প্রকাশঃ ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১০:৫০:৫৬
| আপডেটঃ ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ ০৩:১৮:১৩
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। দীর্ঘ চব্বিশ দিন পরে পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করে জেলা প্রশাসনের দেওয়া নোটিশের মেয়াদ শেষ হয়ে কাল শুক্রবার(০১ নভেম্বর) থেকে খুলেছে রাঙামাটি পর্যটনের দুয়ার। জেলার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা। পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত হ্রদ-পাহাড়ের জেলা রাঙামাটি। নতুন চেনা রূপে ফিরবে শহরের ট্যুরিস্ট স্পটগুলো। এমনটাই প্রত্যাশা পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
রাঙামাটি শহরের সিম্বল অব রাঙামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতু, সুবলং ঝরনা, ডিসি বাংলো, পলওয়েল পার্ক, রাজবন বিহার, রাজবাড়ি, কাপ্তাই লেক, আসামবস্তি- কাপ্তাই সড়ক সহ ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা নীলাঞ্জনা রিসোর্ট, বেরান্ন্য লেক, ইজোর, রান্ন্যেটুগুন দৃষ্টিনন্দন মনোমুগ্ধকর জায়গাগুলো ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন পর্যটকরা। পর্যটকদের বরণে সব প্রস্তুতি ছেড়ে নিয়েছে এসব পর্যটনখাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে রাঙামাটি শহরের তবলছড়ি এলাকায় অবস্থিত পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু ঘুরে দেখা যায়,আবারো প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠছে সিম্বল অব রাঙামাটি খ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি। হ্রদ ভ্রমণে পর্যাপ্ত ট্যুরিস্ট বোট প্রস্তুত করে রাখা রয়েছে। নতুন করে রঙ করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু ও ট্যুরিস্ট বোটগুলো। অন্যদিকে শহরের তবলছড়িতে অবস্থিত টেক্সটাইল মার্কেটগুলোও তাদের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে। পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত হ্রদ পাহাড়ের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
ঝুলন্ত সেতু'র টিকেট কাউন্টারের দায়িত্বরত ষ্টাফ মোঃ সোহেল বলেন, ছাপান্ন দিন সেতু পানির নিচে ডুবে ছিলো তার উপরে আরো নিষেধাজ্ঞা সব মিলিয়ে পুরো পর্যটক শূণ্য হয়ে পড়েছিল ঝুলন্ত সেতু। এবার যেহেতু নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। আমরা আশা করছি এবার পর্যটকরা আসলে ভালো ব্যবসা করতে পারবো এবং আগের ক্ষতিটা পুষিয়ে উঠতে পারবো।
পর্যটন নৌ- যান ঘাটের ম্যানেজার মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কারণে আমরা অনেক আনন্দিত। দীর্ঘ চব্বিশ দিন ধরে কোন পর্যটক না আসাতে বিশেষ করে আমাদের বোট চালক ও মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি এবং পর্যটন কর্পোরেশনও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এবার যদি পর্যটকরা আসা শুরু করে গড়ে আমরা ২৫ থেকে ৩০ টি বোট ভাড়া দিতে পারবো এবং আমাদের বিগত দিনের যে ক্ষতি গুলো হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে পারবো।
ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা নীলাঞ্জনা বোট ক্লাব রিসোর্টের স্বত্বাধিকারীরা দীপাঞ্চন দেওয়ান বলেন, বিগত তিন-চার মাস ধরে একেবারে পর্যটক শূণ্য আছে রিসোর্ট। আমাদের একেবারে অবস্থা নাজুক অবস্থা। কোন একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি তিন হতে চার মাস কোন ইনকাম ছাড়া থাকে তো সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার যে খরচ থাকে মাসে তাতে করে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক অত্যন্ত কঠিন একটা ব্যাপার। বিগত চার মাসে ৪০ হতে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন যেহেতু বিধি -নিষেধ খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে আমরা চেষ্টা করবো যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এই ক্ষতিটা পুষে নেওয়ার। আমরা আশাবাদী যেহেতু পরিবেশ পরিস্থিতি এখন সব স্বাভাবিক হয়ে এসেছে পর্যটকরা এবার আসবে এবং আমরাও ভালো একটা সময় পার করতে পারবো।
রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক অলক বিকাশ চাকমা বলেন, সম্প্রতি যে ব্যন্যা ও নিষেধাজ্ঞা কারণে আমাদের এখানে খুবই পর্যটক শূণ্য ছিল। আমাদের দৈনিক প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এবারে যেহেতু বিধি নিষেধ ও সব শিথিল করা হয়েছে আশা রাখছি সামনে ভরা পর্যটক মৌসুমে আমাদের যে ব্যবস্থাপনা গুলো রয়েছে, সেগুলো আগত পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মোটামুটি আমাদের কাঙ্খিত অনুযায়ী পর্যটক রাঙামাটিতে আসবে বলে আশা রাখছি। বাণিজ্যিক স্বার্থে ২০ শতাংশ ছাড়ে আগত পর্যটকদের জন্য আমাদের সুবিধা দেওয়া হবে।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় গত ৮ অক্টোবর হতে ৩১ শে অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণে যে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল তা আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তুলে নিয়েছি। পর্যটকরা সে আগের মতো রাঙামাটিতে ভ্রমন করতে পারবেন এবং পর্যটন সংশ্লিষ্ট যারা ব্যবসা পরিচালনা করছে তাদের আমরা অনুরোধ করেছি পূর্বে ন্যায় তাদের যে সার্বিক ব্যবসা রয়েছে সেগুলো যেন তারা পরিচালনা করেন।
গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির ও দীঘিনালা এবং রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সহিংস ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে গত ০৮ অক্টোবর থেকে ৩১ শে অক্টোবর পর্যন্ত পুরো তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় পর্যটকদের ভ্রমনে নিরুৎসাহিত করে স্থানীয় জেলা প্রশাসন। এতে বিপাকে পড়ে পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।