প্রকাশঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ১০:৪৫:২০
| আপডেটঃ ২৫ নভেম্বর, ২০২৪ ০৭:৩৬:৪২
সিএইচটি টুডে ডট কম, রাঙামাটি। রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাঙামাটি জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন, সেনাবাহিনীর সদর জোন কমান্ডার এরশাদ হোসেন চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং, সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা, ফায়ার সার্ভিসের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক দিদারুল আলম, রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতারা।
সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন- জেলা বিএনপির সভাপতি দীপন তালুকদার দীপু, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হারুন মাতব্বর, জেলা সিএনজি-অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি আলী বাবর, অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাবু, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রাজীব চাকমা, মৈত্রী বিহারের সাধারণ সম্পাদক অমৃত দেওয়ান, বনরূপা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আয়ুব চৌধুরী, রাজবন বিহারের সাধারণ সম্পাদক অমীয় খীসা, বনরূপা ছদক ক্লাবের সভাপতি প্রীতিময় চাকমা, জেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল আলিম, ইসলামী আন্দোলন জেলার সেক্রেটারি নূর হোসেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ রাঙামাটির প্রতিনিধির মো. শাকিল প্রমুখ।
সভা থেকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার, সামনের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীরব দানোৎসবে বিহারগুলোতে নিরাপত্তা প্রদান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সম্প্রীতি সমাবেশ, ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় পরিবহন শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ, শহরে অভ্যন্তরীণ ও বনরূপা বাজার দ্রæত সচল করা, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ঘিরে এলাকা নির্ধারণ, আহতদের চিকিৎসা প্রদান, এলাকাভিত্তিক সম্প্রীতি কমিটি গঠন, গুজব নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপসহ নানা প্রস্তাব উঠেছে। এসময় বক্তারা বলেন, সম্প্রীতি সমাবেশের আগে বর্তমান সংকটগুলোর নিরসন দরকার। শহরে যানবাহন চলাচল শুরু করা দ্রæত প্রয়োজন। আসন্ন দুর্গাপূজা ও বৌদ্ধদের চীবর দানোৎসবে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে।
শুক্রবারের সহিংসতার ঘটনার ফায়ার সার্ভিসের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক বলেন, ‘ঘটনার দিন আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের বের হতে দেরি হওয়ার কারণ আমাদের বের হতে দেওয়া হচ্ছিল না। পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় আমরা বের হতে পেরেছি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আমরা যেখানে আগুন নেভাব, সেখানে আমাদের যদি উৎশৃঙ্খল জনগণ পিটিয়েই মেরে ফেলে তাহলে আমরা আমরা কিভাবে আগুন নেভাব?’
সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, ‘হাসপাতাল হলো আমাদের কাছে এবাদতখানার মতো। কিন্তু এসব ঘটনায় এখন হাসপাতালে থাকা রোগীদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। শুক্রবারের সহিংসতায় ঘটনায় নিহত ব্যক্তিকে (জখমের কারণে) আমরা চিনতে পারছিলাম না। পরে ছয়টার পর আমরা তার পরিচয় পেয়েছি।’
সেনাবাহিনীর রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার এরশাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমি ২০০৭ সাল থেকে পাহাড়ে আছি, এই অঞ্চলের প্রতি আমার একটা টান আছে। রাঙামাটির মতো এমন সম্প্রীতির নজির খুব কম জায়গায় রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ আছে, কাজেই এখানে ঝামেলা হতে পারে। কিন্তু সেই ঝামেলা এমন হবে আমাদের কল্পনাতেও ছিল না। আমাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখতে হলো। এটি যেন আর না হয় আমরা সেই প্রত্যাশা করছি। কেউ যদি মনে করে আমরা চেষ্টা করিনি তাহলে ভুল ধারণা। সবকিছু মিলে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমাদের দায়িত্ব পালনে কেউ কষ্ট পেলে আমরা দুঃখিত।’
পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এখানে একটা হত্যাকান্ড হয়েছে। আমরা লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে, তদন্ত করছি। হত্যাকারী যারাই হোক তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। আমাদের এখন গুজবের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। গুজবের কারণে গতকাল (শনিবার) রাতেও আমাদের ঘুম হয়নি। আমরা প্রকৃত তথ্য চাই। বিভিন্ন জায়গা থেকে উসকানিমূলক পোস্ট করা হচ্ছে। এছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনতে চাই। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এগিয়ে যেতে হবে।’
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিদ্ধান্তের কথা জানায় জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান। তিনি জানান, ‘আমরা এলাকা অনুযায়ী সম্প্রীতি কমিটি করব। শহরের বনরূপা রিজার্ভবাজার তবলছড়ি কলেজগেইট ও ভেদভেদীতে সম্প্রীতি সমাবেশ হবে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন হবে। ফেসবুকে গুজব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের সামনেসহ বনরূপা ও রাস্তার ওপর কোনো সভা সমাবেশ করা যাবে না। সমাবেশ হবে জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ ও পৌরসভা চত্বরে। সভা-সমাবেশের আগে প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। বেশি আহতদের আর্থিক অনুদান দেয়া হবে। নিহতের পরিবারকে সরকারি সহায়তা দিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লেখা হয়েছে। শহরে সিসিটিভি বসানো হবে এবং হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে।’