প্রকাশঃ ০৯ অক্টোবর, ২০২৪ ০৮:১৬:৩৬
| আপডেটঃ ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ০২:৩৬:৫২
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার পর ১৯ দিন পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয় পরিদর্শন শেষে তিনি অন্যান্য ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বের হন।
গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর ২১ সেপ্টেম্বর পার্বত্য এই দুই জেলায় এসে অন্তর্বর্তী সরকারেরর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ ও পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তারা কোনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই চলে যান। এর পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘সম্প্রীতি সমাবেশে’ উপদেষ্টাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং’ও। এ নিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের কাছে উপদেষ্টারা সমালোচিত হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন-অফলাইনে।
এছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সহিংসতার ঘটনায় একটি ‘উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন’ তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান। পরে ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরীকে আহ্বায়ক করে তিন পার্বত্য জেলার (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সদস্য করে ৭ সদস্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিভাগীয় কমিশনার। এই কমিটির তদন্ত চলার মধ্যে গত ১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার পর আবারও পাহাড়ি-বাঙালি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল।
৬ অক্টোবর উদ্ভূত পরিস্থিতি ও ‘নিরাপত্তাহীনতায়’ পাহাড়ে এবার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কঠিন চীবর দান’ উদযাপন না করার ঘোষণার পর মঙ্গলবার-বুধবার (৮-৯ অক্টোবর) রাঙামাটি-খাগড়াছড়িতে ভাঙচুর, পুড়িয়ে দেওয়া দোকানপাট, ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে এলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পার্বত্য উপদেষ্টা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হ্যাপির মোড়, এস.কে. মার্কেট, শেভরণ ডায়াগনস্টিক, বনরূপা বাজার, কাটাপাহাড়, কাঁঠালতলী মৈত্রী বিহারসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেছেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমা, রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ রাজুসহ পুলিশ-প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে পার্বত্য উপদেষ্টা ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে মৈত্রী বিহারে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের দরখাস্ত (আবেদন) দিতে বলেছি এবং ডিসিও ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিবেন। আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করব। আমরা চাই সঠিক বিচার যেন হয় এবং কোনও হয়রানি যেন না হয়। পাহাড়ি-বাঙালি যেই হোক, দোষীই যেন দোষী হয় এবং এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’ এসময় সাংবাদিকরা রাঙামাটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বত্য উপদেষ্টা জেলাপ্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দেখিয়ে ‘জনগণের আস্থা অর্জন রাখার মতো আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা’ রাখার কথা জানান।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন-গাড়ি পরিদর্শন, আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) সঙ্গে তার অফিস কক্ষে কথা বলেন।