো কেউ কথা রাখেনি। আমরাতো নিজের জন্য কিছু চাইনি আমরা চেয়েছিলাম এলাকাবাসীর জন্য একটি রাস্তা তাও হলো না এভাবে নিজের আক্ষেপ জানালেন দুই বারের সাফ ফুটবল জয়ী পাহাড়ের রাজকর্ণা ঋতুপর্ণা চাকমা।
ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন, এর আগেও প্রশাসন থেকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে আমাদের বাড়ি যাওয়ার রাস্তা ও ঘর করে দেওয়া হবে। তবে এই আশ্বাস শুধু আশ্বাসেই রয়ে গেছে। এটা আসলে আজও বাস্তবায়ন হবে কিনা এটা জানি না। তবে আমি নিজের জন্য ব্যক্তিগতভাবে কোনো কিছুই চাই না। এবার দেখার সময় এসেছে প্রতিশ্রূতি রাখে কিনা। তবে আমি খুবী আনন্দিত যে এই সংবর্ধনাতে।
দেশ ও দেশের বাইরের ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা এবং জেলার নাম উজ¦ল করা পাহাড়ের তিন বীর কন্যা সাফ চ্যাম্পিয়ন বিজয়ী রূপনা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা ও মনিকা চাকমাকে শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়ন,রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও রাঙামাটি জেলা পুলিশের সহযোগীতায় এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
শনিবার সকালে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী তিন বীর কন্যা কাউখালীর ঘাগড়া উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে পৌছলে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন স্কুলের শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
ঋতুপর্ণা চাকমার বাম পায়ের দুর্দান্ত শটে কাব্যিক গোল। দুরন্ত গতিতে আকাশে ভাসমান বলটি হঠাৎ অবিশ^াস্যভাবে গোলপোস্টের জাল স্পর্শ করে। এ যেন মিরাকল। সত্যিই অবিশ^াস্য ছিল গোলটি। ওই গোলটিতেই হতবাক-স্তব্দ হয় পুরো নেপাল। উল্লেসিত-উচ্ছসিত হন বাংলাদেশের খেলোয়ার ও পুরো দেশের মানুষ। দশরথের আকাশে আকাশে বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকার রং আলো ছড়িয়ে নেপালের রাতের আকাশটাকেও আলোকিত করেছিল। ফুটবলের ইতিহাসে যেন নতুন আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি হল। আর এই ইতিহাসের ¯্রষ্ট্রা রাঙামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা। দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠত্ব অটুট রেখেছে ঋতুপর্ণার গোলটি। ঋতুপর্ণার গোলটি ফিফার বিস্ময়কর গোলের তালিকায় স্থান পাবে এমনটাই আশা করেছেন পার্বত্য চট্ট্রগ্রামের ফুটবল বোদ্ধা ও বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি পাহাড়ি নারী ফুটবলারদের এই ঐতিহাসিক অবদান ও অর্জনকে যথাযথ মুল্যায়ন করে তাদের ভবিষ্যত জীবনের আর্থিক নিরাপত্তারে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ দেয়া হোক।
প্রায় বছর দশেক আগে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঋতুপর্ণা চাকমার বাবা বরজবাশি চাকমা। রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম মঘাছড়ি। সেখানে ১৪টি পরিবারের বসবাস। ২০২২ সালে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হবার পর রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে আশ^াস দেয়া হয় ঋতুপর্ণা চাকমাদের জন্য বাড়ি নির্মাণ করা হবে। যাতায়াতের সুবিধার্থে পাকা রাস্তা বানিয়ে দেয়া হবে এবং নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, আমরা পরিকল্পনা করছি, দ্রূত তাদের রাস্তা ও ঘরটি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার চেষ্টা করছি।
নারী সাফ ফুটবল টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়ার ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মঘাছড়ি গ্রামে ও সেরা গোলরক্ষক রূপনা চাকমার বাড়িও একই জেলার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়ো আদাম গ্রাামে। আর ফিফার ম্যাজিক্যাল মনিকা খ্যাত ফুটবলার মনিকার চাকমার বাড়ি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার সুমান্ত পাড়ায়।
এবার নেপালের মাটিতে বাংলাদেশের লাল সবুজ রঙের আলো ছড়িয়েছেন পাহাড়ের বীর কন্যারা। ফাইনাল খেলায় স্বাগতিক নেপালের গোলপোস্টের জালে যে দুটি বল স্পর্শ করেছে তার দুটো গোলই দিয়েছেন পাহাড়ের বীর কন্যা মনিকা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমা। তবে দুর্দান্ত শটে অসাধারণ ও অবিশ^াস্য গোলটি করেছেন ঋতুপণা চাকমা। খোলর ৮২ মিনিটের মাথায় গোলটি করে বাংলাদেশকে বিজয় মুকুট পরিয়েছেন ঋতুপর্ণা।
প্রসঙ্গত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র অর্জন হল নারী ফুটবলারদের সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ।